ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫ কিমি সড়ক সংস্কার তিন বছরেও শেষ হয়নি

দুর্ভোগ আর কতদিন!

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  দুর্ভোগ আর কতদিন!

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সামান্য বৃষ্টিতে কাদা, মাঝারি বর্ষণে জলমগ্ন আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলার রাজ্য- এই হলো মহানগরীর পোর্ট কানেক্টিং সড়ক। বন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। কিন্তু মাত্র ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হচ্ছে না তিন বছরেও। দীর্ঘসূত্রতার জন্য চলছে সিটি কর্পোরেশন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার একে অপরকে দোষারোপ। খানাখন্দকে ভরা সড়কটি যানবাহন চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে আছে। এতে এলাকার জনসাধারণের দুর্ভোগ চরমে। ব্যাহত হচ্ছে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি। এ দুর্ভোগ কবে শেষ হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর অজানা। চট্টগ্রাম মহানগরীর অলঙ্কার থেকে নিমতলী পর্যন্ত সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে হাজার হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা অচল হয়ে আছে। নেই কার্পেটিং, আছে বড় বড় গর্ত। সাংঘাতিক উঁচু-নিচু এ সড়কে ভারি যানবাহনগুলো ভারসাম্য রাখতে না পেরে দুর্ঘটনায়ও পতিত হচ্ছে। লরি থেকে পড়া কন্টেনার চাপায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ সড়ক যানবাহন চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় ট্রাক, কাভার্ডভ্যানগুলো অলঙ্কার মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ডি.টি রোডসহ বিভিন্ন বিকল্প সড়ক খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে প্রায় ৭০ লাখ জনঅধ্যুষিত বন্দরনগরী প্রতিদিনই পড়ছে ভয়াবহ যানজটের কবলে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ডি.টি রোড সম্প্রসারিত হওয়ার পর বছর খানেকের জন্য স্বস্তি ছিল যাত্রীদের। কিন্তু পোর্ট কানেক্টিং সড়ক অচল হয়ে থাকায় সড়কটি সম্প্রসারণের সুফল মিলছে না। দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারের ওপরেও থাকে জট। এটি নিত্যদিনের চিত্র। পোর্ট কানেকটিং সড়কে অচলাবস্থার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ আগ্রাবাদ থেকে বারিকবিল্ডিং পর্যন্ত শেখ মুজিব সড়কেও। বন্দরের ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও লরির চলাচলের বিরূপ প্রভাব পড়েছে পুরো মহানগরীতে। আমদানি ও রফতানির পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে সুবিধাজনক সড়ক পোর্ট কানেক্টিং রোড। নিচু সড়কটিকে উঁচু করার কার্যক্রমে তুলে ফেলা হয়েছে পুরনো কার্পেটিং। খোঁড়াখুঁড়ি করে কিছু অংশে ফেলা হয়েছে মাটি। কিন্তু প্রায় তিন বছরেও কাজের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয় বলে অভিযোগ ওই এলাকার বসবাসকারীদের। বিশেষ করে বড়পুল থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে, একান্ত বাধ্য না হলে ওই পথে যাওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ওই সড়কে যেন মরুভূমির ধুলিঝড়। সিটি গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের আওতায় জাপানী সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে পোর্ট কানেকটিং সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ২০১৭ সালে ২০ নবেম্বর এই কাজের উদ্বোধন হয়। প্রায় ১০০ কোটি টাকায় নিমতলা থেকে অলংকার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতিতে হতাশ এলাকাবাসী। সড়কের দুরবস্থার কারণে কর্মস্থলে যেতে চরম দুর্ভোগ, বেশ ক্ষুব্ধ যানবাহন চালকরা। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ কাজের যে হাল, তাতে করে আরও দু’বছরেও শেষ হবে কিনা সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের নামকরণ করা হয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়ক। সড়কটির প্রস্থ ১২০ ফুট। দুপাশে প্রশস্ত আরসিসি ড্রেন ও ফুটপাথ। মাঝে থাকছে চওড়া মিডিয়ান ও এলইডি আলোকায়নের ব্যবস্থা। কিন্তু কাজের যে হাল, তাতে বর্তমান মেয়রের মেয়াদে শেষ হওয়ার আশা নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, অলঙ্কার থেকে বন্দরের দিকে কিছুদূর যেতেই সড়কের দুরবস্থা শুরু। অবস্থা এতই খারাপ যে, এই যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন নগরীর রাস্তা। ছোট-বড় অনেক গর্ত। সড়কের অধিকাংশই ছাল-চামড়া যাওয়া। কার্পেটিং না থাকায় ধুলাবালি ঠেকাতে সাধারণ মানুষের প্রস্তুতিও লক্ষণীয়। পথচারী ও যাত্রীদের চলাচল করতে হয় নাকে রুমাল চেপে বা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করে। এই দুর্ভোগের শেষ কোথায় সেই প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের। মহানগরীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, যা পোর্ট কানেকটিং রোডের সঙ্গে সংযুক্ত। ২ দশমিক ৩৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কটি আগ্রাবাদ বাদামতলী থেকে বড়পোল পর্যন্ত। এর জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পটিও বাস্তবায়িত হচ্ছে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডেও দুর্ভোগ নিত্যদিন। পুরনো সড়কের বেপারি পাড়া থেকে ছোটপুল পর্যন্ত অনেক নিচু হওয়ায় সড়কটি আরও উঁচু করতে হচ্ছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমেও যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন হবে, এমনই আশাবাদ বাসিন্দাদের। তবে এ সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও মোটামুটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। পোর্ট কানেক্টিং সড়কটি পড়েছে সংসদ সদস্য ডাঃ আফসারুল আমিন এবং এমএ লতিফের নির্বাচনী এলাকায়। সড়কের এ দুরবস্থার জন্য ওখানকার বাসিন্দাদের সমালোচনার মুখে ওই দুই এমপি। এতে তারা পড়েছেন বিব্রতকর অবস্থায়। তাদের বক্তব্য, নগরীর সড়ক নির্মাণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু এ বিষয়টি অনেকেই অবগত নন। মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের একটি সড়কের কাজ শেষ হতে বছরের পর বছর লেগে যাওয়ার কারণ সিটি কর্পোরেশন এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার সমন্বয়হীনতা। তিন বছরে পদ্মা সেতুর কাজ যেটুকু এগিয়েছে, সামান্য একটি সড়কের কাজ ততটুকু হয়নি, যা দুঃখজনক। চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র জানায়, এর মধ্যেই সড়কের কিছু অংশ যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। কার্পেটিং হয়েছে একপাশে। দীর্ঘসূত্রতার জন্য দাতা সংস্থা জাইকা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছে কর্পোরেশন। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির পরও কাজ শেষ না। বর্ষার কারণে কাজ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হয়নি। একই অজুহাত বারবার। কিন্তু বর্ষা যায়, শীত আসে, সেই শীতও চলে যায়। অথচ পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজ শেষ হয় না। এর জন্য আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে, এ প্রশ্ন নগরবাসীর।
×