ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো চরম অর্থ সঙ্কটে

প্রকাশিত: ১০:৪২, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো চরম অর্থ সঙ্কটে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ চরম অর্থ সঙ্কটে রয়েছে খুলনার সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। মিলগুলোতে পাট নেই। পাট কেনার টাকাও নেই। দেনার পরিমাণ বাড়ছে। এই মিলগুলোর কাছে শুধুমাত্র শ্রমিকদের মজুরি ও পাট সরবরাহকারী ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা রয়েছে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য খাতেও প্রচুর টাকা বকেয়া পড়েছে। এদিকে পাট সঙ্কটের কারণে মিলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পাটজাত পণ্য তৈরি হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্যের মজুদও বাড়ছে। প্রায় ১৮৯ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) আওতায় খুলনার ৭টি পাটকল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ক্রিসেন্ট জুট মিল, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস, স্টার জুট মিলস, ইস্টার্ন জুট মিল, আলিম জুট মিলস, দৌলতপুর ও খালিশপুর জুট মিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ সকল জুট মিলে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বদলি শ্রমিক রয়েছে আরও প্রায় ৬ হাজার। তবে বদলি শ্রমিকদের বর্তমানে কাজ নেই। এই সাতটি মিলগুলের শ্রমিকদের ৮ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। মিলে পাট ব্যবসায়ীদের পাওনা রয়েছে প্রায় ১৪৯ কোটি টাকা। পাশাপাশি মিলগুলোর অবিক্রীত বিভিন্ন প্রকারের পাটপণ্য রয়েছে প্রায় ১৮৯ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, মৌসুমে প্রয়োজনীয় পাট কিনতে না পারায় পরবর্তীতে চড়া দামে পাট কিনে মিলের উৎপাদন সচল রাখতে হয়। এ জন্য উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। বর্তমানে প্রতি মেট্রিকটন পণ্যের উৎপাদন খরচ হয় গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। উৎপাদি পণ্য বিক্রি হয় প্রতি মেট্রিকটন ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা দরে। এই মুহূর্তে মিলগুলোতে পাট নেই। প্রতিমণ পাট কেনার জন্য ধার্য আছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। অথচ বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ পাটের দাম ২ হাজার ২০০ টাকার উর্ধে। এদিকে নতুন মজুরি কমিশন অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর প্রভাব পণ্য উৎপাদনের ওপর পড়বে। ফলে টন প্রতি উৎপাদন খরচও আনুপাতিক হারে বেড়ে যাবে। প্লাটিনাম জুবিলী জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ গোলাম রব্বানী জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট আেেছ তাতে ১৫-২০ দিন চলতে পারে। শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। অবিক্রীত পাট পণ্য রয়েছে ৪৫ কোটি টাকার। ক্রিসেন্ট জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ নজরুল ইসলাম খান জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে মাস দুয়েক চলতে পারে। মিলের উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পণ্য উৎপাদন করে উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। মিলের কাছে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ৭ কোটি টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। অবিক্রীত পাট পণ্য রয়েছে ৫০ কোটি টাকা প্রায়। ইস্টার্ন জুটমিলের প্রকল্প প্রধান ড. জুলফিকার জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ৪৬ দেড় মাসের মতো চলতে পারে। মিলের কাছে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীরা পাবেন ১৫ কোটি টাকা। অবিক্রীত পাট পণ্য রয়েছে ১৫ কোটি টাকার। আলিম জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ৫০ দিন চলতে পারে। মিলের শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৬ কোটি টাকা। অবিক্রীত পাট পণ্য আছে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার মতো। দৌলতপুর জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ মুরাদ হোসেন জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে ৪ মাস চলতে পারে। শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ৩ কোটি টাকা। অবিক্রীত পাট পণ্য রয়েছে ৬ কোটি টাকার। খালিশপুর জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ খলিলুর রহমান জানান, বর্তমানে মিলে যে পরিমাণে পাট রয়েছে তাতে আগামী ৫ মাস চালিয়ে নেয়া সম্ভব। এখানে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ২১ কোটি টাকা। অবিক্রীত পাট পণ্য রয়েছে ৫৫ কোটি টাকার মতো। স্টার জুটমিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ রইচ উদ্দীন আহমেদ জানান, বর্তমানে মিলে তীব্র পাট সঙ্কট রয়েছে। যে পরিমাণে পাট আছে তাতে দু’এক দিন চলতে পারে। তারপর আবার কিনতে হবে। পণ্য যা বিক্রি হচ্ছে সেই টাকা দিয়ে পাট কিনে মিলের উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন মিলের শ্রমিকদের মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। পাট ব্যবসায়ীদের কাছে মিলের দেনা রয়েছে ২৫ কোটি টাকা। অবিক্রীত পাট পণ্য রয়েছে ৮ কোটি টাকার মতো। শ্রমিকদের নতুন মজুরি কমিশন অনুযায়ী গত সপ্তাহে পে- সিøপ দেয়া হলেও তারা এখনও মজুরি পাননি। আরও একটি সপ্তাহ শেষ হতে চলেছে। এ ব্যাপারে বিজেএমসি’র আঞ্চলিক লিয়াজোঁ অফিসার মোঃ বনিজ উদ্দীন মিয়া জানান, সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ আসেনি। অর্থ পেলে সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে পৌঁছে যাবে। পরে শ্রমিকরা নিজ নিজ ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবে।
×