ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যিকভাবে লোকসান বাড়ছে লবণ শিল্পের

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২২ জানুয়ারি ২০২০

বাণিজ্যিকভাবে লোকসান বাড়ছে লবণ শিল্পের

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আমদানি নীতি আদেশের সুযোগের অপব্যবহার করে ইভাপোরেটেড সাদৃশ্য লবণ বিদেশ থেকে আসছে এবং তা বাজারজাত হচ্ছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত। এরপরও প্রতিনিয়ত আসছে। আর এর ফলে দেশে উৎপাদিত লবণ শিল্প বাণিজ্যিকভাবে অবিক্রিত থেকে লোকসান গুনছে। এ ব্যাপারে দেশের লবণ উৎপাদন অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম মহেশখালীতে ইতোমধ্যে প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে মানববন্ধন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পের জন্য বাণিজ্যিকভাবে সোডিয়াম সালফেট আমদানির যে অনুমতি রয়েছে তার অপব্যবহার চলছে মারাত্মকভাবে। ব্যবসায়ীদের একটি দুষ্টুচক্র স্বল্প শুল্কের সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে নিয়ে আসছে বাণিজ্যিক প্রয়োজন দেখিয়ে। অথচ, এর বড় একটি অংশ খোলাবাজারে প্যাকেটজাত হয়ে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, আমদানি নীতি আদেশের অনুচ্ছেদ ২৬-এর উপ অনুচ্ছেদ ৫৮-এর আওতায় স্বীকৃত শিল প্রতিষ্ঠান সোডিয়াম সালফেট আমদানি করার অধিকার রাখে। কিন্তু এ অনুচ্ছেদের সুযোগ নিয়ে অবৈধ আমদানিকারক চক্র মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে এলসি দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশে উৎপাদিত লবণ অবিক্রিত থাকছে। লবণ মাঠ মাঠিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রান্তিক চাষীরা প্রতিনিয়ত আগ্রহ হারাচ্ছে। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-২০১৮-এর ৫ম অধ্যায়ের ‘শিল্প খাতে আমদানির সাধারণ বিধানবলী’ শিরোনামের অনুচ্ছেদ ২৪-এর উপ অনুচ্ছেদ ৯-এর বিধান অনুযায়ী বন্ডেড ওয়্যার হাউস পরিচালিত তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে শর্তযুক্ত কিছু পণ্য আমদানি করতে পারে, যার মধ্যে লবণও অন্যতম। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেদারছে আমদানি হয়ে আসছে ইভাপোরেটেড সাদৃশ্য সোডিয়াম সালফেট। এ ব্যাপারে লবণ মিল মালিকদের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে যে আবেদন জানিয়েছে তাতে বলা হয়েছে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা যাতে সোডিয়াম সালফেট (স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) আমদানি করতে না পারে সে বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের প্রতি নির্দেশনা জারি করতে হবে। সোডিয়াম সালফেট, কস্টিক সোডা উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন রফতানিমুখী শিল্পের জন্য এ জাতীয় লবণ আমদানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এদিকে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চাহিদা অনুযায়ী মনুষ্য খাদ্য খাতে ১২ লাখ টন ও শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য ১২ লাখ টন এবং কস্টিক সোডা উৎপাদনের জন্য ৪ লাখ টন মিলে সর্বমোট ২৮ লাখ টন বিভিন্ন ধরনের লবণের চাহিদা রয়েছে। তবে বিসিক লবণের বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করার জের হিসেবে ২০১৮-২০১৯ সালে প্রায় ২০ লাখ টন যে ফিনিশড লবণ মিসডিক্লারেশনের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে সে প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশীয় চাষীদের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ লবণ অবিক্রিত অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাষীদের উৎপাদিত অপরিশোধিত লবণ পরিশোধনের মাধ্যমে আয়োডিন মিশ্রিত হয়ে তা হয় ভোজ্য লবণ। আয়োডিন মিশ্রণ ছাড়া থাকলে তা বিভিন্ন শিল্পের জন্য ব্যবহৃত লবণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশীয় লবণ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে লবণ শিল্প এবং লবণ চাষীদের রক্ষায় লবণ আমদানিতে শুল্কহার সমভাবে ধার্য করা হলে পরিস্থিতিতে সুফল বয়ে আসবে।
×