অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের জন্য বিশ্বব্যাংককে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, সব ধরনের আশঙ্কা দূর করে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে।
এই রেমিটেন্স বাড়ার সকল কৃতিত্ব প্রবাসী ভাই-বোনদের। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছেন। তাই বাংলাদেশী প্রবাসীদের এই অবদানের জন্য বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতি প্রয়োজন।
বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আইএমফের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্ট উয়িং শেফারের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব কথা বলেন। ওই সময় অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী আবদুল হাদী আরগান্ধিওয়াল, ভূটানের অর্থমন্ত্রী লায়নপো নামগে শেরিং, ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, মালদ্বীপের অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আমির, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. যুবরাজ খাতিওয়াদা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহাকারী এবং দারিদ্র্য দমন ও সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. সানিয়া নিশতার এবং শ্রীলংকার শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর জি.এল.পিরিস।
সভায় জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ সরকার পরিবার এবং শ্রমিকদের রক্ষা করতে কি কি ধরনের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে যাতে করে তাদের নেতিবাচক মোকাবেলা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে না হয়। এমন প্রশ্নের অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড -১৯ এর অপ্রত্যাশিত অভিঘাত থেকে উদ্ভুত প্রাসঙ্গিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনারা সকলেই অবশ্যই অবগত যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা বৈশিষ্ট মন্ডিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তববাদী নেতৃত্ব এবং দেশে বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করা নাগরিক। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্যরা অনুমান করেছিল যে করোনার কারনে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্সের পরিমাণ হ্রাস পাবে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি, বিশেষত গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে গার্হস্থ্য চাহিদা এবং প্রণোদিত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, আনন্দের সাথে সকলকে অবগত করতে চাই যে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্সের সবসময়ে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে এবং সম্প্রতি এটি ত্বরান্বিত হয়েছে। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমানে পরিমাণে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পেয়েছি। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬.৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স রেকর্ড হয়েছে, যা পুর্বের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৪৯ ভাগ বেশি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ সরাসরি নগদ প্রণোদনা নীতি এক্ষেত্রে প্রশাংসার দাবীদার। তাই এটি স্পষ্টই প্রতিয়মান হয় যে আমাদেও রেমিটেন্স মোটেও কমেনি বরং প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী আমাদেও প্রায় ১১.৬ মিলিয়ন বাংলাদেশী নাগরিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে। মালয়েশিয়ার করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সমস্ত ব্যবস্থাপক পর্যায়ে বিদেশী রয়েছেন যার ৩৭ শতাংশ শতাংশই বাংলাদেশী নাগরিক।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, তবুও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বন্ধের কারণে গৃহবন্দী অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ উপেক্ষা করা যায়না। গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৮ জন শ্রমিক ফিরে এসেছেন এবং এপ্রিল থেকে জুন’২০২০ সময়কালে কোনও নতুন শ্রমিক বিদেশে যেতে পারেনি। যদিও বিশ্বব্যাপী মোট প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের তুলনায় এটি বড় সংখ্যা নয়। তারপরেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশী কর্মসংস্থানের মোট সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ ভাগ বেশি। তিনি বলেন, সাধারণত দেখা গেছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী বিদেশে নিযুক্ত হন।
বর্তমান সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কর্মীদেরকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে চাকরি নিয়ে বিদেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করে আসছে। আমরা নিশ্চিত বলতে পারি যে ইতোমধ্যে আমাদের প্রবাসী কর্মীরা বিদেশে ফিরে কাজ শুরু করছেন।
অর্থমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, তাছাড়া সরকার সামাজিক বিশেষভাবে সুরক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা করেছিল। এপ্রিল এবং মে মাসে কোভিড-১৯ ছুটির সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য বিদেশে গমণকারীদের জন্য ১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।
