ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমফান তান্ডবে কুয়াকাটার সবুজ দেয়াল বিবর্ণ

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ২৬ মে ২০২০

আমফান তান্ডবে কুয়াকাটার সবুজ দেয়াল বিবর্ণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ দুর থেকে দেখায় সবুজ সতেজ গাছগুলো যেন ধূসর, বিবর্ণ হয়ে গেছে। কাছে গেলে মনে হয় আগুনের হল্কা লেগেছে। কুয়াকাটা সৈকতের শুন্যপয়েন্ট থেকে দুইদিকে ১৮ কিলোমিটার জুড়ে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির হাজারো গাছের এমন বিবর্ণদৃশ্য দেখলে আৎকে উঠবে যে কেউ। পাতাগুলো কুকড়ে, বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধের দুই পাশেও একই দৃশ্য। সিডর, আইলা কিংবা বুলবুলের পরে আগে কখনও এমনটি দেখা যায়নি। চোখ জুড়ানো সবুজের আচ্ছাদন যেন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ঘুর্ণিঝড় আমফানের জলোচ্ছ্বাস কিংবা প্রবল ঝড়ো হাওয়ার পরের দিন থেকে এই উৎকন্ঠার দৃশ্য দেখা গেছে। মনে হয় গাছে যেন মড়ক লেগেছে। সতেজ, সবুজের সমারোহে বিমোহিত কুয়াকাটা সৈকতের জন্য এটি একটি উদ্বেগের বিষয় বলে সাধারণ জেলেসহ সকলের মতামত। তবে মো. সোহেলসহ অনেক জেলে বলছেন, এখন সাগরের পানি অস্বাভাকি লোনা থাকায় আমফানের তান্ডবে সৃষ্ট কয়েক দফা জলোচ্ছ্বাসের কারণে গাছের এমন দশা হয়েছে। তার ভাষায়, ‘সব গাছের পাতা ঝড়ে নোনা পানির ঝাপটায় পুইড়্যা গেছে।’ সৈকতপাড়ের ট্যুরিজম পার্কের গাছগুলোর একই দশা। গাছগুলোর পাতা কুকড়ে শুকিয়ে গেছে। বিবর্ণ এ দৃশ্য আরও দগদগে হয়ে দেখা দিচ্ছে। যেন গাছগুলো এর শিকার থেকে বাঁচতে চাইছে। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন কুয়াকাটার (টোয়াক) পরিচালক কেএম বাচ্চু জানান, আগে কোন বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাসে তারা এমনটি দেখেননি। কুয়াকাটা সৈকতের এই প্রকৃতির সবুজ দেয়াল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছগুলো সকল ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকে বুক পেতে প্রতিরোধ করে। অথচ এখন গাছগুলো এখন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর সবুজ দেয়াল বিলীন হলে এরপরের জলোচ্ছ্বাসে প্রথমে বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে পড়বে। ঝুঁকিতে পড়বে বাঁধের অভন্তরের মানুষ ও তাদের সম্পদ। তবে পরিবেশবাদীরা বলেছেন শঙ্কার কিছুই নেই। আস্তে আস্তে আবার গাছগুলো সতেজ হয়ে উঠবে। তবে সময় লাগবে কিছুদিন। আর কিছু গাছ প্রত্যেক ঘুর্ণিঝড়েই মারা পড়ছে। সৈকপাড়ের বাসীন্দা বিধবা পারভিন বেগম বলেন, ‘ এইবারের বইন্যায় বৃষ্টি ছিলনা, বাতাস ছিল গরম। হ্যার লইগ্যা গাছের পাতা পুইর‌্যা গ্যাছে।’ বীচ রাইডার চালক কিশোর হাসানের ভাষ্য, ‘ আমফানে সব পুইর‌্যা গ্যাছে।’ পটুয়াখালীর বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আমফানের আগে টানা দীর্ঘসময় খরা ছিল। এরফলে মাটির নিচ থেকে জলীয় বাষ্প কমে লবণাক্ততার তীব্রতা বেড়েছে। এছাড়া আমফানের কয়েকদিনে জোয়ারের লবণপানি গাছগুলোর গোড়া থেকে ভাটার সময়ও শুকোয়নি। এক ধরনের অস্থায়ী জলমগ্নতা ছিল। শ^াসমূল ডুবে ছিল। এটিও কারণ হতে পারে। এছাড়া এপ্রিল-মে মাসে সাগরে বেশি মাত্রার লবণপানি থাকে। ওই পানির ঝাপটায় গাছের পাতা বিবর্ণ হতে পারে বলে জেলেদের মন্তব্য তিনি উড়িয়ে দেননি। কৃষিবিদ মো. মশিউর রহমান জানান, তীব্র লবণাক্ত পানির ঝাপটা এসব ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ শেকড়ে খাপখাইয়ে নিতে পারলেও পাতার সহনশীলতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন রয়েছে। কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বেগম নাজমা আক্তার জানান, এবারের ঝড়োহাওয়া কিছুটা উষ্ণ ছিল। এবং মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে গাছের সুষম খাদ্যের অভাবে এটি হতে পারে। ক্রমশ ঠিক হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলেন এই শিক্ষক। এটি স্থায়ী কোন ক্ষতির কারন কি না তা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
×