ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গান কবিতা আলোচনা চিত্র প্রদর্শনীতে বিজয় উৎসব উদ্যাপন

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

গান কবিতা আলোচনা চিত্র প্রদর্শনীতে বিজয় উৎসব উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের গান, কবিতা, চিত্র প্রদর্শনী আর আলোচনায় রাজধানীতে বিজয় দিবস উদ্যাপিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে বিজয়ের এই উৎসব বড় পরিসরে উদ্যাপনের কথা থাকলেও প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সীমিত করা হয়েছে। বুধবার নগরের নানা প্রান্তে এই উৎসব কোথাও ভার্চুয়ালি আবার কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঞ্চে স্বল্প পরিসরে উদ্যাপন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বিকালে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ বদরুল আরেফীন। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। একাডেমির সচিব মোঃ নওসাদ হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আলোচনা শেষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক এবং প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীদের পরিবেশনায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর আগে সকালে একাডেমির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক প্রদান করা হয়। সেখানে ছিল কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, ‘সাহসী তারুণ্যে আগামীর বাংলাদেশ’ শিরোনামে চার শিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্টিস্টক্যাম্প। এছাড়া লিয়াকত আলী লাকীর রচনা ও নির্দেশনায় বাঙলা কলেজ যুব থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘মুজিব মানে মুক্তি’। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতি বছরের মতো এবারও ১০ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহব্যপী ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে। করোনাকালীন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উৎসবের সপ্তম এবং শেষ দিন ছিল বুধবার। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে এদিন সকালে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বধ্যভূমির সন্তান দলের পরিবশেনায় জাতীয় সঙ্গীত। এর পরের অনুষ্ঠানটি জাদুঘরের ফেসবুক পাতায় (https:/ww/w.facebook.com/liberationwarmuseum.official) সরসরি সম্প্রচারিত হয়। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান এমপি। অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান বিভিন্ন ব্যান্ড সঙ্গীত দলের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় ভার্চুয়াল কনসার্ট ‘সংস্ অব ফ্রিডম’। কনসার্টে অংশ নেয় মাকসুদ ও ঢাকা, সভ্যতা এ্যান্ড ব্যান্ড, স্পন্দন, পরাহ, আঁচল ও পার্থিব। জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে ছিল আলোচনা ও সেমিনার। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা প্রদান করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে নানামাত্রিক ভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নন, তিনি ছিলেন বিশ্ববন্ধু। তিনি সব কর্মের মানুষকে নিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন কিন্তু জিয়াউর রহমান সেই ধর্মনিরেপক্ষ বাংলাদেশে কুঠারাঘাত করেছেন। জিয়া এবং এরশাদ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে এদেশে মাথা চাড়া দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যে কারণে আজ তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। মধ্যযুগের এই বর্বরদের মৌলবাদী বলা যাবে না, এরা হলো গোঁড়া ধর্মান্ধ ও পশ্চাৎপদ জালেম গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শয়িত বাংলাদেশ গড়তে হলে শুধু অবকাঠামোগতভাবে এগোলেই হবে না, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করতে হবে। সমাজের বৈষম্য কমাতে হবে তাহলেই সুন্দর বাংলাদেশ হবে। ছায়ানট ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দেশের গানের আয়োজন করে থাকে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সংগঠনটি এবারে সেভাবের আয়োজন থেকে বিরত থেকেছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বুধবার বিকেলে অনলাইনে তাদের নিবেদন ছিল ‘আমাদের এই পতাকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি দেখা যায় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেল, CHHAYANAUT DIGITAL-PLATFORM এবং ফেসবুক গ্রুপে ww(w.facebook.com/groups/chhayanaut)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে ‘স্মৃতির বিজয়’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের বুধবার ছিল শেষ দিন। এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উন্মুক্ত চলচ্চিত্র। ‘সংবাদপত্রে বিজয়গাথা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান।
×