ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির প্রতিবেদন তথ্যভিত্তিক ও সঠিক নয় ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২ অক্টোবর ২০২০

টিআইবির প্রতিবেদন তথ্যভিত্তিক ও সঠিক নয় ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংসদে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা জোরদার হয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর দেয়া প্রতিবেদনে এ ধরনের মন্তব্য সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেতু ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিরোধী দলগুলোর সদস্য সংখ্যা কম হলেও সংসদে কথা বলার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয়া হচ্ছে। তারা সব কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, জনগণের ভোট নিয়ে তারা যদি আসন সংখ্যা বাড়াতে না পারেন; তার দায় তো সংসদের নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, টিআইবি প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী সংসদ সদস্যের সংখ্যা বেশি বলা হয়েছে। এমপিদের মধ্যে কেউ আইনজীবী, চিকিৎসক আবার কেউ ব্যবসাবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। অনেকেই পারিবারিকভাবে ব্যবসাবাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জনগণের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে তারা সংসদে এসেছেন এবং আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। ব্যবসাবাণিজ্যে যুক্ত থাকা তো অপরাধ নয়। উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বিএনপি নেতাদের এ ধরনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা বিএনপি নেতাদের চিরাচরিত অভিযোগ। সব সময় তারা এ ধরনের অভিযোগ করেন। নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়া হলে তারা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে পারেন। আমাদের প্রার্থীর কোন অভিযোগ থাকলে কমিশনকে জানাব। উপনির্বাচনে বিএনপির শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে কিনা তা জনগণ বিশ্বাস করতে পারছে না। তবে তাদের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকুক তা আমরাও চাই। জনগণ যে রায় দেবে তা আমরা মেনে নেব বলে বিএনপিকে আশ্বস্ত করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, সর্বশেষ পাবনার উপনির্বাচনেও তারা কোন পোলিং এজেন্ট দেয়নি। প্রচার চালায়নি। তাই বলতে চাই আসন্ন দুটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকুক। প্রকল্পের ব্যয় কমানো এবং দ্রুত কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প না নিয়ে এবং নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এ প্রকল্পের ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩১টি স্থাপন হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৬৫০মিটার। অবশিষ্ট ১০টি স্প্যানের মধ্যে নয়টি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মার পানিপ্রবাহ কমে এলেই বাদবাকি স্প্যান স্থাপন করা হবে। গতকাল পর্যন্ত মূল সেতু নির্মাণ কাজের অগ্রগতি শতকরা ৯০ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ ভাগ। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেলের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে কাদের বলেন, ইতোমধ্যে একটি টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিং কাজ শেষ হয়েছে। শীঘ্রই দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হবে। এ পর্যন্ত টানেল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৫৯ভাগ। আর্থিক এবং গুরুত্বের দিক থেকে এ দুটি প্রকল্পের গুরুত্ব অনেক। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর দেশে একে একে অনেক প্রকল্পের কাজ থেমে গিয়েছিল। তখনও পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের কাজ চলেছে। এখন আরও গতি ফিরেছে কাজে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সেতু বিভাগের অংশের অগ্রগতি কম হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, বিআরটি প্রকল্পের সেতু বিভাগের অংশের ধীরগতি একেবারেই স্পষ্ট। প্রকল্পে সেতু বিভাগের অংশের সড়ক তদারকির অবস্থাও শোচনীয়। ফলে সে অংশে জনভোগান্তি হচ্ছে। আমার কাছে প্রতিদিন অভিযোগ আসছে। তিনি বলেন, আমি একাধিকবার বলেছি সড়কটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। কিন্তু এ সড়কের ভাগ্যে কি কোন পরিবর্তন আসবে না? ঢাকার উপকণ্ঠে সড়কের যদি এমন অবস্থা থাকে তাহলে বড় বড় প্রকল্প করে আমাদের কি লাভ। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্প; এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। তিনি বলেন, আমাকে প্রায়শ উচ্চতর মহলে এ সড়ক নিয়ে অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। সে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বারবার অভিযোগ করছেন। মন্ত্রী বলেন, সচিবকে বলেছি আপনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি তদারকি করুন। ঠিকাদারের সমস্যা থাকলে করণীয় ঠিক করুন। আমি, যে কোন মূল্যে সংশ্লিষ্টদের সড়ক ঠিক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছি। সেতু বিভাগের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি ও এয়ারপোর্ট থেকে আশুলিয়া, বাইপাইল হয়ে ঢাকা ইডিজেড পর্যন্ত চার লেনের সড়ক এবং উড়ালপথ নির্মাণ প্রকল্পে ধীরগতি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এলিভেটেড প্রকল্পের কাজে আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন, আপনারা আমাকে বারবার বলে আসছেন সমস্যা নেই, আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়েছে। তবে কেন প্রত্যাশিত গতিতে কাজ এগুচ্ছে না। প্রায় দুই বছর শেষ হয়ে গেছে এখন ভৌত কাজই শুরু করা যায়নি। হয়নি লোন এ্যাগ্রিমেন্ট। শুনেছি ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু ও টানেল প্রকল্পের জন্য অন্য কাজ থেমে থাকবে, তা হতে পারে না। প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য আলাদা আলাদা জনবল ও কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এ সময় মন্ত্রী বরিশাল-ভোলা-লক্ষীপুর সড়কের বরিশাল- ভোলা অংশে দুটি সেতু নির্মাণ এবং আড়াইহাজারের মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দেন। সেতু বিভাগের উদ্যোগে পুরো দেশের জন্য নিজস্ব দীর্ঘমেয়াদী মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকলে তার আওতায় উন্নয়ন কাজ সমন্বয় করা যায়। তিনি বলেন, সেতু বিভাগ ১০টি রুট নিয়ে প্রায় ২৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবওয়ে নির্মাণের যে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে তার সঙ্গে আরএসটিপি, ঢাকা মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক এবং অন্যান্য পরিকল্পনার সমন্বয় সাধন করতে হবে। দেখতে হবে যৌক্তিকতা ও নির্মাণকালে জনভোগান্তির বিষয়। সমন্বয়হীনভাবে বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আশা করব সবাই অভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আরএসটিপির সঙ্গে সমন্বয় করে পরিবহন বিষয়ক প্রকল্প গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য জনকল্যাণ। জনস্বার্থে কাজ করতে হবে। কমাতে হবে জনভোগান্তি। কমাতে হবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও নির্মাণ ব্যয়। অগ্রাধিকার দিতে হবে কাজের গুণগত মান এবং নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার দিকে। তা না হলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়, যা অপ্রত্যাশিত। সেতু ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব মোঃ বেলায়েত হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×