ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিপাকে নন কোভিড রোগীরা

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৩১ মে ২০২০

বিপাকে নন কোভিড রোগীরা

তপন বিশ্বাস ॥ করোনা প্রাদুর্ভাবে ‘নন কোভিড’ রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। ‘নন কোভিড’ রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও এর সমাধান হচ্ছে না। রাজধানীর অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। সরকার থেকে সকল সুযোগ-সুবিধা নেয়ার পরও রোগী ভর্তিতে অনীহা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ঈদের মধ্যে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এমনকি খোদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও (বিএসএমএমইউ) রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছেন, রোগী ভর্তি চলছে এবং আছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে হাসপাতালগুলোতে রোগীর অনেক ভিড় ছিল। বড় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে তদ্বির করার প্রয়োজন পড়ত। সেই সকল হাসপাতাল এখন রোগী ভর্তি বন্ধ করে রেখেছে। এতে সাধারণ রোগীরা নিরুপায় হয়ে এক হাসপাতল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বরং অসুস্থ রোগীরা বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে কেউ কেউ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সামরিক হাসপাতাল এবং পুলিশ হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হলেও সেখানে সাধারণের ভর্তির সুযোগ নেই। সেখানে নিজস্ব রোগীই ভর্তি করানো হয়। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন? তারা কি চিকিৎসা পাবেন না? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউ হাসপাতালের আইসিইউতে মাত্র ৫ জন রোগী ছিলেন। ২ বেডের বিপরীতে এই পাঁচ রোগী পুরনো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নতুন কোন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এই হাসপাতালে আইসিইউতে রোগী ভর্তি করতে আগে যেখানে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়াল দেয়া হতো এমনকি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির রোগীকেও সিরিয়ালে থাকতে হতো, সেখানে এখন মাত্র ৫ জন রোগী আছেন। তাও পুরনো। এছাড়া কিডনি, লিভার, ক্যান্সার অর্থোপেডিক ইউনিটে কোন রোগী নেই। হাসপাতালটির টিকাদান কর্মসূচীও বন্ধ রয়েছে। সি ব্লকে ৪ এবং ডি ব্লকে মাত্র ৫ জন রোগী রয়েছেন। প্রতি ব্লকের রোগীকে একই রুমে রাখা হয়েছে। ‘ফিভার’ ইউনিটে করোনার সুব্যবস্থা থাকলেও সেখানে কোন রোগী নেই। সাধারণ জ্বর হলে প্রয়োজনে পরীক্ষা করে রোগী ভর্তির সুযোগ থাকলেও তা করা হচ্ছে না। শিশু ওয়ার্ডে মাত্র তিনটি রোগী রয়েছে। এভাবে পুরো হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ৫০ এর নিচে। রোগী নেই এমন ওয়ার্ডের সংখ্যাই বেশি। প্রায় দুই হাজার শয্যার এবং দেশের সেরা এই হাসপাতালে চিকিৎসায় যদি এমন বেহাল দশা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন? বিএসএমএমইউ হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, অধিকাংশ আউটডোর বন্ধ রাখা হয়েছে। হাতেগোনা দুই-একটা খোলা থাকলেও সেখানে কোন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসকের রুম খোলা থাকলেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। অভিযোগ আছে আবাসিক সার্জনরা আসেন এবং আধাঘণ্টা থেকে চলে যান। কিন্তু কোন রোগী ভর্তি দেন না। সম্প্রতি এই হাসপাতাল ‘টেলি মেডিসিন’ চালু করে। সেখানে ডাক্তার অনলাইনে রোগীর সঙ্গে কথা বলে মেডিসিনের নাম ও খাওয়ার নিয়ম বলে দেবেন। গত মঙ্গলবার সেখানে কম্পিউটার বসানোও হয়। অভিযোগ রয়েছে এটি শুরু করেই আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। আগামীকাল ১ জুন থেকে হাসপাতালটির আউটডোর খুলে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আউটডোর খোলা আছে। হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে এবং চলছে। তিনি বলেন, ১ জুন থেকে বিশেষ আউটডোর খোলা থাকবে। এবং ‘টেলি মেডিসিন’ চালু রয়েছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে হাসপাতালের এক মুখপাত্র স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সার্জারি, গাইনি, শিশু, মেডিসিন ও চক্ষু বিভাগের আউটডোর খোলা আছে। তবে কোন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে ‘চক্ষু চিকিৎসা’ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বিএমএর সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ শারফুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, চক্ষুসহ কয়েকটি বিভাগের আউটডোর খোলা আছে। ১ জুন থেকে বাকি আউটডোর খোলা হবে। তিনি বলেন, এই অবস্থায়ও প্রতিদিন আমার বিভাগে ১৫/২০ করে রোগী আসে। তিনি বলেন, সতর্কতা অবলম্বন করলে কোভিড ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কম। এ ব্যাপারে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে। সকল ডাক্তারকে পিপিই পরে আসতে হবে। তিনি বলেন, কোভিড হাসপাতালে এই রোগের বিস্তার কম। সেখানে সকলে সতর্ক থাকে। চিকিৎসার সঙ্গে যারা জড়িত তারা সকলে পিপিই পরেন। আর নন কোভিড হাসপাতালে বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট অপর এক সূত্র জানায়, সরকার হাসপাতালটিকে পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিয়েছে। পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত পরিমাণ এসেছে। কিন্তু যথাযথভাবে তা বণ্টন করা হয়নি। রাজধানীর অপর একটি বড় হাসপাতাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ। ঈদের ৪/৫ দিন আগেও সেখানে রোগী ভর্তি করা হতো না। বিলম্বে হলেও তারা রোগী ভর্তি শুরু করেছে। ২১ মে থেকে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার হাসপাতালটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৩১৯। যদিও ৮৫০ আসনের বিপরীতে এই রোগী নগণ্য। এই হাসপাতালটিতেও আসনের চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি করা হয়। ফ্লোরে বিছানা করে রোগী রাখা হয়। তারপরও সেখানে ভর্তি শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শনিবার থেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে করোনার পাশাপাশি সাধারণ রোগী ভর্তি করা হবে। এ সংক্রান্ত সরকারের একটি নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৈঠকও করেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। তারপরও প্রায় আড়াই হাজার শয্যার বিপরীতে রোগী প্রায় দেড় হাজার। ঢাকার বাইরের হাসপাতালের চিত্র একই রকম। সেখানেও রোগী ভর্তি না করার প্রবণতা দেখা গেছে। খুলনা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫শ’। অন্যান্য সময় সেখানে এক হাজার থেকে এক হাজার দুই শ’র মতো রোগী থাকতেন। বৃহস্পতিবার সেখানে রোগী ছিলেন ২শ’ ৪৭ জন। দুর্ঘটনার রোগী ছাড়া সেখানে অন্য রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
×