ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানি করে ইভিসি মিটার স্থাপন করা যাবে

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 আমদানি করে ইভিসি মিটার স্থাপন করা যাবে

রশিদ মামুন ॥ গ্রাহক চাইলে এখন নিজেই ইলেক্ট্রনিক গ্যাস ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার আমদানি করে সংযোজন করতে পারবেন। আমদানি করা গ্রাহকদের ইভিসি মিটার স্থাপনে অগ্রাধিকার দেয়ার কথাও বলছে জ্বালানি বিভাগ। সম্প্রতি জ্বালানি সচিবের সভাপতিত্বে ইভিসি মিটার স্থাপন নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে দেশে ইভিসি মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ওই সময় তিন বছরের সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে অর্ধেক ইভিসি মিটার স্থাপন না হওয়াতে আবার সময় বাড়ানো হয়। বলা হয় ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ করতে হবে ইভিসি মিটার স্থাপনের কাজ। কিন্তু এখন এসে আমদানির কথা বলা হচ্ছে। শিল্প মালিকরা সঠিক চাপে গ্যাস পাচ্ছে না বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, যে চাপে গ্যাস দেয়ার কথা ওই চাপে গ্যাস না দিলেও বিল করা হচ্ছে নির্ধারিত ওই চাপেই। এতে বাতাস দিয়ে গ্যাসের দাম নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্যা দূর করতেই মূলত ইভিসি মিটার স্থাপন করা হচ্ছিল। এক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যখন যে চাপে গ্যাস পাবে ওই চাপেই বিল আসবে। অর্থাৎ শিল্প উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু বিতরণ কোম্পানি নিজেদের মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ইভিসি মিটার স্থাপনে শুরুতে অনীহা প্রকাশ করে। পরে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং উদ্যোক্তাদের চাপে ইভিসি মিটার স্থাপন শুরু করে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২০১৫ সালে তিন বছরের মধ্যে সব শিল্পের আঙ্গিনায় ইভিসি মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু গত বছর এই সময় আরও এক বছর বৃদ্ধি করা হয়। অর্থাৎ চলতি বছর ইভিসি মিটার স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার কথা। চলতি বছর শুরুর দিকে যখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয় তখন বলা হয় ইভিসি মিটার না থাকার কারণে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্যাসের বিল আদায়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলেও বিইআরসির প্রতিবেদনে উঠে আসে। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, একজন গ্রাহককে সংযোগ দেয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট চাপ বা পিএসআইতে গ্যাস দেয়ার অঙ্গীকার করে বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু যেহেতু গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে, তাই গ্রাহক ওই নির্দিষ্ট চাপে খুব অল্প সময়ই গ্যাস পেয়ে থাকে। ধরা যাক কোন গ্রাহককে ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস দেয়ার জন্য বিতরণ কোম্পানি চুক্তি করল কিন্তু দেখা যায় কোন কোন সময় চাপের পরিমাণ দুই থেকে তিন পিএসআইতেও নেমে আসে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানি যখন সাধারণ মিটারে বিল করে, তখন সর্বক্ষণিক চাপ ১৫ পিএসআই ধরেই বিল করা হয়। এক্ষেত্রে বিতরণ লাইনের শুরুর দিকে যেসব শিল্প কারখানা থাকে তারা বেশি চাপে গ্যাস পেলেও বিতরণ লাইনের শেষের দিকের শিল্প মালিকরা কম চাপে গ্যাস পায়। কিন্তু নির্ধারিত চাপে বিল করাতে আর্থিকভাবে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগে দেন-দরবার করলে বিতরণ কোম্পানিগুলো অবিলম্বে ইভিসি মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বার বার নির্দেশ দেয়ার পরও সব শিল্পে ইভিসি মিটার স্থাপন হয়নি। জ্বালানি বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে ইভিসি মিটার আমদানি নিষিদ্ধ নয়। চাইলে উদ্যোক্তা নিজে ইভিসি মিটার আমদানি করতে পারেন। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তার আমদানি করা মিটার লাগানোর উপযুক্ত হলে লাগিয়ে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে এ ধরনের গ্রাহককে অগ্রাধিকার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ইভিসি মিটার আমাদনি করে সংযুক্ত করতে চাইলে বিতরণ কোম্পানির কোন আপত্তি থাকবে না বিষয়টি বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই), তৈরি পেশাক প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ী সংগঠন (বিজিএমইএ), টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন (বিকেএমইএ)কে অবহিত করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা চাইলেই আমদানি করতে পারবে ইভিসি মিটার। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, দ্রুত যাতে সব শিল্পে ইভিসি মিটার লেগে যায় এজন্যই নতুন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিতরণ কোম্পানি নিজেদের সীমাবদ্ধতার কারণে বারবার সময় বেঁধে দেয়ার পরও কাজ শেষ করতে পারছে না। এতে উদ্যোক্তারা লাভবান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
×