ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাবের হদিস নেই

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৭ নভেম্বর ২০২০

ছয় লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাবের হদিস নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং কার্যক্রমকে অনলাইন আনতে গিয়ে সফটওয়্যার জটিলতায় ছয় লাখ কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবের কোন হদিস মিলছে না। আর এ ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাবে। সম্প্রতি কোর ব্যাংকিং সল্যুশন-সিবিএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে শাখাগুলোকে পুরোপুরি অটোমেশনের আওতায় আনার কাজ শুরু করে রাকাব। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাংকটির আইটি বিভাগের কিছু কর্মকর্তার গাফিলতি ও অদূরদর্শিতায় খোয়া গেছে হিসাবগুলো। আলোচিত হচ্ছে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কেনা নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথাও। প্রতি তিন মাস পরপর ব্যাংক হিসাবের হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দেয় রাকাব। এতে দেখা যায় সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ৬ লাখ ২৯ হাজার ২৮৯টি হিসাব কম। জুনে যা ছিল ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪১৬টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে সেপ্টেম্বরে কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা, আগের ত্রৈমাসিকের ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমে ৯৬ লাখ ৯৮ হাজার ১৫২টিতে নেমে আসে। গত জুনে যা ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রাকাবকে বাদ দিয়ে হিসাব করলে, আলোচ্য ত্রৈমাসিকে হিসাবের সংখ্যা শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ বাড়ে। অবশ্য খোয়া যাওয়া হিসাবে তেমন টাকা ছিল না। তাই এতগুলো হিসাব কমলেও তা আমানতে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি, বরং মোট আমানত ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪০৪ কোটি টাকা। গত বছর থেকে রাকাবের সিবিএস স্থাপনের কাজ করছে সফটওয়্যার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিডস কর্পোরেশন লিমিটেড। এর আগে গত ২ জানুয়ারি ১৫ কোটি টাকায় লিডস কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে রাকাব। প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়া নিয়েও অভিযোগ ছিল অন্য দরদাতাদের। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইটি কোম্পানি এনসিআর কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। পরের বছর এনসিআর কর্পোরেশনের বাংলাদেশী সব কর্মী, সম্পদ, দায় ও গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান লিডস কর্পোরেশন গঠিত হয়। রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। দেশের সব রাষ্ট্রায়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংককে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় দেয়। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে রাকাব অনলাইন ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে রাকাবের শাখা ৩৮৩টি। এরমধ্যে ৩৩৫টির বেশি শাখা পুরোপুরি অনলাইনে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাকাবের কর্মকর্তারা। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সাজেদুর রহমান খান সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর হিসেবে নিয়োগ পান। তার পদটি এখনও শূন্য রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাকাবের কাছে খোয়া যাওয়া হিসাবগুলোর তথ্য ব্যাকআপ আছে কিনা, তা খোঁজ নিতে হবে। ১০ টাকার হিসাব হলেও অনেক হিসাবে এর চেয়ে বেশি টাকা থাকতে পারে। গ্রাহকরা চাইলে যাতে ফেরত দেয়া যায়।’
×