ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কারা ব্যারাক লকডাউন

আরও ১০ কারারক্ষী ও এক বন্দী করোনায় আক্রান্ত

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২৮ এপ্রিল ২০২০

আরও ১০ কারারক্ষী ও এক বন্দী করোনায় আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আরও ১০ জন কারারক্ষী ও একজন কারাবন্দী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত সবাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের বন্দী ও কর্মরত স্টাফ। আক্রান্ত কারারক্ষীরা পুরান ঢাকায় কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ৪র্থ ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় স্থাপিত কারা ব্যারাক থেকে রাজধানীর বিশেষায়িত সকল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দীর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করতেন। করোনা পজিটিভ আসায় কারা কর্তৃপক্ষ এসব কারারক্ষীর আবাসস্থল লকডাউন করে দিয়েছে। একইসঙ্গে করোনার মধ্যে যেন এডিস মশার বিস্তার না হয় ও কোন বন্দীই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত না হন সেজন্য প্রয়োজনীয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে কারা অধিদফতর। জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ এসব কারারক্ষী ও বন্দীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২ মামলায় ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি যিনি গত ৩০ মার্চ থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন। এছাড়া কারারক্ষীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ রাজধানীর বিশেষায়িত বিভিন্ন হাসপাতালে বন্দীর নিরাপত্তায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন। এ নিয়ে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১১ কারারক্ষী ও বন্দী করোনায় আক্রান্ত হলো। আক্রান্তদের মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও জিনজিরা ২০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নতুন করোনায় আক্রান্তরা হচ্ছেন, কারারক্ষী জামান হোসেন, সাইদুর রহমান, মনোয়ার হোসেন, মেহেদি হাসান, রাসেল মিয়া, নবীন কারারক্ষী ফজর ফকির, আরিফ হোসেন আকাশ, হামিদুর রহমান, ইমরান হোসেন, আল আমিন। এছাড়া করোনা আক্রান্ত একমাত্র আসামি জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে গত ২১ এপ্রিল মোঃ ইয়াসিন মিয়া নামে প্রথমবারের মতো এক কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হন। বর্তমানে তিনি জিনজিরায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট করোনা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এদিকে নতুন করে এসব কারারক্ষী ও বন্দীর করোনায় আক্রান্তের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে দেশের সকল কারাগারকে বন্দী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে করোনার মধ্যেও ডেঙ্গুসহ সকল প্রকার মশাবাহিত রোগ থেকে বন্দীদের সুরক্ষা প্রদান করতে গত বছরের চেয়ে আরো বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও কারা অধিদফতর বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলে জানান তিনি। কারাসূত্র জানায়, আক্রান্ত কারারক্ষীদের গায়ে প্রাথমিকভাবে সামান্য জ্বর আসার পর তা গুরুত্ব না দিয়ে বন্দীর নিরাপত্তায় সাধারণ ডিউটি পালন করছিলেন। পরে নতুন করে আবার জ্বর আসায় তাদের নমুনা সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। এরপর করেনা পজিটিভ ধরা পড়ে। আক্রান্ত ঘোষণার পরই এসব কারারক্ষীর সঙ্গে দায়িত্বরত সকল কারারক্ষীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। সাহচর্যে থাকা ও রুমমেট সকল কারারক্ষীকে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে কারা অধিদফতর কর্তৃক তৈরিকৃত আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এমন সন্দেহজনক এসব কারারক্ষীকে পরবর্তী ১৪ দিন বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে। একইসঙ্গে তাদের কারা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ডাক্তার কর্তৃক নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে এসব কারারক্ষী করোনা আক্রান্ত কি না তা জানতে তাদের শরীর থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গেছে। কারা সূত্র জানায়, আক্রান্ত প্রায় সকল কারারক্ষী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আটক বন্দীর চিকিৎসায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। জানা গেছে, গত দেড় মাস আগে থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জ কর্তৃপক্ষ সেখানে আটক বন্দীদের করোনামুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। এরই অংশ হিসেবে পুরান ঢাকায় অবস্থারনত কারারক্ষীদের মধ্য থেকে জন্য কোন কারারক্ষী কেরানীগঞ্জ কারাগারে দায়িত্ব পালন না করেন তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর নির্দেশ দেয়। ফলে এসব কারারক্ষী বাইরের হাসপাতালে আটক বন্দীদের নিরাপত্তায় ডিউটি পালন করতে থাকেন। তাই এখন পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের কোন বন্দী বা কারারক্ষীকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি। তাই আক্রান্ত সকল কারারক্ষীই পুরান ঢাকার ব্যারাকে অবস্থানকারী। এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের জেলার মাহবুবুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, করোনায় আক্রান্ত সকল কারারক্ষী ও বন্দীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদানের জন্য ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও জিনজিরা করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত কারারক্ষীদের সঙ্গে একই কক্ষে বসবাসরত সকল কারারক্ষীদের আমরা হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করছি।
×