ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসেম্বরে ঢাকায় টিকফা বৈঠক হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

ডিসেম্বরে ঢাকায় টিকফা বৈঠক হচ্ছে না

এম শাহজাহান ॥ খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব ‘ক্রিসমাস’ সামনে রেখে টিকফার পঞ্চম বৈঠক পেছানো হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তির (টিকফা) বৈঠকটি এ বছর আর অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। চলতি ডিসেম্বর মাসে বৈঠকটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এলক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর একবার এই ফোরামের বৈঠক হওয়ার কথা। গত বছর চতুর্থ বৈঠকটি যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ায় এবার পঞ্চম বৈঠকের নির্ধারিত সময় চূড়ান্ত করেছিল বাংলাদেশ। জানা গেছে, টিকফার পঞ্চম বৈঠকটি ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে নির্ধারিত সময়ে ফোরামের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত না হলেও দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়-খ্রিসমাস সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এখন উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া নতুন বছর বরণ বা থার্টিফার্স্টের মতো অনুষ্ঠান রয়েছে সামনে। ওই সময় সরকারী কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকবেন। এ কারণে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য টিকফা ফোরামের বৈঠক ফেব্রুয়ারি-মার্চের সুবিধাজনক সময়ে করা উচিত বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মোঃ কামাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে এ বছর টিকফা ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আগামী বছরের শুরুতেই সুবিধাজনক সময়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে ফোরামের বৈঠক পিছিয়ে দেয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোন প্রভার পড়ার আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এ বছর ঢাকায় বৈঠক হওয়ার কথা, কিন্তু বড় দিন ও নববর্ষ সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সময় পেছানোর কথা বলেছে। এ কারণে এবারের বৈঠকটি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের যে কোন সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। জানা গেছে, ডব্লিউটিও সেলের পক্ষ থেকে ১৭ ডিসেম্বর টিকফার বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত করা হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের এজেন্ডাও চূড়ান্ত করে আনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ স্টেক হোল্ডারদের মতামত চাওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এজেন্ডা নির্ধারণে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধের কারণে বৈঠকটি অন্তত দুই মাস পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ও যুত্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট টিকফার পঞ্চম সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও পাঁচ বছর আগে করা এ ফোরামের অগ্রগতি নিয়ে হতাশাও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। কারণ এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন বিনিয়োগ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে। ডব্লিউটিও সেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা টিকফা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি যা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য সহযোগিতা, সম্প্রসারণ বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বাণিজ্য বাধাসমূহ নিয়ে আলোচনার উত্তম ফোরাম। টিকফার চতুর্থ বৈঠকে প্রধানত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যবসা সহজীকরণ, মার্কেট এক্সেস, ট্যারিফ পুননির্ধারণ মেধাস্বত্ব, ডিজিটাল ইকোনমি, আঞ্চলিক যোগাযোগ, জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, সরকারী ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং শ্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সভায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়। বিশেষ করে নার্স, মিডওয়াইফসহ অন্যান্য সেবা খাতে মোড-৪ এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ সহজীকরণে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশে বিরাজমান বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যাদি তুলে ধরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশী পণ্য বিশেষ করে গার্মেন্টস পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার কথা বলে বাংলাদেশ। এছাড়া টেকনোলজি ট্রান্সফার, সমুদ্র অর্থনীতি আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র মার্কেট এক্সেস, বিনিয়োগ ইস্যু, কাস্টমস এ্যান্ড সম্পূরক শুল্ক ডিউটি, ইউএস কটন, ডব্লিউটিও ইস্যু ও শ্রম ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। এছাড়া ট্রিপসম ট্যারিফ, নন ট্যারিফসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা করে। জানা গেছে, গত চতুর্থ ফোরামের বৈঠকের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করে উভয় দেশ। সত্যিকার অর্থে টিকফা কার্যকর করতে হলে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে বাংলাদেশের রফতানিকৃত তৈরি পোশাকের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করার কথা বলছেন উদ্যোক্তারা। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামসহ দেশটির সরকারী-বেসরকারী খাতের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তরিক হওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন। মার্কিন প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর এই অনুরোধে ইতোমধ্যে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে।
×