স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফুটপাথে অবৈধ স্থাপনা ও নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা নানা অবকাঠামোর বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা নিতে নিজেই মাঠে নেমেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। ফুটপাথ ও সড়কে অবৈধভাবে নির্মাণসামগ্রী পাওয়া গেলেই সেগুলো জব্দ করে তাৎক্ষণিক নিলাম করে দিচ্ছে সংস্থাটি। এদিকে কোন নাগরিক যত ক্ষমতাবানই হোন না কেন এই শহরের সড়ক ও ফুটপাথে নির্মাণসামগ্রী রেখে ব্যবসা করতে পারবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র। ডিএনসিসি এলাকার সড়ক ও ফুটপাথে অবৈধভাবে রাখা সামগ্রী উচ্ছেদ ও নিলামে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলে একযোগে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করছে। এরই অংশ হিসেবে মেয়র আতিকুল ইসলাম গুলশান ও বনানীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়াসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক ও ফুটপাথে রাখা অবৈধ নির্মণসামগ্রী ও অন্যান্য সামগ্রী উচ্ছেদে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলে মোট ৩২টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৩ লাখ ৮ হাজার ৫৯০ টাকা এবং জরিমানা বাবদ ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া এক হাজার ২০০ অবৈধ স্থাপনা, টং দোকান ও শেড উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে একটি টিমের নেতৃত্ব দেন মেয়র নিজে। ডিএনসিসি মেয়র গুলশান ৮৬, ৮৭, ৬৭ নম্বর রোড এবং বনানী ১৫ নম্বর রোড পরিদর্শন করে ফুটপাথ ও সড়কের ওপর রড, ইট ইত্যাদি দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। পরে ডিএনসিসির মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভবন নির্মাণকারীদের জরিমানা করা হয় এবং নির্মাণসামগ্রী তাৎক্ষণিক নিলামে বিক্রি করা হয়।
ফুটপাথে কেউ কোন ধরনের নির্মাণ সামগ্রী রেখে ব্যবসা করতে পারবেন না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে মেয়র বলেছেন, এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? এই শহরের কি কোন বাপ-মা নাই? যে যার মতো ব্যবসা করবেন, এটা আর হতে দেয়া হবে না। আমরা বলেছিলাম ফুটপাথে কোন নির্মাণ সামগ্রী থাকলে স্পট নিলাম হবে, আজকে সেটা শুরু হয়েছে। অনেকে আমাকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন, কিন্তু কোন ফোনে কাজ হবে না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বানানো রাস্তা কেউ দখল করে রাখবে এটা হতে পারে না।
এ সময় মেয়র ইনস্টার ডেভেলপার কোম্পানির এক প্রতিনিধিকে উদ্দেশে করে বলেন, এই রাস্তা কারও বাপের নাকি? রাস্তায় মাল রাখছে কে? ইনস্টারকে ডাকেন। ইনস্টার কি বাপের সম্পত্তি পাইছে এই রাস্তা? এই রোড কি তার বাপের সম্পত্তি যে রোডের মধ্যে লোহা রাখবে? আমরা রাস্তা ঠিক করব জনগণের টাকা দিয়ে আর ইনস্টার কোম্পানি, ওই কোম্পানি আপনারা রাস্তার মধ্যে ইচ্ছামতো কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার সম্পদ রেখে দেবেন।
মেয়র বলেন, এসব ডেভেলপার কোম্পানিকে কয়েকবার বলা হয়েছে। তারা আমাদের কথায় পাত্তা দেয়নি। বড় বড় কোম্পানি যারা আছেন, যারা ডেভেলপার কোম্পানি আপনারা বাড়ি বানাচ্ছেন আপনাদের বলছি কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন না। যারা ফুটপাথের মধ্যে ইচ্ছামতো আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও আইনের তোয়াক্কা না করে যার যার মতো রড-সিমেন্ট রেখে দিচ্ছেন। এটা করা যাবে না। আমরা যখন যেখানে যাবো এবং যা পাবো নিলামে বিক্রি করে দেবো।
অবৈধ বিলবোর্ড সম্পর্কে মেয়র বলেন, আমি আরেকটা বার্তা দিতে চাচ্ছি আপনাদের মাধ্যমে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্রভাবে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ডে ভরে গেছে। সাইনবোর্ডের জন্য কেউ কোন পারমিশন নিচ্ছেন না। আমি বিনয়ের সঙ্গে আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা নির্ধারিত ট্যাক্স সিটি কর্পোরেশনে দিয়ে তারপরে সাইনবোর্ড লাগাতে পারেন। যে কোন ধরনের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ডে সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নিয়ে ট্যাক্স দিয়ে তারপরে লাগাতে পারবেন। তা না হলে আগামী ১৪ তারিখ হতে যত ধরনের সাইনবোর্ড আছে, সে সাইনবোর্ডও উচ্ছেদ শুরু হবে। অতিরিক্ত সাইনবোর্ড লাগিয়ে অনেকে ঢাকা শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছেন, এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকুন। আমাদের অভিযান চলবেই চলবে। আমি আবারও বলছি আমাদের সড়ক এবং ফুটপাথে যত অবৈধ নির্মাণসামগ্রী বা অন্যকোন সামগ্রী থাকবে তা নিলাম হয়ে যাবে।
এর আগে মেয়র ফুটপাথে থাকা অবৈধ সামগ্রী স্পট নিলামের ব্যবস্থা করেন। অভিযানের শুরুতেই গুলশান-২ নম্বর এলাকার ৮৬ নম্বর রোডে অভিযান চালায়। এ সময় একটি নির্মাণাধীন ভবনের রড এবং অন্যান্য কিছু সামগ্রী ফুটপাথেই পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে নিলামের ব্যবস্থা করা হয় সেগুলো। এসময় আনুমানিক ২০ টন রড নিলামে তোলা হয়। রোডে রাখা রডগুলো স্পট নিলামে উঠলে তাতে পাঁচজন অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে মাহমুদ মোল্লা নামে এক ব্যক্তি সব রড ও রড কাটার মেশিন ৪৯ হাজার টাকায় ক্রয় করে নেন। এর সঙ্গে করযুক্ত হয় আরও প্রায় সাত হাজার টাকা। ঘটনাস্থলে সরকারী কাজে বাধা দেয়ায় সাইট ইঞ্জিনিয়ার সাইদ মোহাম্মদ সিদ্দিকীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৮ নম্বর রোডে অভিযানে যান আতিকুল ইসলাম। সেখানে ফুটপাথ এর ওপর শতাধিক ইট পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে নিলাম করা হয় সেগুলোও। ৮ হাজার টাকায় এক ব্যক্তি কিনে নেন সেগুলো। সেখানেও সরকারী কাজে বাধা দিতে এলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রিপন কুমারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে সিটি কর্পোরেশন।