ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার পানি প্রবাহে রেকর্ড ॥ বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপরে

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ১৩ জুলাই ২০২০

তিস্তার পানি প্রবাহে রেকর্ড ॥ বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপরে

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী ॥ তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ সর্বকালের রেকড ভঙ্গ করেছে। আজ সোমবার সকাল ৬টায় নীলফামারীর ডিমলা ডালিয়ায় তিস্তা ব্যরাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার(৫২.৬০) ৫২ সেন্টিমিটার(৫৩.১২) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাত ১২টায় সেখানে পানি প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার(৫৩.১৫) ওপরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ(ফ্লাডবাইপাস) এলাকাটি কর্মকর্তারা নজরদারী করা হচ্ছে। তিস্তার ব্যারাজ এলাকা ও এর আশপাশ এলাকায় রেড এলার্ট জারী করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিস্তার এমন রুদ্রমূর্তিতে রাতে ব্যারাজ এলাকায় ছুটে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ। দীর্ঘ সময় অবস্থান করে তিনি ঘুরে দেখেন ব্যারাজ ও ফ্লাড বাইপাস এলাকা। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম, নির্বাাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) একেএম সামসুজোহা, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক। উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার অতিক্রম করে গত শুক্রবার(১০ জুলাই)। সে থেকে বিপদসীমার ওপরে চলছে পানি প্রবাহ। টানা চার দিনের ঢলে জেলার ডিমলা উপজেলার নদী বেষ্টিত পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপনী, পশ্চিমছাতনাই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার দফায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেশ্বর, চরখড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, পশ্চিমখড়িবাড়ি, তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, বাক্সপোটরা নিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। অপরদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারী এলাকার ২ হাজার পরিবার বন্যাকালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই উপজেলার অসংখ্য ফসলী জমির আমন বীজতলা, রোপিত আমনের রোপা তলিয়ে গেছে। বসতঘরগুলোতে প্রকারভেদে হাটু ও কোমড় সমান পানির স্রোতে বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাছের খামারগুলোর পুকুরগুলো উপচে পড়ায় প্রচুর মাছ ভেসে গেছে। ওই সকল এলাকায় খবর নিয়ে দেখা গেছে পরিবারগুলো বাক্সপোটরা নিয়ে নিরাপদে সরে যাচ্ছে। এ ছাড়া গ্রামের রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি বৈইছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র মতে, উজানের ঢলে গতকাল রবিবার রাত ১২টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ সোমবার সকাল ৮টায় কিছুটা কমে ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে গত শুক্রবার দুপুরে। সেদিন রাতে ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার(১১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ৩৩ সেন্টিমিটার ও গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুত্র বলছে, আজ সোমবার সকাল ৮টায় ভারতের তিস্তা নদীর দো-মহনী পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা (৮৫.৯৫ মিটার) ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসছে। তবে গতকাল রবিবার রাত ১২টা থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১টায় ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পাশাপাশি সেখানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুত্র মতে, বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্ট হতে উজানে ভারতে তিস্তার দো-মহনীর দুরত্ব ৬৫ কিলোমিটার ও ভারতের গজরডোবার দুরত্ব ১২০ কিলোমিটার। সুত্র মতে ভারতের পাহাড়ে ও সমতলের প্রচুর বৃষ্টিপাত ও গজলডোবার জলকপাট খুলে দেয়ায় বন্যা পরিস্থিতি এ ৮৮/৯৬ অথবা ৯৮ সালের মতো হতে পারে। চলতি বর্ষায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে গত ২৬ জুন। সেদিন সকাল থেকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অব্যাহত থাকে ২৮ জুন পর্যন্ত। ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত বিপদসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ৪ জুলাই দ্বিতীয় দফায় বিপদসীমা অতিক্রম করে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ৬ জুলাই থেকে ১০ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার নিছে ছিল। সেদিন দুপুরে বিপৎসীমার ওপরে উঠলে রাতে ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন,‘তিস্তা ব্যরাজের পানি ধারণ ক্ষমতা রয়েছে সাড়ে চার লাখ কিউসেক। এর বেশী প্রবাহ হলে পানি অপসারণের জন্য প্লাট বাইপাস খুলে দিতে হয়। গত রাতে ওই ফ্লাট বাইপাস খুলে দেওয়ার কাছাকাছি পানি প্রবাহ পৌঁছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন উপজেলার নকল কর্মকর্তাগনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকভাবে টিম গঠন করে প্রতিটি ইউনিয়নে মনিটরিং করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা তাদের স্ব-স্ব এলাকায় নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি নৌকা তৎপর রয়েছে ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
×