ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে আড়াই কোটি কিষান

কৃষক আন্দোলন আরও তীব্র

প্রকাশিত: ২১:২২, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০

কৃষক আন্দোলন আরও তীব্র

ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন ১৭ দিন পার করেছে। বিক্ষুব্ধ কৃষকরা শনিবার থেকে নতুন নতুন মহাসড়কের দখল নিতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে তারা এ আন্দোলন চালিয়ে আসছে। খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী দিল্লীসহ অন্যান্য রাজ্যে প্রায় আড়াই কোটি কৃষক মোদি সরকারের বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। এ আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনও ক্রমে বাড়ছে। শুক্রবার ব্রিটেনে অনেক মানুষ প্ল্যাকার্ড উচিয়ে ভারতীয় কৃষকদের প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করেন। এরই মধ্যে এ আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টের দারস্থ হয়েছে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন। তবে মোদি সরকার কৃষক আন্দোলনের পেছনে তৃতীয় পক্ষের হাত রয়েছে বলে মনে করছে। শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ইতোমধ্যে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ কৃষক আন্দোলনের মধ্যে প্রবেশ করেছে। মূলত তারাই সরকারের প্রস্তাব কৃষকদের না মানার পেছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে। খবর বিবিসি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি ও সিএনএন অনলাইনের। শনিবারের ঘোষণা মতোই দিল্লীর চারদিকের রাস্তা আটকানো থেকে শুরু করে টোল প্লাজা বন্ধ করে দেয়া শুরু করে কৃষকরা। শুক্রবারই কৃষকরা হুমকি দিয়েছিলেন, তারা টোল প্লাজাগুলো বন্ধ করে দেবেন, টোল সংগ্রহ করতে দেবেন না। সেই মতো রাত থেকেই হরিয়ানার আম্বালায় শম্ভু টোল প্লাজা বন্ধ করে দেয়া হয়। কৃষক আন্দোলন মোকাবেলায় দিল্লী-হরিয়ানা সীমান্তসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় শনিবার ভোর থেকেই ছিল পুলিশী পাহারা। এসব জায়গায় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কৃষকদের প্রতি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শনিবার রবিশঙ্কর প্রসাদ আরও বলেন, আলোচনার মধ্যে বিক্ষোভকারীরা যে ইস্যুগুলো তুলেছেন তার মধ্যে যেগুলো যতখানি সম্ভব তার সমাধান করা হয়েছে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইনী প্রক্রিয়ায় এবং ব্যবসায়ীদের নিবন্ধনকরণ সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে আমরা সম্মত হয়েছি। তবে কৃষকদের দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার কোন প্রক্রিয়ায় কখন, কীভাবে পদক্ষেপ করবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি। কিন্তু মোদি সরকারের এ ধরনের বক্তব্য মানতে নারাজ আন্দোলনকারী কৃষক ইউনিয়নগুলো। শনিবার ভারতীয় কৃষকদের পক্ষে লন্ডনে ছোট আকারে সমাবেশ হয়। গুপি সাধু নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, আমি ব্রিটেনে ভাল আছি। আমার অন্যান্য আত্মীয় ভারতে কৃষি কাজ করছেন। তাদের কষ্ট আমি বুঝতে পারি। ফসল ফলানোর জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। গুপি সাধু ভারতের কৃষক আন্দোলনকে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের অনুরূপ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ভারতের কৃষক আন্দোলন কোন ধর্মীয় ইস্যু নয়। এটা সম্পূর্ণ মানবিক। বিশ^বাসীকে এ ধরনের মানবিক বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করা উচিত। এদিকে সিএনএনর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারতে চলমান আন্দোলন দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে বিশ^বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। কারণ বিশে^র অনেক দেশ ভারতের হলুদ, মরিচ ও আদার ওপর নির্ভরশীল। উল্লেখ্য, ভারত বিশে^র ৬৮ শতাংশ মসলা উৎপাদনকারী দেশ। দেশটির প্রধান মসলা ক্রেতা দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভিয়েতনাম, হংকং, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ব্রিটেন, আমিরাত, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা। পাশাপাশি বিশে^র সর্ববৃহৎ দুগ্ধ ও বাসমতি চাল উৎপাদনকারী দেশও ভারত। খবরে বলা হয়েছে, এভাবে টানা আন্দোলন চললে ওইসব দেশের খাদ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
×