ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২০ থেকে ২২ বছর বয়সী মেয়েদের মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে প্রলুব্ধ করা হতো

আজম ও তার সহযোগী ডায়মন্ডের আদালতে স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১৪ জুলাই ২০২০

আজম ও তার সহযোগী ডায়মন্ডের আদালতে স্বীকারোক্তি

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ দুবাই ড্যান্স ক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের গডফাদার আজম খান (৪৫) ও তার সহযোগী আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড (৩৪) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দীতে তারা বলেছে, চাকরির প্রলোভনে গত আট বছরে সহস্রাধিক বাংলাদেশী ২০-২২ বছর বয়সী তরুণীকে দুবাই পাচার করে। সেখানে তার ড্যান্সবারে তাদের নাচতে বাধ্য করা হতো। একপর্যায়ে যৌন ব্যবসা করানো হতো তাদের দিয়ে। রাজি না হলে আটকে রেখে বৈদ্যুতিক শকসহ নানা নির্যাতন চলত তরুণীদের ওপর। খেতে দেয়া হতো না। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা বাধ্য হতো পাচারকারীদের কথামতো কাজ করতে। নারী পাচারকারী চক্রের হোতা আজম ও তার সহযোগী জানায়, বাংলাদেশে অর্ধশত দালালের মাধ্যমে অল্প বয়সী তরুণী, বিশেষ করে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী মেয়েদের মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে আজম খানের দুবাইয়ে তার হোটেলে চাকরির জন্য প্রলুব্ধ করা হতো। দালালরা মেয়েদের প্রলুব্ধ করে নির্ধারিত দুটি বিদেশী এয়ারলাইন্স এজেন্সির মাধ্যমে দুবাইতে পাঠাত। সেখানে যাবার পর তাদের প্রথমে ছোটখাটো কাজ দেয়া হতো। এরপর জোর করে ড্যান্স বারে নাচতে বাধ্য করা হতো। যৌনপেশায় কাজ করতে বাধ্য করা হতো। না করতে চাইলে আটক রাখা হতো, তাদের খাবার দেয়া হতো না, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেয়া হতো। দুবাইতে আজম খানের মালিকানাধীন হোটেল- ফরচুন পার্ল হোটেল এ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুনে পাচারকারী মেয়েদের ড্যান্সবারে নাচতে বাধ্য করা হতো। একপর্যায়ে যৌন ব্যবসায় তাদের বাধ্য করা হতো। তার টর্চারসেলে আটকে রেখে দিনের পর দিন মারধর ও বৈদ্যুতিক শক দেয়া হতো। চট্টগ্রামের বাসিন্দা আজম খানের দেশে রয়েছে অর্ধশতাধিক দালাল। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক মেয়ে বাংলাদেশে দালালদের মোবাইল ফোনে জানাত। তাদের যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। চট্টগ্রাম ফটিকছড়িতে এক সময় ছাত্র শিবির নেতা আজম খান ও তার সহযোগী আলামিন আদালতে সহস্রাধিক নারী পাচার করে তাদের ওপর নানা নির্যাতনের দায় স্বীকার করেন। তারা জানান, নারী পাচারের কাজে তাদের সহযোগিতা করেছে একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি ও বিদেশী কিছু বিমান সংস্থা। আদালতে স্বীকারোক্তিতে আজম খান জানায়, তার বিরুদ্ধে দেশে ছয়টি হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। তিনি ছাড়াও এ কাজে দুবাইয়ে তার সঙ্গে আরও দুই ভাই যুক্ত ছিলেন। এই দলে ভারত ও পাকিস্তানের দলগুলোও যুক্ত আছে। দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্ট রেখে তাকে (আজম খানকে) দেশে পাঠায়। এর আগে সেখানে এক মাস জেলও খাটেন। অন্য পাসপোর্টে দেশে ফিরে তিনি পালিয়ে থাকেন। এই সুযোগে তিনি নতুন পাসপোর্ট করে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন।
×