ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ানের সহায়তা চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসিয়ানের সহায়তা চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সহযোগিতা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে শনিবার ভার্চুয়াল আয়োজনে ২৭তম আসিয়ান রিজিওনাল ফোরামে (এআরএফ) তিনি বলেন, ‘ভাগ্যাহত রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ ঘরে নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মর্যাদা নিয়ে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম বন্ধুদের সহায়তা চাচ্ছি। যাতে তারা সেখানে পুনরায় বসতি গড়তে এবং সমাজে একীভূত হতে পারে। মাতৃভূমিতে ফিরে গেলে মিয়ানমারের উন্নয়নে অংশীদার হতে পারবে তারা।’ খবর বিডিনিউজের। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। গত বছর দু’দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের বসতিতে তাদের ফেরানোর সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমার সরকারের ব্যর্থতার প্রসঙ্গও বক্তৃতায় তুলে ধরেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোমেন বলেন, ‘ভাল প্রতিবেশী হিসেবে গঠনমূলক কূটনীতিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমার আমাদের বন্ধু দেশ এবং সে কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক আমরা সই করেছি।’ ‘সেখানে যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে তাদের ফেরানোর বিষয়ে রাজি হয়েছিল মিয়ানমার। একইসঙ্গে স্বেচ্ছা পুনর্বাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতেও একমত হয়েছিল তারা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি। সহায়ক পরিবেশ তৈরির বিপরীতে এখনও সংঘাত ও শেলিং চলমান আছে রাখাইন রাজ্যে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মাতৃভূমিতে না ফেরার প্রাথমিক কারণ, তারা নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে তাদের সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আমরা মিয়ানমারকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, যাতে তারা আস্থার ঘাটতি কমাতে ও আত্মবিশ্বাস তৈরির প্রক্রিয়ায় আসিয়ান, চীন, রাশিয়া, ভারত কিংবা তাদের অন্য বন্ধু দেশের বেসামরিক পর্যবেক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করে। এর মাধ্যমে টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আস্থার ঘাটতি কমিয়ে আনা যেতে পারে।’ বাজে পরিস্থিতিতে বেড়ে ওঠার কারণে রোহিঙ্গারা যদি উগ্রবাদে জড়িয়ে যায়, তাহলে তা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে বলেও হুঁশিয়ার করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আসিয়ান রিজিওনাল ফোরামের সভাপতি ও ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফাম বিন মিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ইউ ক্যাউ তিন উপস্থিত ছিলেন। ভ্যাকসিন এলে কেউ বাদ যাবে না ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এলে কেউ যেন বাদ না যায় সেই চেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বের যেখানেই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেশে আনা হবে। খবর বাসসর। শনিবার সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, ক্রীড়া সংগঠকদের প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের সঙ্কট মোকাবেলায় অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন। ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, পাশাপাশি খেলোয়াড়, সংস্কৃতিকর্মী, সমাজকর্মীসহ বিপদগ্রস্ত সব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, দেশে করোনায় সৃষ্ট সঙ্কটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৬৮ হাজার জনপ্রতিনিধির মধ্যে মাত্র ৫৩ জন জনপ্রতিনিধি বিভিন্ন অনিয়ম ও কারচুপির সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। যাদের প্রত্যেকেরই শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা সুশাসনের অনন্য নজির। একইসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মহামারীর প্রাদুর্ভাব অনেক কম হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে সরকার রফতানির বিষয়টিও স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে বলেও জানান। পরে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমেদ সেলিম অনুদানের এ চেক বিতরণ করেন। অনুদানের এ পর্যায়ে জেলার ফুটবলার, ক্রিকেটার, এ্যাথলেট, ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৪৫ জন খেলোয়াড়কে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুরস্ক যাচ্ছেন আজ ॥ এদিকে বাসস জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ১৫ সেপ্টেম্বর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চালুসুগ্লুর সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে এবং আঙ্কারায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চার দিনের এক সফরে রবিবার তুরস্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ সেপ্টেম্বর তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় ভার্চুয়ালী বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করবেন। মোমেন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কমপ্লেক্সে উপস্থিত থাকবেন। মোমেন বাসসকে বলেন, ‘(আঙ্কারায় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ১৫ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে) রোহিঙ্গা সঙ্কট, ডি-৮ সম্মেলন এবং বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতা প্রাধান্য পাবে।’ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ফাঁকে মোমেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের সঙ্গেও দেখা করবেন। এছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল এবং ইসলামিক কোঅপারেশন ইয়ুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ) এর সভাপতির সঙ্গেও তার বৈঠক করার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তুরস্ক রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
×