ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবেলায় ট্রাম্প নয়, ইইউ মডেল অনুসরণ

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ১৬ মে ২০২০

করোনা মোকাবেলায় ট্রাম্প নয়, ইইউ মডেল অনুসরণ

শংকর কুমার দে ॥ দেশের করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যেসব দেশ সফল হয়েছে, সেই সব দেশের ফর্মুলা অনুসরণ করছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প মডেল অনুসরণ নয়, বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের ফর্মুলা গ্রহণ করার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্যই ছুটি বাড়ানোসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিক নির্দেশনা অনুসরণে স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দিয়ে হার্ডলাইন বেছে নিয়েছে সরকার। সরকার নির্দেশ দিয়েছে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানুষ মেনে চলে সেজন্য কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প মডেল অনুসরণ করবে না সরকার। কারণ যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকির চেয়ে অর্থনৈতিক দিককে গুরুত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প মডেল। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্সের পথ থেকে দূরে সংক্রমণ, মৃত্যুর দিক দিয়ে পৃথিবীর মধ্যে শীর্ষে পৌঁছে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। আর করোনাভাইরাসের উৎপত্তির দেশ চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খুবই অল্প সময়ে সঙ্কট উত্তরণে সফল হয়েছে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুসরণ করছে সরকার। সরকারের করোনা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীন একটা ফর্মুলা দিয়েছে। এই ফর্মুলা অনুসরণ করছে ইউরোপের দেশগুলো। এই ফর্মুলা অনুযায়ী করোনা মোকাবেলা একটি তিন মাসের প্যাকেজ। করোনা সংক্রমণ হওয়ার পরই প্রথম যে কাজটি করতে হবে, যারা সংক্রমিত তাদেরকে আলাদা করতে হবে এবং সংক্রমিত ব্যক্তিদের যারা সংস্পর্শে এসেছে তাদের কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে। যে এলাকাগুলোয় সংক্রমিত হয়েছে সেই এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। দ্রুত বেশি করে পরীক্ষা করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সবকিছু বন্ধ করে দিতে হবে। এ রকমভাবে তিন সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহের কার্যকাল চলার পর পরিস্থিতি আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। তখন আরও চার সপ্তাহ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা এবং সব কিছু বন্ধ রাখার ব্যাপারটি অব্যাহত রাখতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে করোনা পরিস্থিতি কমতে শুরু করবে। তখন স্বাস্থ্যবিধিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। বের হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বের হওয়ার জন্য মানুষকে স্বাস্থ্যবিধিগুলো আবার জানিয়ে দিতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে যে জায়গাগুলো কম স্পর্শকাতর সে জায়গাগুলো খুলে স্বাভাবিক জীবনে ধীরে ধীরে ফিরতে হবে। এই ফর্মুলাটি উহানে অনুসরণ করা হয়েছে, চীনে অনুসরণ করা হয়েছে। এখন ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলো এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একাধিক গবেষণা বলছে, যদি এই পদ্ধতি অনুসরণ না করা হয়, তাহলে আমরা দীর্ঘমেয়াদী করোনা সংক্রমণের সঙ্কটে পড়ব। কারণ একটি গ্রুপ যখন সংক্রমিত হয়ে সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে দেবে, তখন যদি লকডাউন না হয়, অবাধে মেলামেশা হয়; তাহলে আরেকটি নতুন জনগোষ্ঠী করোনায় আক্রান্ত হবে। তখন তারা আবার আরেকটি অংশকে করোনা ছড়িয়ে দেবে। এভাবে হার্ড ইমিউনিটির দিকে একটি দেশ যাবে। যার ফলে তিন মাস তো দূরের কথা, ছয় মাসেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। প্রতিটি ধাপে নতুন জনগোষ্ঠী সংক্রমিত হতে থাকবে এবং সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এ জন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, লকডাউন হলো করোনা মোকাবেলার সবচেয়ে বড় মহৌষধ। কিন্তু বাংলাদেশ যেন উল্টো পথে হাঁটছে। আমরা ২৬ মার্চ থেকে যে লকডাউন দিয়েছিলাম, তা এখন নেই বললেই চলে। রাস্তাঘাটে এখন তীব্র যানজট, যা করোনার জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সরকার সঠিক সময়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যথাযথ পথ অনুসরণ করায় এখনও করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশের লাগামের বাইরে চলে যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু, সুস্থ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জনের পথে আছে। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১১শ’ ৬২ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী মারাও গেছে, যা হচ্ছে ১৯ জন। এ সময় সব কিছু খুলে রাখার ফলে আমরা দীর্ঘমেয়াদী একাধিক সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ জন্যই ঈদের আগে চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার। কোনভাবেই সাধারণ মানুষ যাতে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চলাচল করতে না পারে সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটির সময়ে সড়কপথে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল থাকবে বন্ধ। শুধু মহাসড়কে মালবাহী ও জরুরী সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ব্যতীত অন্যান্য যানবাহন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×