ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দ কায়সারের আপীলের রায় ১৪ জানুয়ারি

প্রকাশিত: ১১:৩০, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

সৈয়দ কায়সারের আপীলের রায় ১৪ জানুয়ারি

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক কৃষিপ্রতিমন্ত্রী ও কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপীলের রায় ঘোষণা হবে আগামী ১৪ জানুয়ারি। আপীলের শুনানি শেষে এ দিন ধার্য করেছে আপীল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ এ দিন ধার্য করে। এই আপীল বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা এবং বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আসা এটি নবম মামলা, যা রায়ের পর্যায়ে এলো। এর আগে আপীল-এর আগে আপীল বিভাগে ৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলামের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তার সামনে এখনও দুটি ধাপ বাকি রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার পর এটিএম আজহারুল ইসলাম রিভিউ করার সময় পাবেন। এর পর রিভিউ খারিজ হলে তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন। রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষা নাকচ করলে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে কোন অসুবিধা থাকবে না। এর আগে আরও সাতটি মামলার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। যার মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মঙ্গলবার এ মামলায় আপীল বিভাগে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপীল শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। নিজ কার্যালয়ে মাহবুবে আলম বলেন, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার দীর্ঘদিন শুনানির পর আজ শুনানি শেষ হয়েছে। রায়ের জন্য আগামী ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। আমি আশাবাদী তার বিরুদ্ধে যে ১৬টি অভিযোগ আনা হয়েছিল তার দু’টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে খালাস দিয়েছে। বাকি ১৪ অভিযোগের মধ্যে সাতটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। চারটি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। একটি অভিযোগে ১০ বছর, একটিতে সাত বছর, একটি পাঁচ বছর সাজা দেয়া হয়েছে। মাহবুবে আলম বলেন, আমি আজ আদালতে জোরালোভাবে আবেদন জানিয়েছি, যে দু’টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো হিরামণি সাঁওতালকে ধর্ষণের জন্য পাকিস্তানী আর্মিকে ইশারা দিয়ে ভেতরে দেয়া এবং পরে তাকে ধর্ষণ করা। এর ফলে তার গর্ভে একটি সন্তান জন্ম নিয়েছিল। সেই সন্তানটিকে দেখতে সাঁওতালদের মতো না। এ কারণে অনবরত ধিক্কার পাচ্ছিল। যে কারণে সে কোন এক সময় আত্মহত্যা করে। ‘আরেকজন ছিল মাজেদা। যাকে আসামি কায়সার পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল। সেও ধর্ষিত হয়েছিল। তারও একটি মেয়ে সস্তান হয়। সে মেয়েটিও সারাজীবন ধিকৃত হয়ে জীবনযাপন করেছে।’ এ মামলায় আমি আবেদন করেছি, একজন মানুষকে হত্যা করলে তখনই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু ধর্ষিতা যে তার জন্য প্রতিদিনই মৃত্যু। এটা তার জন্য মৃত্যু, পরিবারের জন্য মৃত্যু।
×