ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্টারমাইন্ড অনিক ও অমিত সাহার স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ১১:২০, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

মাস্টারমাইন্ড অনিক ও অমিত সাহার স্বীকারোক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় আরও দুই আসামি অমিত সাহা ও অনিক সরকার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। এর আগে মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ও ইফতি মোশাররফ সকাল আবরার হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেন। অনিক সরকার আবরার হত্যার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। এদিকে আবরার হত্যা মামলার আরেক আসামি মোয়াজ আবু হুরাইরাকে ঢাকার উত্তরা থেকে শনিবার গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ নিয়ে আবরার হত্যায় মোট ১৯ জনকে গ্রেফতার করল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আর শুক্রবার সিলেট থেকে গ্রেফতারকৃত আবরার হত্যা মামলার আরেক আসামি মাজেদুর রহমান নওরোজকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পূলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারের পর ১১ অক্টোবর শুক্রবার অমিত সাহাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ডের প্রথম দিনেই অমিত সাহা আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হন। এজন্য শনিবার তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের খাস কামরায় হাজির করা হয়। সেখানে অমিত সাহা হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। জবানবন্দী শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এদিকে শনিবার আবরার হত্যায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা অনিক সরকারও ঢাকার আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। বুয়েট ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঞ্চদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরারের বাবার করা মামলায় আসামি হওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, অনিক সরকার ১৬৪ ধারায় ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের খাস কামরায় জবানবন্দী দেন। আবরার হত্যা মামলায় এর আগে বুয়েট ছাত্র মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন ও ইফতি মোশাররফ সকাল একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। এদিকে শনিবার বেলা এগারোটার দিকে ঢাকার উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়ি থেকে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বুয়েট ছাত্র মোয়াজ আবু হুরাইরাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই নিয়ে মোট আবরার হত্যা মামলায় ১৯ জন গ্রেফতার হলো। যার মধ্যে ১৫ জন এজাহারনামীয় আসামি। বাকি চার জনের নাম এজাহারে ছিল না। মোয়াজ বুয়েটের সিএসই বিভাগের ১৭তম ব্যাচের ছাত্র। হত্যাকা-ের বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত যারা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে, তাদের সবার বক্তব্যই মোটামুটি একই রকম। জবানবন্দী পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে, ঘটনার মূল মাস্টারমাইন্ড অনিক সরকার। সে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল। হত্যাকা-ে তার তৎপরতা ছিল সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে শুক্রবার সিলেট থেকে গ্রেফতারকৃত আবরার হত্যা মামলার আরেক আসামি মাজেদুর রহমান নওরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। নওরোজ আদালতে নিজের নাম নিজেই ঠিক করে দেন। বলেন, পুলিশ তার নাম ভুল লিখেছিল। নওরোজ হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ৮ নম্বর আসামি। তিনি বুয়েটের শেরে বাংলা হল ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত কর্মী ও ম্যাটারিয়াল এ্যান্ড ম্যাটারোলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার পিরপুর গ্রামের মাশরুর-উজ-জামানের ছেলে। এদিকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এই বুয়েট ছাত্র বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আমাকে দেখা গেছে কিনা, জানি না। আহত অবস্থায় আবরারকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার দলে আমিও ছিলাম ওই সময় বুয়েট ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা হলে ছিলেন না। নওরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে নওরোজের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। এদিকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ হলে হলে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলের তিনটি কক্ষ সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ও বহিরাগতদের হল ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার বিকেলে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ৩০১২ নম্বর কক্ষটি সিলগালা করে দেয়া হয়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল থাকতেন রুমটিতে। এর আগে বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জামি-উস সানির কক্ষ সিলগালা করে দেয়া হয়। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
×