ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের ভাষা সৈনিক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখন রাজাকার

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বরিশালের ভাষা সৈনিক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এখন রাজাকার

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ভাষা সৈনিক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নগরীর আগরপুর রোডের বাসিন্দা প্রয়াত মিহির লাল দত্তের নামও এসেছে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায়। বরিশাল বিভাগের তালিকায় ২২নং পাতায় ৯৪নং এ মুক্তিযোদ্ধা মিহির লাল দত্তের নাম উল্লেখ করা হয়েছে রাজাকারের তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সদ্যপ্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় মিহির দত্তের পিতার নাম জীতেন্দ্র দত্ত উল্লেখ করা হয়েছে। রাজাকারের তালিকায় পিতার নাম আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মিহির লাল দত্তের পুত্র সাংবাদিক শুভব্রত দত্ত বলেন, আমার বাবা একজন ভাষা সৈনিক এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-২৮৯ ২১/০৫/২০০৫ এবং মুক্তিবার্তা নং- ০৬০১০১১০৬০। এছাড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত সাময়িক সনদ নং-ম ২৮৬১৬। মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের দুইজন শহীদও হয়েছেন। আমার বাবা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তার নাম কীভাবে রাজাকারের তালিকায় এসেছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রকৃত রাজাকারদের নাম না আসলেও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এসেছে তালিকায়। তিনি আরও বলেন, যারা বর্তমান সরকারকে বির্তকে ফেলার জন্য এই আপত্তিকর তালিকা তৈরি করেছেন আমি তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী একইদিনে বরিশালের প্রবীণ এ্যাডভোকেট জীতেন্দ্র লাল দত্ত, তার পুত্র মিহির লাল দত্ত ও সুবীর দত্ত পান্থকে ধরে নিয়ে নগরীর সিঅ্যান্ড রোডের পুলে নিয়ে গুলি করে। ওইসময় জীতেন্দ্র লাল দত্ত ও সুবীর দত্ত প্রাণ হারান। মিহির লাল দত্তকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মৃতভেবে খালে ফেলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি (মিহির) আলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ক্যাপ্টেন (অব.) ডাঃ সিরাজুল ইসলাম তার অপারেশন করে সুস্থ্য করে তোলেন। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে আইন ব্যবসা করে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি মারা যান। মিহির লাল দত্ত ছিলেন কবি, নাট্যকার, গীতিকার, ছোট গল্পকার, ভাষাবিদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। অপরদিকে তৎকালীন ইস্টার্ন ব্যাংক অফ পাকিস্তানে কর্মরত নগরীর কাশীপুরের জগদীশ মুখার্জীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করে এবং বিচারের জন্য তাকে যশোর কারাগারে পাঠানো হয়। দেশ স্বাধীনের পর তিনি যশোর কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। তাকেও রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূত্রমতে, মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পর স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার। প্রথম দফায় গত রবিবার ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ তালিকা প্রকাশের পর থেকেই দেশব্যাপী শুরু হয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, তালিকাভুক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম এ তালিকায় উঠে এসেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হিসেবে পরিচিত অনেকের নামও তালিকায় পাওয়া গেছে। প্রকাশিত তালিকায় কয়েকটি নাম আসায় এলাকার সহযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার প্রায় এক হাজার রাজাকারের নাম রয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করে দেশব্যাপী আলোচিত বাসদ’র বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী (বরিশালের তালিকা : পৃষ্ঠা নম্বর ২০, ক্রমিক নম্বর-৬৩) ও তার ঠাকুর মা (দাদী) শহীদজায়া প্রয়াত ঊষা রাণী চক্রবর্তীর (রাজাকারের বরিশালের তালিকা : পৃষ্ঠা নম্বর ১৮, ক্রমিক নম্বর-৪৫) নাম রাজাকারের তালিকায় এসেছে। বরিশাল সদর উপজেলার ১০৭ জন রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করার দায়ে পাকিস্তনী হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত সুধীর চক্রবর্তীর স্ত্রী প্রয়াত ঊষা রানী চক্রবর্তীর নাম এবং তার পুত্র মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তীর নাম রয়েছে তালিকায়। মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও শহীদ জায়া ঠাকুরমার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করার পুরস্কার পেলাম আজ। ধন্যবাদ আওয়ামী লীগকে। প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকায় আমার বাবা এবং ঠাকুরমার নাম প্রকাশিত হয়েছে। আমার বাবা এ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী একজন গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা, যার ক্রমিক নং ১১২, পৃষ্টা ৪১১৩। তিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে থাকেন। আজ রাজাকারের তালিকায় তিনি ৬৩ নাম্বার রাজাকার। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করায় আমার ঠাকুরদাদা এ্যাডভোকেট সুধীর কুমার চক্রবর্ত্তীকে পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তিনিও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত। তার সহধর্মিণী আমার ঠাকুরমা ঊষা রানী চক্রবর্ত্তীকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য রাজনীতি করার খেসারত দিতে হচ্ছে আমার পরিবারকে। বরিশাল মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোঃ মোখলেসুর রহমান বলেন, প্রকাশিত তালিকা ও বরিশাল থেকে পাঠানো রাজাকারের তালিকায় ব্যাপক গড়মিল রয়েছে। অপরদিকে বরিশাল-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাহে আলমের পিতা ডাঃ সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদারের নাম রাজাকারের তালিকায় রয়েছে (বরিশালের তালিকাঃ পৃষ্ঠা নম্বর ৬২, ক্রমিক নম্বর-২৮)। বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সালেহ মঞ্জু মোল্লা জানান, প্রকাশিত তালিকায় ডাঃ সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদার লেখা থাকলেও সংসদ সদস্যর ভোটার আইডি কার্ডে শুধু সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদার লেখা রয়েছে। তবে ডাঃ সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদারের বাবার নাম আবুল ওহাব তালুকদার ঠিকই আছে। উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজিবুল হক জানান, সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদারের বানারীপাড়া সদরের উত্তরপাড়ে একটি ওষুধের ফার্মেসী ছিলো। যে কারণে স্থানীয়রা তাকে ডাক্তার নামেই জানতো। আর ডাঃ সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদারের বাবার নাম আবুল ওহাব তালুকদার এটাও ঠিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালে ডাঃ সাইয়েদ উদ্দিন তালুকদার স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়েছেন। রাজাকারের তালিকায় তার নাম আসায় তা প্রতিষ্ঠিত হলো। তবে বানারীপাড়ার রাজাকারের সংগঠকদের নাম তালিকায় আসেনি বলেও মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম সাংবাদিকদের বলেন, কোন সাইয়েদ উদ্দিন তা আমি জানি না। আমার বাবা কোনো রাজাকার ছিলেন না। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছি। সেই থেকে ছাত্রলীগ ও পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার পরিবারের সবাই এই দলের সাথে সম্পৃক্ত। আমি যতটুকু জানি, বাবা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো কাজের সাথে জড়িত ছিলেন না। অপরদিকে তালিকায় দেখা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত আব্দুর রহমান, সৈয়দ হাতেম আলীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। যার সত্যতা নিশ্চিত করে বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এমজি কবির ভুলু জানান, তালিকাটি আরও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা উচিত ছিল। তালিকায় অনেকেই রয়েছেন যারা পিস কমিটিতে ছিলেন। স্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ থাকলে তরুণ প্রজন্মের তা বুঝতে আরও সহজ হতো। তালিকায় ছয় নারীর নাম ॥ প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় বরিশাল বিভাগের ছয় নারীর নাম পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বরিশাল নগরীর ঊষা রানী চক্রবর্তী (সিরিয়াল-৪৫), নগরীর ঝাউতলা এলাকার কনক প্রভা মজুমদার (সিরিয়াল-৩৭), উজিরপুরের বিজয়া বালা দাস (সিরিয়াল-৩৫), আভা রানী দাস (সিরিয়াল-২৭), পারুল বালা কর্মকার (সিরিয়াল-৩৩) ও বাবুগঞ্জের দেহেরগতি এলাকার রাবিয়া বেগম (সিরিয়াল-১৫১)। এরমধ্যে শহীদজায়া ঊষা রানী চক্রবর্তী গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর মা। রাজাকারের তালিকায় ২৬ পুলিশের নাম ॥ দীর্ঘদিন পরে হলেও রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করায় খুশি হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে কিছু ভুলের সংশোধনের দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্টরা। তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজাকারের তালিকায় তৎকালীন বরিশাল বিভাগের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি, একজন সাবেক সংসদ সদস্য, একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, ২৬ জন সাবেক পুলিশ সদস্য, ১২ জন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতজন সাবেক মেম্বারসহ শিক্ষক, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীর নাম এবং পদবী অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগের রাজাকারের তালিকায় থাকা তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, পটুয়াখালী জেলার স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাবেক পরিদর্শক মোঃ ওবায়েদুল হক, বানারীপাড়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম, ঝালকাঠির সাবেক পরদির্শক শাহ আলম (তালিকায় দুইবার নাম রয়েছে তার), রাজাপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরউদ্দিন আহমেদ, বরিশালের সিআইডি ক্যাম্পের সাবেক পরিদর্শক আবুল মোতালেব জোমাদ্দার, পরিদর্শক মোঃ আবু, সাবেক পরিদর্শক নজরুল ইসলাম, নলছিটির সাবেক ওসি মোঃ ইউসুফ আলী, সাবেক সিআইডি পুলিশ সামসুল আলম, শাহ আলম, সাবেক ওসি সেকান্দার আলী (তালিকায় দুই বার নাম রয়েছে), সাবেক কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান, উজিরপুরের সাবেক এসআই একেএম নুরুল ইসলাম, পটুয়াখালীর রিজার্ভ অফিসের সাবেক এসআই এস. ইসলাম, কোতোয়ালী থানার সাবেক এসআই এমএ মান্নান (তালিকায় চারবার নাম রয়েছে), বরিশালের সাবেক টিএসআই খন্দকার আব্দুল বারি, সাবেক এসআই মান্নান, ফজলুর হক, ইসহাক, শামসুল হক, একেএম মতিউর রহমান, সাবেক এএসআই আব্দুল মাজিদ, আব্দুস সাত্তার, আজাহার আলী এবং সাবেক কনস্টেবল আব্দুস সোবাহান ও গোলাম মাওলা। এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, সাবেক এমপি আব্দুল জলিল আকন, পাক মিলিটারির ক্যাপ্টেন আমজাত, সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল লতিফ, ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা, ঠিকাদার আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মালেক, রংপুর জামায়াত ইসলামের প্রধান মোখলেছুর রহমান (বরিশালের সন্তান তালিকায় দুইবার নাম রয়েছে), পটুয়াখালীর সোনালী ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার এমএইচ খান, বাউফলের রাজস্ব সার্কেল অফিসের সাবেক প্রধান সহকারী আসমত আলী মিয়াসহ বেশ কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারী কর্মকর্তার নাম রয়েছে রাজাকারের তালিকায়। এছাড়া ব্রজমোহন কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল বাকী বিল্লাহ (তালিকায় দুইবার নাম রয়েছে), মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট আরসি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল এএইচ আমির হোসেন, কাশিপুর হাইস্কুলের সাবেক প্রধানশিক্ষক এবিএম আমজেদ আলী, কচুয়া হাইস্কুলের সাবেক প্রধানশিক্ষক আব্দুর রশিদ, পিরোজপুর হাইস্কুলের সাবেক প্রধানশিক্ষক মোঃ মহিবুল্লাহ, ধামুরা হাইস্কুলের সাবেক প্রধানশিক্ষক আর্শেদ আহমেদ এবং একে ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধানশিক্ষক আব্দুল গণির নামও রয়েছে তালিকায়। এছাড়াও ১২ জন সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতজন সাবেক মেম্বার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৬ জনসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবীর পদবীসহ নাম রাজাকারের প্রকাশিত তালিকায় রয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় অগ্নিসংযোগ ॥ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবতী এবং ঠাকুরমা শহীদজায়া উষা রানী চক্রবর্তীকে রাজাকার তালিকাভূক্ত করার প্রতিবাদে এবং ভূয়া তালিকা বাতিলসহ ভুল সংবলিত তালিকা প্রণয়নে জড়িতদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে নগরীর সদররোডে প্রতিবাদ সভা চলাকালীন সময় প্রকাশিত তালিকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। সভায় মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্তী আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, শেষবয়সে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার হিসেবে আমার ও প্রয়াত শহীদজায়া মায়ের নাম রাজাকারের তালিকায় দেখতে হবে তা কোনদিন ভেবেও দেখিনি। ভুলে ভরা এই তালিকার মাধ্যমে একটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকেই শুধু নয়; সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমানিত করা হয়েছে। তাই অবিলম্ভে এই প্রকাশিত তালিকা সংশোধন করাসহ তালিকা প্রণয়নকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এরপূর্বে বেলা ১১টায় বাসদের জেলা শাখার আয়োজনে নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ কার্যলয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছে। গৌরনদীর যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও রাজাকারদের একটি তালিকা প্রকাশ হওয়ায় আমরা খুশি। তবে এ তালিকায় কিছুটা ভুলত্রুটি রয়েছে, অনেকেই বাদ গেছেন। যাদের মধ্যে বড় ধরনের সংগঠকও রয়েছে। সে নামগুলো দ্রুত সংযোজন করা উচিত। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতবাক। অবিলম্বে তালিকার আপত্তিকর কয়েকটি নামের সংশোধন করে ওইসব পরিবারের সদস্যদের সম্মান সুরক্ষা করা এবং অসম্মানের জন্য তাদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করা উচিত। এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, তালিকায় কিছুটা ভুল হতে পারে। তবে তা সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে।
×