ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় গতি আসছে না

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় গতি আসছে না

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ এলাকা নির্ধারিত হয়েছে। অধিগ্রহণের ভূমি ঠিক হয়েছে। ওই ভূমিতে দ্রুত ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে না পারে তার এরিয়াল ভিউ (ম্যাপ) নেয়া হয়েছে। তারপর হঠাৎ করেই আইনী জটিলতার ফেরে পড়ে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিইজেড) প্রতিষ্ঠার গতি হোঁচট খেয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা কাটছে না। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানালেন সর্বশেষ অবস্থা। ১৯৮২ সালের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল অধ্যাদেশের ক্ষতিপূরণ দেড়গুণ নির্ধারণ করে ভূমি মালিকদের নোটিস দেয়া হয়। বরাদ্দ চাওয়া হয়। প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে সরকার ভূমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধন করে ক্ষতিপূরণ তিনগুণ করে। এরপর নতুন আইনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে চারজন ভূমি মালিক হাইকোর্টে রিট মামলা করেন। জেলা প্রশাসন নতুন আইনের আগে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়ে নোটিস দেয়। আদালতে এই যুক্তি তুলে ধরে জবাব দেয়া হয়। রিট মামলা নিষ্পত্তি ও হুকুম দখলের চূড়ান্ত অনুমোদন এলেই ভূমি মালিকদের অর্থ পরিশোধ করে বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজ শুরু হবে। একদার শিল্পনগরী বগুড়ার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বগুড়া ইকোনমি জোন (বিইজেড) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দক্ষিণে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া, চকজোড়া, পারটেকুর, বীরগাঁও, চকভ্যালি মৌজায় ২৫১ দশমিক ৪৩ একর ভূমির অধিগ্রহণের কাজ শেষে ৩শ’ কোটি টাকারও বেশি প্রাক্কলন করার পর বরাদ্দও হয়েছে। কৃষি ভিত্তিক এই অঞ্চলে বহুমুখী শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিইজেড প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় প্রায় চার বছর আগে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক কাজ সম্পন্ন করে। তারপর সম্ভাবনার দুয়ারে খিল এঁটে যায়। শিল্পনগরী বগুড়া তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। অনেকগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে হাইরাইজ ভবন, আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের উদ্যোগেও ভাটা পড়েছে। বগুড়া পরিণত হয়েছে শপিং মল, বাণিজ্যিক শোরুম, আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, আধুনিক মার্কেট, চার ও পাঁচ তারকা খঁচিত হোটেলে। বিইজেড স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সুদূর প্রসারী ভাবনায়। বগুড়া- সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ বিইজেডের কাছ দিয়ে যাচ্ছে। এই রেলপথ নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগে দূরত্ব অনেক কমে যাবে। সূত্র জানায় ভারত এই রেলপথ নির্মাণে সহযোগিতা দেবে। বগুড়া বিমান বন্দরের রানওয়ে বাড়িয়ে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনে বগুড়া আঁতুড়ঘর। ষাটের দশকে বগুড়া অঞ্চল কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু করে। কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কারখানা গড়ে তোলে। পরে আরও সম্প্রসারিত হয়। কৃষির উৎপাদিত অনেক পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে কোন ব্যবস্থা নেই। অনেক সবজির বাড়তি উৎপাদনে কৃষক দাম না পেয়ে ফেলে দেয়। বগুড়ার আদমদীঘির একটি গ্রাম কম্বল ও চাদর উৎপাদন করে সারা দেশে সুনাম অর্জন করেছে। তাঁত শিল্প আধুনিকায়ন না হওয়ায় এগিয়ে যেতে পারছে না। গ্রামাঞ্চলে নারীরা সেলাই মেশিনে পোশাক বানিয়ে বড় মার্কেটে যেতে পারে না। সারিয়াকান্দি এলাকায় নারী অটোমোবাইল কারখানা স্থাপন করে মোটরসাইকেল অটোরিক্সা মেরামত করছে। ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ তৈরির বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে বগুড়া। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুগের চাহিদার প্রয়োজনে ইলেকট্রনিক্স এক্সেসারিজ (যন্ত্রাংশ) তৈরির অপার সম্ভাবনা বিরাজ করছে। বগুড়ায় যত সবজি উৎপাদিত হয় সেগুলো এবং কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি উপযোগী নানা ধরনের প্যাকেটজাত খাবার তৈরি করে রফতানিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যা এক্সপোর্ট প্রমোশন জোনের (ইপিজেড) চেয়ে কোন অংশে কম হবে না। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর আশা করা হয়েছিল উত্তরাঞ্চলে শিল্পে গতি আসবে। উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদী ও নীলফামারীতে ইপিজেড স্থাপিত হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ইপিজেডের সহযোগী হতে পারে।
×