ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাবরিনা-আরিফ একে অপরকে দোষারোপ করছে

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৭ জুলাই ২০২০

সাবরিনা-আরিফ একে অপরকে দোষারোপ করছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জেকেজি হেল্থকেয়ারের করোনা প্রতারণা মামলায় ডিবিতে রিমান্ডে সাবরিনা দম্পতিকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতে শুুধু এই দম্পতির করোনা কেলেঙ্কারিই নয়, স্বাস্থ্য খাতের অন্যান্য ঘটনাও ফাঁস করছে উভয়েই। তদন্তকারীদের সামনেই তারা একে অপরকে অনৈতিক পথের পথিক বলে অভিযুক্ত করেছে। গত দুদিনের জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও প্রতারণার অনেক ক্লু পাওয়া গেছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কিভাবে চারটি করোনা টেস্ট পয়েন্ট পরিচালনা করত, কিভাবে টাকা নিয়ে নকল রিপোর্ট দেয়া হতো- সুনির্দিষ্টভাবে এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে তদন্তকারীরা। ডিবির একটি সূত্র জানায়, এই দম্পতিকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই একে অপরকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ নির্বাক থাকে। মাথা নিচু করে থাকে উভয়েই। তাদের কথা বলার আদেশ করার পরও চুপ থাকে। এক পর্যায়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সাবরিনা বলতে থাকে আমি কেন এখানে। তোমার জন্যই আজ এই দশা। জবাবে আরিফও এ পরিস্থিতির জন্য সাবরিনাকে দায়ী করে কিছু বলতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করে। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের করোনা প্রতারণাতে জড়ানোর জন্য আরিফই বাধ্য করেছে বলে অভিযুক্ত করে সাবরিনা। এদিকে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানিয়েছেন- এই দম্পতি যে কভিড-১৯ পরীক্ষার নামে জালিয়াতি করত তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন আমরা আরিফ বা সাবরিনা কার কতটুকু ভূমিকা ছিল তা নিরূপণ করার চেষ্টা করছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যাবে। এর বাইরেও অনেক তথ্য মিলছে। তারা প্রথমে পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। তবে আরিফ অনেক কিছু স্বীকার করেছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। উল্লেখ্য, করোনা তা-বের মাঝেও ওই দম্পতি বাসা থেকে সংগ্রহ করে নমুনা স্বাস্থ্য অধিদফতরে না পাঠিয়ে বা পরীক্ষা না করেই ফলাফল জানানোর অভিযোগে গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে। তারপর গত ১২ জুলাই গ্রেফতার করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ডাঃ সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে। প্রথমে থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করলেও পরে তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে বদলি করা হয়। জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরীকে গত বুধবার দ্বিতীয় দফায় আরও চারদিনের রিমান্ডে আনা হয়। এর আগে গত সোমবার ডাঃ সাবরিনাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল ডিবি পুলিশ। ডাঃ সাবরিনার গতকাল রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা। আজ শুক্রবার তাকে আবারও দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে আনা হবে। ডিবি এখন পর্যন্ত এই দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতারাণা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। তারা উভয়েই মিলেমিশে কভিড পরীক্ষার জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিত। বিদেশীদের কাছে পরীক্ষার জন্য দুই থেকে তিন শ’ ডলার আদায় করত। অথচ কারোরই কোন নমুনাই পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়নি। সব রিপোর্টই দেয়া হয়েছে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। এভাবেই এই দম্পতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে নিশ্চিত হতে পেরেছে তদন্তকারীরা। এদিকে সাবরিনার সঙ্গে কোন ধরনের ঘনিষ্ঠতা বা সখ্যতা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ কামরুল হাসান। তিনি এক বার্তায় বলেন, জেকেজির সঙ্গে আমার কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। চিকিৎসক হিসেবে ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মীদের সঙ্গে যেমন সৌজন্যমূলক সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় তেমনই ছিল। এটিই সর্বজনবিদিত। আসলে কার্ডিয়াক সার্জারির নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলা আমার নামেও অপপ্রচার চালানো হয়েছে।
×