ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদমুক্ত দেশ গড়তে নাসিম আমৃত্যু লড়েছেন

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৭ জুলাই ২০২০

সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদমুক্ত দেশ গড়তে নাসিম আমৃত্যু লড়েছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য সদ্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত শোক ও স্মরণ সভায় জোটের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গড়তে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক জোট ১৪ দলকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে গেছেন। তার কারণেই ১৪ দল জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি পেয়েছে। দেশ ও দলের প্রয়োজনে লড়াইয়ে তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। মোহাম্মদ নাসিমের মতো নেতার মৃত্যু নেই, তিনি আজীবন মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আয়োজিত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে অনুষ্ঠিত এক শোক সভায় বক্তারা এভাবেই স্মরণ করেন প্রয়াত ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমকে। বক্তারা আরও বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা। ছিলেন বিশ্বস্ত সহকর্মী। পিতা শহীদ এম মনসুর আলী যেমন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ছিলেন, তেমনি মোহাম্মদ নাসিমও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ছিলেন। রাজনীতিতে তার ভূমিকা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নতুন সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে জাতীয় পর্যায়ে একটা বিরাট পরিচিতি দিয়ে গেছেন। তিনি অসুস্থ শরীর নিয়েই সারাদেশে ১৪ দলের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন, দলীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন। তার সব সময় শেখ হাসিনার প্রতি একটা অসম্ভব অন্ধভক্তি, শ্রদ্ধা এবং সম্মান ছিল। তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম সারাজীবন অসাম্প্রদায়িকতার ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তার পিতা যেমনভাবে অবিচল ছিলেন, একনিষ্ঠ ছিলেন, মোহাম্মদ নাসিমও কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একইভাবে অবিচল এবং একনিষ্ঠ ছিলেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অপর সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের অকাল মৃত্যু আমাদের কাঁদিয়েছে। তিনি আমাদের খুব প্রিয় একজন সহকর্মী ছিলেন। একটা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক সঙ্গে আন্দোলন করেছি। মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলকে এতবেশি পছন্দ করতেন যে প্রায় দিনই এই ১৪ দল নিয়ে আলোচনা করতেন। মোহাম্মদ নাসিম চলে গেছেন, আর কোন দিন ফিরে আসবেন না। আমাদের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী দলে মোহাম্মদ নাসিমের অনুপস্থিতি অনুভব করেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারলেই মোহাম্মদ নাসিমের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি মোহাম্মদ নাসিমের অকৃত্রিম আস্থা এবং বিশ্বাস ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা আমাদের সংগ্রামের বিশ্বস্ত একজন সঙ্গীকে হারালাম। তিনি কখনও অসাম্প্রদায়িক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার অঙ্গিকার থেকে বিচ্যুত হননি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রাম, আগুন সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রাম সবকিছুতেই সাহসের সঙ্গে রাজপথে নির্ভিক সৈনিকের ভূমিকা পালন করে গেছেন মোহাম্মদ নাসিম। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মোহাম্মদ নাসিম শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত হিসেবে দেশ ও জাতির যেকোন দুর্যোগময় মুহূর্তে দায়িত্ব পালন করে ১৪ দলকে সংগঠিত করেছেন। তিনি ১৪ দলকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। মোহাম্মদ নাসিমদের কোন মৃত্যু নেই। তারা আজীবন বেঁচে থাকবেন। আওয়ামী লীগের অপর সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, মোহাম্মদ নাসিমকে হারানোর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলল অসাম্প্রদায়িক আপাদমস্তক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক একজন নায়ককে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম আন্দোলনে ১৪ দলকে যেভাবে সংগঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তার তুলনা নেই। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হয়েছে, এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এবং আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপির পরিচালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নূরুল আম্বিয়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভা-ারি এমপি, গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের নেতা ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির নেতা ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, ন্যাপ নেতা ইসমাইল হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। ১৪ দলীয় জোটের এই স্মরণ সভায় করোনার সময়ে মোহাম্মদ নাসিমের পাশাপাশি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরানসহ দলীয় নেতাকর্মী যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
×