ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাজাহান খানের অভিযোগের জবাবে ইলিয়াস কাঞ্চন

আন্দোলন চালাতে বিদেশ থেকে কোন টাকা আসে না

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

আন্দোলন চালাতে বিদেশ থেকে কোন টাকা আসে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চালাতে বিদেশ থেকে কোন টাকা আসে না বলে জানিয়েছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। সম্প্রতি তাকে জড়িয়ে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি পরিবহন নেতা শাজাহান খানের দেয়া বক্তব্যের সংবাদ সম্মেলনে এই চিত্রনায়ক বলেন, সদস্যদের চাঁদায় চলে তার সংগঠন। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন করে আসছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। গত ৮ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে পরিবহন শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে ‘জ্ঞানপাপী’ আখ্যায়িত করেন।ইলিয়াস কাঞ্চনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি যে বিদেশীদের কাছ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই এনজিওর নামে কোটি কোটি টাকা নিয়ে আসছেন। আপনি কয়টি প্রতিষ্ঠান করেছেন, কয়েকটি স্কুল করেছেন, কয়জন মানুষকে ট্রেনিং দিয়েছেন- আমি তার তথ্য বের করতেছি। তিনি বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চন কোথা থেকে কত টাকা পান, কী উদ্দেশ্যে পান, সেখান থেকে কত টাকা নিজে নেন, পুত্রের নামে নেন, পুত্রবধূর নামে লাখ লাখ টাকা নেন সেই হিসাব আমি জনসম্মুখে তুলে ধরব। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরুর প্রথম ১২ বছর নিজের টাকায় সংগঠন চালিয়েছেন। শুরুতে কারও কাছ থেকেই কোন অর্থ নিইনি। পরে সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া শুরু হয়। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে নিসচা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এনজিও হিসেবে নিবন্ধিত হয় বলে জানান তিনি। পরে ইলিয়াস কাঞ্চন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাজাহান খানকে এই অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলেন। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শাজাহান খানের জবাব না পাওয়ায় আবারও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগের স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ হাজির করার আহ্বান জানিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এর আগেও তাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু উত্তর দেননি। এবার আমি তাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিলাম। আশা করি তিনি তা দেবেন। নইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। এনজিও হিসেবে নিবন্ধনের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, তা না হলে আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করতে অসুবিধা হতো। এ কারণে আমরা এনজিও হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছি। আমাদের আয়ের উৎস নিজস্ব অর্থায়ন। সদস্যদের কাছ থেকে নেয়া চাঁদা আমাদের আয়ের মূল উৎস। আমার সংগঠনে বিদেশ থেকে কোন অনুদান আসে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কখনই প্রতিপক্ষ মনে করেন না জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, কিন্তু শাজাহান খান আমার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের খেপিয়ে তুলছেন। এ কারণে আমি ও আমার পরিবারের সদস্য এবং সংগঠনের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে শাজাহান খান এসব প্রশ্নের অবতারণা করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। শাজাহান খান যেদিন এসব কথা বলেন সেদিন ভারতে থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেননি বলে জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, একটি কথা না বললেই নয়, প্রধানমন্ত্রী যখন সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যুগপোযুগী সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নে নির্দেশ দিলেন তখন কি করে শাজাহান খান সরকারে থেকে এই আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সেই প্রশ্ন জাতির কাছে রাখছি। আমরা মনে করি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-কে বাধাগ্রস্ত করতে উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে শাজাহান অবান্তর এসব প্রশ্নের অবতারণা করছেন। আমরা বিশ্বাস করি এদেশের মানুষ এসবের যোগ্য জবাব দিবে। শাজাহান খান বলে থাকেন আমি নাকি সাধারণ মানুষের কাছে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কথা বলে নেতিবাচক আবহ তৈরি করি। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি কবে, কখন, কোথায় আমি সরাসরি পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কথা বলি সেটা প্রমাণ করতে হবে। আমি সবসময়ই বলে আসছি আমি কথা বলি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আমি কথা বলি অনিয়মের বিরুদ্ধে, আমি কথা বলি বিশৃঙ্খল পরিবেশের বিরুদ্ধে। আর সেটা যদি কারও বিপক্ষে যায় তাহলে কি খুব বেশি অন্যায় হবে? তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, পরিবহন সেক্টরে বছরে বিভিন্ন খাতের নামে যে টাকা উত্তোলন (চাঁদা আদায়) করা হয় সেই টাকার কত অংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে, কয়টা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে শ্রমিকদের দক্ষ করার জন্য। কয়টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য, কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে প্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য। তাদের জীবনমান উন্নয়নে এই টাকার কত অংশ ব্যয় করা হয়? কতজন চালক তৈরি করেছেন? বিদ্যমান চালকদের দক্ষ করার কি উদ্যোগ নিয়েছেন? অথচ তিনি (শাজাহান খান) প্রশ্ন করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই কতজন দক্ষ চালক তৈরি করেছেন? আমি বলতে চাই আমরা নতুন চালক তৈরি করার জন্য বিনা ফিতে দারিদ্র্য এসএসসি পাস বেকার শ্রেণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে লাইসেন্স পাইয়ে কর্মক্ষম করার উদ্যোগের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে অংশী হয়েছি। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি এই শাজাহান খানরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলে শ্রমিকদের শুধুই ব্যবহার করে গেছেন। শ্রমিকদের জুজুর ভয় দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। উপস্থিত ছিলেন নিসচা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপেন, সাদেক হোসেন বাবুল, বেলায়েত হোসেন খান নান্টু, নাসিম রুমি, এস এম আজাদ হোসেন, একে আজাদ ও আবদুর রহমান প্রমুখ।
×