ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষকরা হতাশ

এক সপ্তাহে ধানের দাম মণ প্রতি কমেছে ১শ’ টাকা

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৯

এক সপ্তাহে ধানের দাম মণ  প্রতি কমেছে ১শ’ টাকা

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নবেম্বর মাসের শুরুর দিকে আমন ধান ওঠার আগে নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজারে ধানের দাম ছিল চড়া। কৃষকদের আশা ছিল আমন ধানের দাম এবার হয়ত ভাল পাওয়া যাবে। কিন্তু বাজারে আমনের সরবরাহ বাড়তে থাকায় পাল্টে যায় বাজারের চিত্র। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন ধানের দাম প্রতি মণে কমেছে ১শ’ থেকে ১শ’ ২০ টাকা। বোরোর পর আমন ধানের বাজারও মন্দা হওয়ায় চরম হতাশ হয়ে পড়েছে জেলার কৃষকরা। কিন্তু চালের দাম কমেনি। নওগাঁর বিভিন্ন চালের মোকামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ধানের দাম কমলেও চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলায় মোট আমন চাষীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ২২৫ জন। এ বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৬৭৪ মেট্রিক টন। নওগাঁর অন্যতম বড় ধানের মোকাম পত্নীতলা উপজেলার মধইল বাজার। ওই বাজারে সপ্তাহের প্রতি দিন ধান কেনাবেচা হয়। শুক্রবার সকালে ওই বাজারের আড়তদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারটিতে প্রতি মণ মোটা জাতের স্বর্ণা-৫ ও স্বর্ণা-৫১ (হাইব্রিড স্বর্ণা) ধান মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে ৬শ’ ১০ টাকায়। সরু জাতের শম্পা কাটারি ধান বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ ৫০ থেকে ৯শ’ ৮০ টাকায়। কয়েকজন ধানের আড়তদার জানান, ‘চালকল মালিকেরা ধান কেনা কমে দেয়ায় তারা কৃষকদের কাছে ধান কিনছেন কম। কিন্তু এখন বাজারে ধানের সরবরাহ বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় ধানের দাম কমে গেছে।’ মেসার্স রেখা ধান আড়তের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের দাম কমছে। গত এক থেকে দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানের দাম ১শ’ থেকে ১শ’ ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। নতুন ধান ওঠার শুরুতে স্বর্ণা জাতের ধান ৭শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সেই ধান ৬শ’ থেকে ৬শ’ ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শম্পা কাটারি ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু সেই ধানও দাম কমতে কমতে ৯শ’ ৫০ থেকে ৯শ’৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালকল মালিকরা ধান কেনা কমে দেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘অন্যান্য অনেক ব্যবসার মতো চালকল মালিকদের ব্যবসাও সাইক্লিং পদ্ধতিতে চলে। অর্থাৎ চাল বিক্রি করে টাকা পেলে সেই টাকা দিয়ে চালকল মালিকরা ধান কিনে থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে মোকামে চাল বিক্রি কমে গেছে। চাল বিক্রি করতে না পারায় চালকল মালিকরা ধান কিনতে পারছেন না। এজন্য বাজারে ধানের দাম কমে গেছে। তবে সরকার কৃষকদের লাভবান করতে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সংগ্রহ অভিযান পুরোদমে শুরু হলে বাজারে হয়ত কিছুটা প্রভাব পড়ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত নওগাঁয় ধান সংগ্রহ অভিযান শুরুই হয়নি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে জেলায় ১৯ হাজার ৫শ’ ৮০ মেট্রিক টন ধান কেনার কার্যক্রম শুরুই হয়নি। জেলার নিয়ামতপুর, বদলগাছী ও ধামইরহাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হলেও এখনও ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। এছাড়া অধিকাংশ ইউনিয়নে কৃষকদের কাছ থেকে তালিকা না পাওয়ায় লটারিই করা হয়নি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম ফারুক হোসেন পাটোয়ারি বলেন, ‘নওগাঁর ১১ উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলা ছাড়া ১০ উপজেলায় লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান সংগ্রহ করা হবে। সদর উপজেলার কৃষকদের এ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছ থেকে তালিকা না পাওয়ায় ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আশা করা হচ্ছে জেলার সকল ইউনিয়নে ধান সংগ্রহ অভিযান পুরোদমে শুরু করা যাবে।’
×