ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিগ্রস্ত ঢাকা ওয়াসা

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৭ আগস্ট ২০২০

দুর্নীতিগ্রস্ত ঢাকা ওয়াসা

সরকারের বিপুল অর্থের অপচয়, অনিয়ম-দুর্নীতি-অব্যবস্থার আরেক নাম ঢাকা ওয়াসা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমল থেকে অদ্যাবধি সরকারী সংস্থাটি রাজধানীবাসীকে না দিতে পেরেছে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি, না পেরেছে ঢাকাকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে, না ঠিক করতে পেরেছে পয়ঃনিষ্কাশন। অথচ প্রতি বছর ব্যয় করছে হাজার হাজার কোটি টাকা। গ্রহণ করেছে নানা প্রকল্প। সত্যি বলতে কি, কোন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। আলোর মুখ দেখেনি অনেক প্রকল্প। ফলে রাজধানীবাসী কোন অবস্থাতেই মুক্ত হতে পারছে না দুর্নীতিগ্রস্ত এবং আপাদমস্তক অনিয়ম-অব্যবস্থায় নিমজ্জিত ঢাকা ওয়াসার রাহু গ্রাস থেকে। আর কবে নাগাদ মুক্তি মিলবে শ্বেত হস্তিতুল্য এই সংস্থাটির কবল থেকে তাও বলতে পারে না কেউ। ঢাকা ওয়াসার নানা অপকীর্তি তথা কুকীর্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না সীমিত পরিসরে। গত ১১ বছরে কমপক্ষে ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ৪০টির বেশি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। দুঃখজনক হলো, কোন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেনি। হলেও অসম্পূর্ণ এবং তাতে জনগণের হিত সাধন হয়নি। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে নিয়ে গেছে পুরো টাকা। উদাহরণত, পদ্মা-যশোলদিয়া পানি শোধনাগারের কথা বলা যায়। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটি অদ্যাবধি অসম্পূর্ণ। ৭ বছর আগে গৃহীত প্রকল্পটির লক্ষ্য রাজধানীবাসীর পানির সঙ্কট মেটাতে পদ্মা নদী থেকে পানি এনে পরিশোধন করে সুপেয় পানি সরবরাহ করা। প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে গত বছর উদ্বোধন করার পরও ঢাকাবাসীকে পানি পৌঁছে দেয়ার জন্য নির্মাণ হয়নি সরবরাহ লাইন। পুরনো লাইন দিয়েই কাজ চলছে কোনমতে। দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার করে যেখানে মাসে ১ হাজার ৩৫০ কোটি লিটার পানি সবরাহের কথা সেখানে ঢাকাবাসী পাচ্ছে প্রতি মাসে ৪৬০ কোটি লিটার। ফলে প্রকল্পে ক্ষতি হচ্ছে ২শ’ কোটি টাকার বেশি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব থাকায় ওয়াসার এমডিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে সাতবার। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থার অবসান হয়নি। ফলে সুপেয় পানি পয়ঃনিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতার সঙ্কট থাকছেই। বৈশ্বিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যতম সুপেয় পানির উৎস বাংলাদেশের মেঘনা, যার জন্য দেশটি রীতিমতো গর্ব করতে পারে। ইতোপূর্বে রাজধানী ঢাকার প্রায় দুই কোটি অধিবাসীর দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে পদ্মার পানি পাইপের মাধ্যমে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ভাবা হচ্ছে মেঘনার কথাও। কেননা, রাজধানীর চারপাশ পরিবেষ্টিত বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর পানি ইতোমধ্যেই দখল-দূষণে জর্জরিত, মৃতপ্রায়। এগুলোর পানি পান করা দূরে থাক, ব্যবহারেরও অযোগ্য। যে কারণে দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে প্রায় ৮৭ ভাগ ব্যবহার হচ্ছে ভূগর্ভের পানি। এতে স্বভাবতই ভূতলের পানির স্তর কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকহারে। অতঃপর বিকল্প উৎস হিসেবে ভাবা হচ্ছে মেঘনা ও পদ্মার কথা। তবে ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মার অবস্থা তেমন ভাল নয়। অন্যদিকে নিয়মিত দখল-দূষণে মেঘনাও হুমকির মুখে। নদীটির দুই তীরে গড়ে উঠেছে অন্তত ৮৭টি বড় শিল্প-কারখানা এবং ২০০০টি গুচ্ছ কারখানা। এসব কারখানায় ইটিপি বা কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় আদৌ তা পরিবেশবান্ধব নয়। ফলে এসব তরল ও কঠিন বর্জ্য গিয়ে পড়ছে মেঘনায়। সেই প্রেক্ষাপটে মেঘনার দূষণ রোধে জরুরীভিত্তিতে বছরে সাড়ে ১৭ কোটি ডলার ব্যয় করতে বলেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)- আর তাহলেই কেবল মেঘনার পানি রাজধানীর ৪০ শতাংশ মানুষের বিকল্প সুপেয় পানির উৎস হতে পারে। ঢাকা ওয়াসার কারিগরি সহায়তার অংশ হিসেবে জাইকার সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি। সুতরাং এর দখল ও দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে সর্বাত্মকভাবে। প্রশ্ন হলো, ঢাকা ওয়াসা আদৌ কি তা পারবে?
×