ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহামারীর শঙ্কায় চীনে সতর্কতা জারি

এবার প্লেগের ছোবল

প্রকাশিত: ২১:০৪, ৭ জুলাই ২০২০

এবার প্লেগের ছোবল

চীনে এবার প্রাণঘাতী বিউবনিক প্লেগ ছড়াতে শুরু করায় দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় একটি শহরে জরুরী সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের বায়ানুর শহরে প্লেগ প্রতিরোধে তৃতীয় মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম পিপলস ডেইলি জানিয়েছে। শনিবার বায়ানুরের একটি হাসপাতালে বিউবনিক প্লেগ রোগী শনাক্তের পরপরই এ সিদ্ধান্ত নেয় বেজিং। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ সতর্কতা থাকবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। বিবিসি, সিএনএন ও দ্য উইক। বায়ানুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘বর্তমানে এই শহরের মানুষের মধ্যে প্লেগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সবার আত্ম সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে এবং সতর্ক হতে হবে। শরীরে যে কোন ধরনের অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।’ গত ১ জুলাই চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছিল, দেশটির পশ্চিম মঙ্গোলিয়ার খোভদ প্রদেশে দুইজন বিউবোনিক প্লেগে আক্রান্ত হয়েছেন। ল্যাব টেস্টে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্লেগে আক্রান্ত ওই দুই ভাই মারমোটের (ইঁদুরজাতীয় প্রাণী) মাংস খেয়েছিলেন। এ কারণে মানুষজনকে এ প্রাণী শিকার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ১৪৬ জনকে চিহ্নিত করে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। প্লেগ রোগের তিনটি ধরনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিউবনিক প্লেগ। ব্যাকটেরিয়াজনিত এই অসুখ ইঁদুরজাতীয় প্রাণীদের শরীরে থাকা পোকা বা আশপাশে বসবাসকারী মাছির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অসুখটি প্রাপ্তবয়স্ক একজন রোগীকে মেরে ফেলতে পারে। ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর রোগ বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগী পাওয়ার পর ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের একটি শহরের কর্তৃপক্ষ এ সতর্কতা জারি করেছেন। বায়ানুর শহরের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি রবিবার তৃতীয় মাত্রার সতর্কতা জারি করে। সতর্কতায় বন্য প্রাণী শিকার ও তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। গত বছর নবেম্বরে এ রোগে আক্রান্ত সন্দেহে অন্তত চার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদের মধ্যে অন্তত দুইজনকে বেজিংয়ে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। অতি ছোঁয়াচে বিউবনিক প্লেগ ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামেও পরিচিত। রোগটি মূলত ইঁদুর ও মাছির মাধ্যেমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৪ শতকের দিকে অন্তত ৭৫ থেকে ২শ’ মিলিয়ন মানুষ এবং ৫৪১ থেকে ৫৪৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ১৪ শতকে শুধু আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপেই প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। ১৬৬৫ সালে এই মহামারীর কারণে লন্ডনের অন্তত অর্ধেক জনসংখ্যা বিলীন হয়ে যায়। এরপর ১৯ শতকে চীন ও ভারতে রোগটি ছড়িয়ে পড়লে অন্তত ১২ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। বিউবনিক প্লেগ হলো ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামক ব্যাক্টেরিয়াঘটিত প্লেগ রোগের তিনটি প্রকারের একটি। জীবাণুর সংস্পর্শে আসার ১ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গগুলো হলো জ্বর, মাথাব্যথা, বমি। ত্বকের যে স্থান দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করে তার নিকটবর্তী লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। মাঝেমধ্যে ফোলা লসিকাগ্রন্থি ফেটে যেতে পারে। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে নোভেল করোনাভাইরাস।
×