ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

ব্যাংক খাতের ‘নয়-ছয়’

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১২ জানুয়ারি ২০২০

ব্যাংক খাতের ‘নয়-ছয়’

ব্যাংক খাতের ‘নয়-ছয়’ নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে বহুদিন থেকে। আমানতের সুদের হার ‘ছয়’ আর ঋণের সুদ ‘নয়’ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য বহুদিন থেকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি ‘নরম’ তাগাদা ছিল। আর এ তাগাদা থেকেই বহুল আলোচিত ‘নয়-ছয়’-এর যাত্রা। তবে এই বছরের এপ্রিল মাস থেকে ব্যাংক আমানতে ৬ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন শুরু হবে। শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সকল প্রকার ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ এবং আমানতে ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হবে। গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। অর্থবাজারে প্রায় ৬০টি ব্যাংক ও ৩০টি অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা কম দামে অর্থ কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। ব্যাংকের ভাষায়, অর্থ ক্রয়কে ‘আমানত সংগ্রহ’ ও অর্থ বিক্রিকে ‘ঋণ প্রদান’ বলে। তাহলে ব্যাংক যদি প্রজ্ঞাপিত হয় ৬ টাকা দরে আমানত নিতে হবে এবং ৯ টাকা দরে ঋণ প্রদান করতে হবে, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে একটু চিন্তা করা যাক। ধরুন সব ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করার ঘোষণা দিল ৬ শতাংশ সুদে। বাজার পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? কেউ আর ব্যাংকে টাকা রাখার চিন্তা করবে না। বেশি মুনাফা বা সুদের আশায় আমানতকারী বা খুচরা অর্থ বিক্রেতারা বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করবেন। আমাদের দেশে ব্যাংকের বাইরে বেশি মুনাফার বিকল্প বিনিয়োগ উৎস কী? বিকল্প উৎস হলো সঞ্চয়পত্র ক্রয় (লভ্যাংশ গড়ে ১১.৫০%), শেয়ারবাজার, সমবায় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণাধীন মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠান, দাদন ব্যবসা। অন্যদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে লক্ষ্যের চেয়ে রফতানি আয় কমেছে ১৬১ কোটি ইউএস ডলার। এ সময়ে লক্ষ্য ছিল প্রায় এক হাজার ৪৩৩ কোটি ডলার। বিপরীতে আয় হয়েছে এক হাজার ২৭২ কোটি ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম। এ জন্য ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন হলে এ খাতে স্বস্তি আসবে বলে জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে তা ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুনে ঋণপ্রবাহ ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ, মার্চে এ প্রবাহ ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। জানা গেছে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যেখানে ১২, ১৩ কিংবা ১৫, ১৬ শতংশ সুদহার নিয়েছে, সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুদহার অনেক আগে থেকেই এক অঙ্কের। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০১৮ সালে বিশ্বের তৃতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদহার গড়ে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময়ে সুইজারল্যান্ডে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, ইতালিতে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, চীনে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, কুয়েতে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভারতে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার।
×