ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুরুত্ব পাচ্ছে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাত

প্রকাশিত: ২১:১৭, ২৯ এপ্রিল ২০২০

গুরুত্ব পাচ্ছে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাত

রহিম শেখ ॥ করোনাভাইরাসে টালমাটাল অর্থনীতি। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি এগিয়ে আসছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও। করোনা আতঙ্কের মধ্যেও পরিচালনা পরিষদের (বোর্ড) সভার জন্য উদ্যোগী হয়েছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। এ সপ্তাহেই ব্যাংকগুলো তাদের বোর্ড সভার আয়োজন করবে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গত সপ্তাহ এবং চলতি সপ্তাহে বোর্ড সভা করেছে সোনালী ব্যাংক। আজ বোর্ড সভা করবে জনতা ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংক করবে আগামী বৃহস্পতিবার। যদিও ইতোমধ্যে রূপালী ব্যাংক গত ১ ও ১৬ এপ্রিল বোর্ডের অনুমতি স্বাপেক্ষে ঋণ গ্রহিতাদের বড় ধরনের ছাড় এবং ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণের কিস্তি কর্তনের ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় দিয়েছে। আর এ সপ্তাহেই বোর্ড সভার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব আরেক ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংক। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বর্তমান দুর্যোগে বেশি বিপাকে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। তাই আমরা এ বছর কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। সূত্র মতে, করোনার দুর্যোগের সময় ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন। দীর্ঘদিন বোর্ড সভা করেননি। চেয়ে থেকেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কি সার্কুলার দিচ্ছে তারদিকে। টাকা দেয়া-নেয়ার দাফতরিক কাজ বাদে কোন কার্যক্রমই ছিল না ব্যাংকগুলোর। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণেই সময় কাটিয়েছেন তারা। এতে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর তাই অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এবার গুরুত্ব দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। যদিও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ও শুধু সার্কুলারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছেন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে দিচ্ছেন না কোন দিক নির্দেশনা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোর ভূমিকায় অনেক ব্যবসায়ীও হতাশ ও ক্ষুব্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ব্যাংকখাত। বর্তমান দুর্যোগে অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে তেমন কর্মসূচী নেই। তবে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ব্যাংকগুলোকেই করতে হবে। তাই তাদের আরও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বিদ্যমান অচলাবস্থা ও করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতাদের টেনে তোলার চিন্তা করতে হবে। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই তাদের আরও সচল হতে হবে। তবে দৈনিক ইনকিলাবে সম্প্রতি ‘দীর্ঘদিন নেই বোর্ডসভা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর সবাই নড়েচড়ে বসে। আর এরই ধারাবাহিকতায় এ সপ্তাহেই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো বোর্ড সভার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। যদি এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে দেশের বেসরকারী ব্যাংকগুলো। তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিয়ে ব্যাংকখাতকে গতিশীল রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশের অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংকই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোর্ডের সঙ্গে তাদের করণীয় ঠিক করছে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে অর্থনীতির চাকা একবারেই বন্ধ। ঋণের চাহিদা ও নতুন ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই ঠিক। কিন্তু সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার সবই বাস্তবায়ন করবে ব্যাংকগুলো। যা এই দুর্যোগের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে অনেক কাজ করতে হবে। এসব কাজ বাস্তবায়নে আরও পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির দরকার। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আরও সচল হতে হবে বলে উল্লেখ করেন এই অর্থনৈতিক বিশ্লেষক। জনতা ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বোর্ড সভা করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। অগ্রনী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বোর্ড সভা হয়নি। তবে কাজ বন্ধ নেই। এমনকি জরুরী কোন বিষয় হলে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে এ সপ্তাহেই ভার্চুয়াল বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। করোনার সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আপাতত আগামী ৫ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। জরুরী সেবা ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বিদ্যমান অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তাই ব্যাংকগুলোকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং বর্তমান স্থবিরতা দূর করতে বোর্ড সভাসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
×