ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থকরী ফসল চীনাবাদাম

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২০

অর্থকরী ফসল চীনাবাদাম

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ ফসল উদ্বৃত্তের জেলা বগুড়ায় চীনাবাদামের চাষ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি চীনাবাদাম ফলছে চরাঞ্চলে। হালে রুক্ষ মাটিতেও ফলছে ফসল। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উন্নত জাতের বিনা চীনাবাদমের চাষ ও ফলন দুইই বেড়েছে। সাধারণ চীনাবাদামের চেয়ে বিনা উদ্ভাবিত চীনাবাদামের ভেতরে ৩/৪টি করে কোয়া বা বীজ থাকে। এই বাদাম দেখতেও সাধারণ বাদামের চেয়ে বড়। সাধারণ চীনাবাদামে কোয়া থাকে ২টি করে। কখনও একটি। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের সঙ্গে চীনাবাদাম বড় আসন করে নিচ্ছে। খাদ্য বিজ্ঞানীদের কথা, চীনাবাদামের খাদ্যগুণ এতটাই বেশি যে মানবদেহে অনেক রোগব্যাধি দূর করে। বিশেষ করে চীনাবাদামের মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এতে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ছাড়াও আমিষ আয়রন কারোটিন ভিটামিন ‘ই’ এবং নিয়াসিন দেহকোষ সুরক্ষা করে বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। চিকিৎসকরা প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ গ্রাম করে চীনাবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। অতীতে বগুড়ার চরাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে চীনাদামের চাষ হতো। এই বাদাম ছিল ছোট। ভেতরে দুইটি করে বীজ। যা কোয়া নামে অধিক পরিচিত। নির্দিষ্ট মৌসুমে চীনাবাদাম মিলত বেশি। বর্তমানে চরাঞ্চলে কয়েক জাতের চীনাবাদাম ফলছে। অর্থকরী ফসলের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কৃষকও এখন চীনাবাদামকে অর্থকরী ফসলের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছে। বগুড়ার যমুনা তীরের সারিয়াকান্দির কাজলার চরের কৃষক মন্টু মিয়া বলেন, বাপদাদার কাছে থেকে চীনা বাদামের চাষ শিখেছেন। আগে শখ করে এই আবাদ করতেন চরের কিছু জমিতে। এবার তিনি প্রায় ৪ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। নিজ বলাইল গ্রামের শহীদুল ইসলাম বললেন, রবি মৌসুমে কার্তিক মাস থেকে চীনাবাদামের বীজ বপন শুরু হয়। আড়াই মাসের মধ্যে বাদাম তোলা যায়। আবার আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বেলে দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ভাল ফলে। চরের জমি চীনাবাদাম আবাদের উপযুক্ত। এই আবাদে তিন চার বার চাষ দিয়ে এর ওপর মই দিয়ে মাটি ঝুরা করে নিয়ে ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার নিচে দেড় দুই ইঞ্চি গভীরতার মধ্যে বীজ বুনে দিতে হয়। চীনাবাদাম আবাদে তেমন ঝামেলা নেই। সেচও দিতে হয় না। প্রয়োজনে সামান্য রাসায়নিক সার দিলেই চলে। চরের জমিতে এমনিতেই বন্যার পর পলি পড়ে উর্বরতা বেড়ে যায়। যে কারণে ফলন বাড়ে। জাত ভেদে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ২ টন থেকে ৩ দশমিক ১০ টন করে। রবি মৌসুমে ফলন বেশি। খরিফ মৌসুমে ফলন কিছুটা কম। ভর বছর চীনা বাদাম ফলছে। কয়েক জাতের চীনাবাদাম ফলছে উত্তরাঞ্চলে। এর মধ্যে বিনা চীনাবাদাম ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ জাতের আছে। এর বাইরে বাসন্তি বাদাম (ডিজি-২) ঝিংগা বাদাম, ত্রিদানা বাদাম, বারি-৫ বাদামের চাষ হচ্ছে। পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক ধরনের চীনাবাদামের আবাদ হচ্ছে। দেশের যে অঞ্চলেই চীনাবাদাম ফলছে তা ছেয়ে পড়ছে সারাদেশে। একদা রংপুর অঞ্চলে চীনাবাদম ফলত না। ওই অঞ্চলের কৃষক এখন চীনাবাদাম ফলাচ্ছে। কৃষি বিভাগের রংপুর অঞ্চলে চীনাবাদামের আবাদ কয়েক বছরে ৪ গুণ বেড়েছে। বগুড়া আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক জি এম এ গফুর জানালেন, বগুড়া জয়পুরহাট পাবনা ও সিরাজগঞ্জ মিলে ৭ হাজার ৬শ’ ২০ হেক্টর জমিতে চীনাবাদামের টার্গেট করা হয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ের চিত্র বলে দিচ্ছে- টার্গেটের চেয়েও অধিক জমিতে চীনাবাদামের আবাদ করছে কৃষক। এই বাদামের জন্য চরাঞ্চলে বেলে মাটি বেশি উপযোগী। চীনাবাদাম আরচিস হাইপোগিয়া লাগাম গোত্রের প্রজাতি। উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার এমন কোন জায়গা নেই যেখানে চীনাবাদাম নেই। অনেকে মনে করে চীনাবাদাম চীনদেশ থেকে এসেছে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তবে নাম কেন চীনাবাদাম হলো তা জানা যায় না। ইংরেজী নাম পিনাট বা গ্রাউন্ড নাট।
×