ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোর মুখ দেখবে এবার পুঠিয়ার চারআনি রাজপরগণা

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ২৯ অক্টোবর ২০২০

আলোর মুখ দেখবে এবার পুঠিয়ার চারআনি রাজপরগণা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর পুঠিয়ায় চারআনি রাজ পরগণার মূল ফটক ভেঙ্গে পড়েছে অনেক আগেই। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ইতিহাস সমৃদ্ধ রাজবাড়ির মূল ফটকের পাশাপাশি চারআনি রাজপরগণার মূল ফটকসহ ভবনের কিছু অংশ ভেঙ্গে পড়ে। রাজবাড়ির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা ভেঙে পড়া অংশ সেখান থেকে অপসারণও করেছেন। তবে এবার এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া পুঠিয়া রাজবাড়ির চারআনি রাজপরগণা পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া বলেন, ‘আরও আগে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। তবে এখনই আমরা সেই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। সব প্রক্রিয়া শেষ করে এটিও সংরক্ষণ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য শিগগিরই জেলা প্রশাসককে চিঠিও দেওয়া হবে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, বৎসাচার্যের পুত্র পিতাম্বর ১৫৫০ সালে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন। আর পিতাম্বরের অনুজ নীলাম্বর পুঠিয়া রাজবংশের প্রথম রাজা হন। চতুর্থ ধনপতি চাঁদ সওদাগর থেকে শুরু করে পরেশ নারায়ণ ও নরেশ নারায়ণ বাহাদুর পুঠিয়া রাজবংশ প্রায় ৪০০ বছর শাসন করেন। এরপর ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে রাজপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর রাজপরগণার উত্তরাধিকারীরা সপরিবারে ভারতবর্ষে গমন করেন। বর্তমানে পুঠিয়া পরগণায় রাজা নেই, রাজ্যও নেই। সমস্ত রাজপরগনাজুড়ে আছে তাদের অনেক স্মৃতি বিজড়িত পুরাকীর্তি। তবে কর্তৃপক্ষের নজরদারী ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চারআনি রাজবাড়ি প্রায় বিলুপ্তের পথে। স্থানীয়দের দাবি, কর্তৃপক্ষ পুরাকীর্তি সম্বলিত রাজবাড়িটি সংরক্ষণ না করলে রাজপরগণার ইতিহাস ঐতিহ্যের শেষ অংশটুকু বিলিন হয়ে যাবে। বারো ভূঁইয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে এই রাজপরগণায়। পরগণার কয়েকটি স্থান প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সংরক্ষণ করলেও নানা কারণে চারআনি রাজবাড়িটি এতোদিন ধরে অবহেলিত। কর্তৃপক্ষের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চারআনি রাজবাড়ি ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের তথ্য মতে, রাজপ্রথা বিলুপ্তির পর চারআনি রাজবাড়ি মামলা জটিলতায় এক প্রকার পরিত্যক্ত হিসেবে ছিল। সেখানে গত কয়েক দশক থেকে পুঠিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। চারআনি রাজবাড়ি বাদে পুঠিয়া রাজপরগণার বেশির ভাগ অংশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে আছে। সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আর চারআনি রাজবাড়িটি প্রত্নতত্ত্বের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় সেখানে এখনও পর্যন্ত সংস্কারের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। ফলে পর্যায়ক্রমে রাজবাড়ির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় নাট্যকার ও গবেষক কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল বলেন, বারো ভূঁইয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে এই রাজপরগণায়। পরগণার কয়েকটি স্থান প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সংরক্ষণ করলেও নানা কারণে চারআনি রাজবাড়িটি এখনও অবহেলিত। কর্তৃপক্ষের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চারআনি রাজবাড়ি ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত পরগণার সংরক্ষণ কাজ শুরু না করলে আগামী প্রজন্ম রাজপরগণার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শেষ স্মৃতি টুকুও দেখতে পাবে না। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল হাই মো. আনাস বলেন, ‘চারআনি রাজপরগণাটি সংরক্ষণের জন্য আমরা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কাছে বলেছিলাম। তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এখন এই এলাকাটি অধিগ্রহণ করা হবে।’
×