ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ক্রিয়েটিভ এজেন্সি নিয়ে মুনতাসির

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ক্রিয়েটিভ এজেন্সি নিয়ে মুনতাসির

আইটি ডট কম প্রতিবেদক মুনতাসির রহমান মাহদী। সিলেটের নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে সিএসই নিয়ে পড়াশোনা করে ড্রপআউট এই ব্যক্তি। মার্কেটিংটা তার পেশা হলেও ব্যবসা, সেলস এবং কন্টেন্টের ওপর তার ঝোঁক অনেক। সেই নেশা থেকেই তৈরি করেছেন বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ। নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দু’হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে মার্কেটিং এবং ব্যবসা নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। www.muntasirmahdi.com থেকে লাইভ সাপোর্টের সঙ্গে উন্নত ভিডিও কন্টেন্ট দিয়ে কোর্স করে ফেলতে পারেন। জনকণ্ঠের প্রতিনিধির সঙ্গে একান্ত আলাপে মাহদীর তার নিজের সম্পর্কে আর এ্যাজেন্সি সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনা করেন। তিনি বলেন, অনেক স্টার্টআপের মধ্যে এ্যাশেন্সি অন্যতম। এ্যাশেন্সি www.facebook.com/ ashencyagency মূলত একটি সোশ্যাল মিডিয়া বেইজড ক্রিয়েটিভ এ্যাজেন্সি। এ্যাশেন্সিতে মূলত চার ধরনের সার্ভিস প্রদান করা হয়ে থাকে। আপনার যদি কোন ব্যবসা (অনলাইন অথবা ফিজিক্যাল) থেকে থাকে তাহলে আপনি এ্যাশেন্সি থেকে মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং সলিউশনসহ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনের সার্ভিসগুলোও নিতে পারেন। অন্য একটি প্রশ্নে তিনি জানান যে, ‘এটা তো ২০২০ সাল, এখানে কেউ এখন আর গ্যারেজ থেকে শুরু করার গল্প বলবে না, আমাদের এ্যাশেন্সি গড়ে তোলার গল্পটাও তেমন আহামরি টাইপের কিছু নয়। আমার মাথায় ছিল এমন কিছু একটা এ্যাজেন্সি তৈরি করার, করেও ছিলাম। কিন্তু ব্যবসায় শুধু অর্থ আর প্ল্যানিং থাকলেই হয় না, ডেডিকেটেড টিম থাকতে হয়। আর সেটা শিখেছি যখন আমার আগের এ্যাজেন্সিটা মাঠে মারা গেল। সেটা মাঝপথেই বন্ধ করে দিয়ে আরো দু-তিনজনকে সঙ্গে নিয়েই শেষমেশ শুরু“করে দিলাম এ্যাশেন্সি। এবার টিম বাছাইয়ে সবচেয়ে সতর্ক ছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আগস্টের পনেরো তারিখ শুরু করলেও এ্যাশেন্সির সার্ভিসগুলোর প্রটোটাইপ চলছিল প্রায় ৪ মাস ধরে। আর সেই চার মাসেই আমরা প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি ক্লায়েন্ট পেয়ে যাই।’ ‘ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া সার্ভিস রিলেটেড ব্যবসার ভবিষ্যত অচল’ বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন জনকণ্ঠের এই প্রশ্নের উত্তরে মুনতাসির মাহদী বলেন, ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া ব্যবসা ভবিষ্যত অচল। কারণ হিসেবে তিনি দেখান, ব্যবসার ধরনে পরিবর্তন আসাটাকে। তিনি বলেন, ‘মৌলিক চাহিদাগুলোর দিকে যদি তাকান তাহলে দেখতে পাবেন, প্রত্যেকটা মৌলিক চাহিদাই এখন ঘরে বসে শুধু মোবাইলের মাধ্যমেই কেনাকাটা করা যাচ্ছে। শৌখিনতার প্রায় বেশিরভাগটুকুই আমরা এখন হাতের মুঠোয় পেয়ে যাচ্ছি।’ তিনি খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ২০২৩ এর মধ্যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যবসাই অনলাইনে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে তিনি, অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক এবং সামাজিক অবস্থার দিকে তাকিয়ে দেখতে বলেন। তিনি আরও বলেন, যদি কেউ ২০২১ এর মধ্যে তার অফলাইন ব্যবসাটাকে অনলাইনে নিয়ে না আসতে পারেন, তাহলে সেই অফলাইন ব্যবসাটা হয়তো দু-চার বছরের মধ্যেই জলে ভেসে যেতে পারে। মাহদীর মতে, ‘মানুষ এখন একটা সুই থেকে শুরু করে গাড়ি-বাড়িসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই অনলাইন থেকে ক্রয় করতে পারছে। তাহলে কেন ভবিষ্যতে ঘরের বাইরে গিয়ে মানুষ পণ্য ক্রয় করবে? আর যখনই আপনার ব্যবসাটাকে অনলাইনে নিয়ে আসবেন ঠিক তখনই প্রয়োজন পড়বে আমাদের, অর্থাৎ মার্কেটারের। এ্যাশেন্সির মতো একটা এ্যাজেন্সি আপনার অনলাইন ব্যবসায় গ্রাফিক্যাল কাজ থেকে শুরু করে, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিংয়ে সম্পূর্ণভাবে সাহায্য করতে পারে; যাতে আপনার কাছে মনে না হয়, আপনি অকূল দরিয়ায় এসে পা দিয়েছেন।’ কোর্সগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহদীর বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় দু’হাজারের বেশি শিক্ষার্থী মার্কেটিং, ব্যবসা এবং কন্টেন্ট নিয়ে ক্লাস করেছেন তার ওয়েবসাইটে। তার কোর্সগুলো করে প্রায় হাজারের কাছাকাছি মানুষ এখন ফেসবুক, ইস্নটাগ্রাম এবং একইসঙ্গে ফাইভারের মতো মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করছেন বেশ ভাল অঙ্কের অর্থ। সবচেয়ে ইউনিক বিষয়টা হচ্ছে, একই বিষয়ের কোর্সগুলো অন্য জায়গায় যেখানে অনেক মূল্যে করানো হচ্ছে সেখানে তার কোর্সগুলো নামমাত্র ফিতে শিক্ষার্থীরা করতে পারছে। তিনি আরও বলেন যে, ‘আসলে কোর্স করানোর ইচ্ছে কখনোই ছিল না। কিন্তু কথায় আছে না, ‘ইউ লার্ন, ইউ ফরগেট। ইউ টিচ, ইউ রিমেম্বার।’ হাজার হাজার স্টুডেন্টকে যখন আমি ক্লাস করাই তখন মাথায় শুধু একটা বিষয়ই কাজ করে আর সেটা হচ্ছে, আমি তাদের থেকে কতটা শিখতে পারছি। তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে গিয়ে আমি নিজে একই বিষয় নিয়ে আরও গভীরে জেনেছি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের শয়ের বেশি সেক্টর রয়েছে, যার মধ্যে আমি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে কাজ করেছি সবচেয়ে বেশি। আর সেই বিষয়টা নিয়েই আমার বেশিরভাগ কোর্স। এখন যদিও দশটার মতো কোর্স রয়েছে কিন্তু খুব শীঘ্রই আরও ভাল কিছু টপিক নিয়ে ইনস্টিটিউশন শুরু করার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’ নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তিনি লেখালেখি করেন। ২০২০ একুশে বইমেলায় মুনতাসির মাহদীর দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে হাতেখড়ি এবং ব্রেইনফ্লুয়েন্স: দ্য সাইকোলজি অব মার্কেটিং; নামে। বই দুটো রকমারিতে ব্যবসা এবং অর্থনীতি বিভাগে বেস্ট সেলার ছিল। তরুণদের মধ্যে যারা এই প্রফেশনে আসতে চায় তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তরুণদের জন্য মার্কেটিং সবচেয়ে উত্তম ক্যারিয়ার অপশন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মার্কেটিং মানে শুধু ক্রেতাকে ধরে-বেধে নিয়ে এসে পণ্য বা সেবা নিয়ে ঘণ্টাদেড়েক বক্তৃতা দেয়া নয়। মার্কেটিংয়ের মূল ভিত্তি হচ্ছে মানুষের সাইকোলজিতে। সাইকোলজিকে যখন আপনি আপনি মার্কেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করবেন, তখন সাফল্য আসবে। মার্কেটিংয়ের যে কোন মেথড শিখতে তেমন একটা অর্থের প্রয়োজনও পড়ে না। যেটার প্রয়োজন পড়ে সেটা হচ্ছে ক্রিয়েটিভ মাইন্ডসেট।’
×