ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধ, অস্ত্রের আঘাতে দুই ভাই নিহত

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৫ আগস্ট ২০২০

বিলে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধ, অস্ত্রের আঘাতে দুই ভাই নিহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২৪ আগস্ট ॥ ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিলে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই ভাই নিহত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের হাবেলি গঙ্গাদরদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ বাবা ও দুই ছেলেসহ তিনজনকে আটক করেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত দুই ভাই হাবেলি গঙ্গাদরদী গ্রামের গিয়াসউদ্দিন মাতুবরের ছেলে শামীম মাতুব্বর (২৭) ও রাকিব মাতুব্বর (১৫)। নিহত শামীম বিবাহিত এবং এক সন্তানের বাবা। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। গত রবিবারই তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। অপরদিকে, নিহত রাকিব স্থানীয় গঙ্গাধরদী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম ও তার চাচা লুৎফর রহমানের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ইউপি নির্বাচনে ভাতিজা তরিকুল ও চাচা লুৎফর চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তরিকুল সে নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ওই গ্রামের সাত্তার মাতুব্বর নির্বাচনে তরিকুলের সমর্থক ছিলেন। তার প্রতিবেশী গিয়াসউদ্দিন লুৎফরের সমর্থক ছিলেন। নির্বাচনের পরবর্তীতেও এই দুটি দলের সমর্থকদের পক্ষে ভেড়ানো নিয়ে বিরোধ চলমান ছিল। রবিবার বিকেলে গিয়াস মাতুব্বরের ছেলে রকিব বিলে জাল পাততে যায়। তাকে বাধা দেয় সাত্তার মাতুব্বরের ছেলে জামাল মাতুব্বর (৩৪) ও আফজাল মাতুব্বর (২৮)। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। সোমবার সকালে শামীম ও রকিব বিলে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় জাল পাততে গিয়ে দেখতে পায় তার আগেই প্রতিপক্ষ ওই এলাকায় জাল পেতে গেছে। তারা প্রতিপক্ষের জাল তুলে সরিয়ে তাদের জাল পেতে বিল থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার হয়। হামলাকারীরা তাদের দুই ভাইকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জঘম করে। তখন শামীমের স্বজনরা এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে শামীম ও রাকিকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থনান্তর করা হয়। আহত আলী নূর এবং ইমন মাতুব্বরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সাখাওয়াত মোস্তফা বলেন, হাসপাতালে আনার পর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক শামীম ও রাকিবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নূরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম বলেন, বিলে মাছ ধরার ব্যাপারে বিরোধ থেকে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ‘হামলাকারীরা তার সমর্থক’-এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোন অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেই না। কোন অপরাধীদের মদদ দেই না।’ ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গিয়াসউদ্দিনের প্রতিপক্ষ সাত্তার মাতুব্বর (৬৬) এবং তার দুই ছেলে সালাম মাতুব্বর (৩৮) ও জামাল মাতুব্বরকে (২৯) পুলিশ আটক করেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় দলপক্ষ, দলে লোক ভেড়ানো নিয়ে বিরোধ থাকলেও মাছ ধারাকে কেন্দ্র করেই গতকাল এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
×