ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবেলায় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের করনীয়

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ৬ জুন ২০২০

করোনা মোকাবেলায় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের করনীয়

এম. এ. হাসেম, প্রাক্তন সংসদ সদস্য॥ গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহর থেকে বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে মরনঘাতী করোনা ভাইরাস। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এ ভাইরাস ইতোমধ্যেই সৃষ্টি করেছে চরম বিপর্যয়, কেড়ে নিয়েছে কয়েক লাখ মানুষের প্রাণ, স্থবির করে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ইউরোপ আমেরিকার মত দেশ গুলো যখন এই ভাইরাস মোকাবেলায় কোনঠাসা হয়ে পড়েছে, বিপর্যয় ঘটেছে অর্থনীতির তখন অত্যন্ত সফলতার সাথে করোনা মোকাবেলা করে চীনই হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অনুকরনীয় উদাহরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাই আক্রান্ত দেশগুলোকে চীন এর পদক্ষেপগুলো অনুসরণের তাগিদ দিয়েছেন। ভাইরাস মোকাবেলায় এই সফলতার পেছনে রয়েছে দেশজুড়ে জরুরী অবস্থা জারি ও উৎসস্থলগুলো পুরোপুরি লকডাউন করে দেয়া পর্যাপ্ত টেস্ট করানো এবং জরুরী হাসপাতাল তৈরি ও নিরবিছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান । একটি স্বাধীন দেশে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করার কোন নিয়ম না থাকলেও, সবার কল্যাণের স্বার্থে ক্ষুদ্র ত্যাগ যে এক সময় বড় সাফল্য নিয়ে আসে, নজির রেখেছে চীন। আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এই রোগের সংক্রমণ রোধ করতে পারে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেই করোনা ভাইরসের মোকাবেলা করতে হবে। আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা এবং একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি নিচের পদক্ষেপগুলো করোনা মোকাবেলায় আগামি দিনে করণীয় বলে মনে করিঃ ক. পর্যাপ্ত করোনা টেস্ট এর বাস্তবায়ন করা করোনা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হল রোগ নির্ণয় করা এবং আক্রান্ত বাক্তিদের আলাদা করে তাদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা। আমাদের দেশে এখন ও প্রয়োজনের তুলনায় টেস্ট এর সংখ্যা অনেক কম। টেস্ট এর সংখ্যা বড়াতে আমরা চীন থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে টেস্ট কীট আমদানি ও প্রয়োজনীয় টেকনিকাল প্রশিক্ষণ আয়োজনের বাবস্থা করতে পারি। খ. চীন-বাংলাদেশ যৌথ করোনা হসপিটাল তৈরি করা চীনের খুব দ্রুত জিনিসপত্র তৈরির রেকর্ড রয়েছে এমনকি বিভিন্ন ধরণের বিশাল প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উহান শহরে নির্মিত হাসপাতাল এর আদলে চীন এবং বাংলাদেশর যৌথ উদ্যোগে জরুরী হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। গ. করোনা রোধে চীনের তৈরি ভ্যাকসিন এর সুবিধা গ্রহন করা সম্প্রতি গণমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম করোনা রোধে বেইজিং ভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান সিনেভা অতি দ্রুত কার্যকারী ভ্যাকসিন তৈরি ও সরবারাহ করবে। আমাদের উচিত হবে চীন এর সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি করে সবার আগে এই ভ্যাকসিন এর সুবিধা গ্রহন করা। ঘ. করোনা রোধে চীনের সহযোগিতা গ্রহন ইতিমধ্যে ইতালি, ফিলিপাইন, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিশেষজ্ঞ দল ও সরঞ্জামসহ ঔষধ সরবরাহ করেছে চীন। বাংলাদেশের মননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং করোনা রোধে বাংলাদেশকে সবধরনের সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মেডিক্যাল সামগ্রী ও বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে চীন। এখন আমাদের করনীয় হবে চীনের কাছ থেকে এসকল সুবিধা গ্রহন করে করোনা রোধে এগিয়ে যাওয়া। ঙ. যথাযথ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা আমাদের দেশের মানুষ সভাবতই কম সচেতন। তাই সব স্থরের মানুষ এর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বাড়নো এর পাশাপাশি কঠোর আইন প্রণয়ন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান দরকার। চ. হাসপাতাল গুলোতে আই সি ইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা বাড়ানো করোনাভাইরাস মহামারির মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট সংখ্যক ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ আই সি ইউ বেড বাড়াতে হবে। যেসব রোগীর সংক্রমণ খুবই মারাত্মক তাদের জীবনরক্ষায় ভেন্টিলেটর খুবই কার্যকর একটি যন্ত্র। আশার কথা হল আমাদের দেশে কয়েকটি কোম্পানির ভেন্টিলেটর উৎপাদন শুরু করেছে। তবে আমি মনে করি এখনই জরুরী ভিত্তিতে চীন থেকে দুই- আড়াই হাজার মানসম্মত ভেন্টিলেটর আমদানি করে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতাল গুলোতে দেয়া যেতে পারে। ছ. ঔষুধ শিল্পে কর মওকুফ উপরের আলোচনার ধারাবাহিকতায় আমি বাংলাদেশ সরকারকে স্থানীয় ঔষুধ কোম্পানি গুলোকে করোনার প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন তৈরিতে সব ধরনের কর মওকুফ এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করতে আহবান জানাচ্ছি। সেইসাথে উৎপাদন এবং উৎপাদন পরবর্তী সময়ে সরকারের কঠোর নজরদারি এর আহবান জানাচ্ছি যাতে করে শুধু মাত্র যে সকল হাসপাতাল করোনা সেবা প্রদানে নিয়োজিত শুধু সে সকল হাসপাতালে এসব প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়। পরিশেষে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি ধন্যবাদ জানাবো তার গতিশীল নেতৃত্বের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন ও সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে জাচ্ছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এবং আগামি দিনে ও রাখবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
×