স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ ‘এই জীবনে ৭-৮ বার বাড়ি ভাঙ্গছে নদী। কিন্তু এমন ভাঙ্গন দেখি নাই। চোখের পলকে গাছপালা, ঘর জমি ভেসে গেল। বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন ধরলার ভয়াবহ ভাঙ্গনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন এভাবে। ভিটেমাটি সব হারিয়ে তিনি উঠেছেন বাঁধের রাস্তায়। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমর কামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীনের মতো অনেকেই এখন ধরলার রুদ্ররোষে নি:স্ব।
মাত্র দুই সপ্তাহেই যেন বদলে গেছে চিরচেনা গ্রাম। ধরলার প্রবল স্রোতে আঘাত হানছে এই গ্রামে। প্রায় এককিলোমিটার জুড়ে চলছে ভঙ্গনের তান্ডব। ভাঙ্গনের তীব্রতা এতা বেশি যে, ঘরবাড়ি সরানোর ফুরসত মিলছেনা। পাশাপাশি গাছপালা, বাঁশঝাড় কাটার হিড়িক পড়েছে। তাও সব রক্ষা করা যাচ্ছেনা।
গত সপ্তাহে একদিনেই জয়নাল, আমিনুর, আবু মিয়া, জিয়াউল, বাদশা, দুলাল. ইসলাম মিয়া ও নুরুন্নবীর বাড়ি ভিটা গিলে খেয়েছে ধরলা। গ্রামে অর্ধশত যুবক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজ না করলে সবার বাড়ি ভেসে যেতো বানের পানিতে। খড়ের গাদা, টিউবয়েল বাঁশঝাড় সব ভেসে গেছে স্রোতে।
স্বেচ্ছাসবক আল আমিন শাওন বলেন, ‘আমরা স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম। হঠাৎ কান্না আর চিৎকার শুনে ছুটে এসে দেখি পাড় ধ্বসে পড়ছে। আমরা অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসি। ঘর-বাড়ি ও মালপত্র সরাতে সাহায্য করি। এখনো প্রতিদিন এই কাজ করে যাচ্ছি।’ একই কথা বলেন, নাজমুল ইসলাম, বিপুল মিয়া, নাহিদ আলমসহ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক।
এই গ্রামের দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরো অর্ধশত পরিবার ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পুরো গ্রাম। শুধু তাই নয় যেভাবে ভাঙ্গন চলছে তাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও ভেঙ্গে যেতে পারে এ বছরই।
ভাঙ্গন কবলিতরা অভিযোগ করেন ঊর্বর ফসলি জমি, সুপারি ও ফলের বাগান সমৃদ্ধ গ্রামটি দেখতে দেখতে বিলীন হয়ে গেলেও ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ এলাকাবাসী।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, জয়কুমর কামারপাড়া এলাকাটি ভাঙ্গন এলাকার তালিকায় ছিলোনা। হঠাৎ করে এই এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ ব্যপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শিগগির ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: