ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস দমনে শি-মোদি মতৈক্য

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

সন্ত্রাস দমনে শি-মোদি মতৈক্য

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরালো করাসহ নানা ইস্যুতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলাপ করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার ভারতের মামাল্লাপুরাম শহরে নৈশভোজের সময় এই আলোচনায় অংশ নেন তারা। দুই নেতা নিজ নিজ দেশে ধর্মীয়, জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ রেখে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে একমত হন। এনডিটিভি, ওয়ান ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দু। দুইদিনের বৈঠকে অংশ নিতে শুক্রবার তামিলনাড়ুর মামাল্লাপুরাম শহরে পৌঁছান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চেন্নাই বিমানবন্দরে অবতরণের পরে তাকে স্বাগত জানান তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও চীনের প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে চীনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান মোদি। রাতে শি জিনপিংয়ের সম্মানে নৈশভোজ আয়োজন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় মোদি-জিনপিং আড়াই ঘণ্টা আলোচনা করেন। পরে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সূচীর বাইরেও বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করেছেন দুই নেতা। বিশেষ করে বাণিজ্য ঘাটতি ও ভারসাম্যহীন বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করেন তারা। গোখলে জানান, অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চমৎকার আয়োজনের জন্য তামিলনাড়ু সরকারের প্রশংসা করেন দুই নেতা। চেন্নাই বিমানবন্দরে পাওয়া অভ্যর্থনায় আপ্লুত হওয়ার কথা মোদিকে জানিয়েছেন জিনপিং। এছাড়া দুই নেতার আলোচনায় পল্লভা ও চোলা সা¤্রাজ্যের আমলে তামিলনাড়ু ও চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের উপকূলীয় শহর কুয়ানঝোও এর মধ্যকার ঐতিহাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে আসে। চীনের ওই শহরে সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া ১২শ’ শতাব্দীর এক মন্দিরে তামিল ব্যবসায়ীদের নির্মাণের ছাপ পাওয়া গেছে। এই এলাকায় আরও অনুসন্ধান চালাতে একমত হন জিনপিং-মোদি। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার অনানুষ্ঠানিক সম্মেলনে সংবেদনশীল বিষয়গুলো উত্থাপন করবেন কিনা? তা নিয়ে দেশটির বিরোধী রাজনীতিবিদ মনীষ তিওয়ারি প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, এটি মোদির বিজেপিকে চাপ দেয়ার একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছিল মাত্র। তাদের মতে শির নজর থাকবে কাশ্মীরের দিকে আর মোদি হংকং, জিনজিয়াং এবং দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে লক্ষ্য রাখতে পারেন? গত বছরের এপ্রিলে চীনের উহানে প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাধর এই দুই দেশের নেতা প্রথমবারের মতো বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকের পর চীনের প্রেসিডেন্টকে ভারত সফরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সম্প্রতি বেজিংয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন শি জিনপিং। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে চীন জানায়, বেজিং জম্মু-কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখছেন। পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুতে নীতিগত কোন পদেক্ষপ নিলে পাশে থাকার ঘোষণা দেন তিনি। পাল্টা উত্তর দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আমাদের অবস্থান সম্পর্কে চীন ভালভাবেই অবগত। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত নয় তাদের। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর পাকিস্তানের অনুরোধে বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সাধারণ পরিষদে তুলেছিল চীন। ভারতে চীনা প্রেসিডেন্টের এটি বেসরকারী সফর হওয়ায় দুই দেশের নেতারা কোন চুক্তি সই কিংবা যৌথ বিবৃতি দেবেন না। উভয়পক্ষই ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠকটি হয়েছিল গত বছর। সীমান্ত লাগায়ো ডোকলামে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ৭৩ দিনের উত্তেজনার পর চীনের হ্রদ শহরে বৈঠকে বসেন দুই দেশের শীর্ষ নেতারা। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে এখনও উত্তেজনা কাটেনি। তবে পাকিস্তানকে সদ্যই এ ইস্যুতে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। আর ভারত চাইছে কাশ্মীর প্রসঙ্গ এড়িয়ে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি। তবে কাশ্মীর নিয়ে দিল্লী কথা বলতে না চাইলেও নিয়ন্ত্রণ রেখায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের প্রভাব নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন বলে জানানো হয়েছিল খবরে। শনিবার চেন্নাই সফর শেষ করে নেপালে রওনা হবেন শি জিনপিং।
×