ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশে হতাশ বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশে হতাশ বিনিয়োগকারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী রয়েছে তারা মূলত লভ্যাংশ পেতে শেয়ার কিনে থাকেন। ক্যাপিটাল গেইনের চাইতে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে তারা ডিভিডেন্ড গেইনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এসব বিনিয়োগকারী এবার হতাশ করেছে বীমা খাতের কোম্পানি প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। মূলত একটি কোম্পানির লভ্যাংশ খারাপ দেয়াতেই পুরো ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কোম্পানিকে ঘিরে নেতিবাচক প্রবণতা বেড়েছে। কারণ প্রথমবারের মতো কোম্পানিটির নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা হতাশ করেছে পুরো শেয়ারবাজারকে। সম্প্রতি রবিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় নো ডিভিডেন্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লভ্যাংশ না দিলেও কোম্পানিটি ঠিকই ব্যবসা করেছে। কোন লভ্যাংশ না দিলেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ইপিএস হয়েছে ০.৪৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.১২ টাকা। কোম্পানিটি মুনাফা থাকা সত্ত্বেও নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে হতাশা বেড়েছে। নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় প্রথম দিনে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ারটি কমেছে ৫ টাকা ৯০ পয়সা। মঙ্গলবারও কোম্পানিটির দর কমেছে ৩.৯৪ শতাংশ। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আর যদি প্রতারণা না করে তা হলে নো ডিভিডেন্ডের কারণ কি? যেখানে কোম্পানি লাভে রয়েছে সেখানে ডিভিডেন্ড না দেয়ার কোন কারণ দেখা যাচ্ছে না। নামমাত্রা লাভ করে ও কোম্পানিগুলো বছরে ডিভিডেন্ড দেয়। এদিকে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ভাল মৌলভিত্তি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও নো ডিভিডেন্ড ঘোঘণা করায় সবার মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন সরকারসহ নীতি নির্ধারকীমহল যেখানে পুঁজিবাজার ভাল করার জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে, সেখানে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মুনাফা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। এ কোম্পানির বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষ কমিটি গঠনের মাঝে তদন্ত করা দরকার। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৩১ টাকায়। ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। আর লভ্যাংশ বিতরণে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনে কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ মার্চ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, পুঁজিবাজারের এ দুঃসময়ে প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের মতো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। বিনিয়োগকারীরা স্মরণকালের ধস কাটিয়ে উঠতে না উঠতে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণায় মেতে উঠছে। যেখানে সরকার পুঁজিবাজারের জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে সেখানে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স নো ডিভিডেন্ড দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। এটা বাজারের জন্য খারাপ দিক। বিনিয়োগকারীরা অনেক আশা নিয়ে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। নো ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সে আশা নিরাশ হয়ে যায়। পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ০.৪৩ পয়সা ইপিএস সত্ত্বেও নো ডিভিডেন্ড পরিচালকদের জঘন্যতম কারসাজি ছাড়া আর কিছু না। এমন হীন মানসিকতা এবং হীন কর্মকাণ্ডের জন্য ডিসেম্বর ক্লোজিং সকল শেয়ারই কম বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ডিভিডেন্ড প্রদানে সঠিক কোন নিয়মনীতি না থাকায় পরিচালকরা নিজেদের হীন স্বার্থে ইচ্ছামতো ন্যূনতম ডিভিডেন্ড বা নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এসব অনিয়ম দেখেও বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রাইম ইন্স্যুরেন্স নো ডিভিডেন্ড দিয়ে শেয়ারটাকে জেডে স্থানান্তর পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করে মালিকদের কূটকৌশলে লাভবান হওয়ার নোংরা প্রচেষ্টার অংশ মাত্র।
×