ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘মায়াবতী’র সঙ্গে আলো-ছায়ার এক দুপুরে...

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

‘মায়াবতী’র সঙ্গে আলো-ছায়ার এক দুপুরে...

প্রকৃতিতে এখন শরতের রূপ। নীল আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ, কখনও প্রভাব বিস্তারে এক পসলা মায়াবি বৃষ্টি। এমনি মায়াবি আবহাওয়ায় দেখা মেলে লাস্যময়ী নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং এই প্রজন্মের উদেয়মান অভিনেতা ইয়াশ রোশানের সঙ্গে। মাথার ওপর যখন মেঘ রোদ্দুরের লুকোচুরির খেলা চলছে, তখন তাদের হাসির ঝলাকানিতে পুরো পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। গত কয়েক দিন ধরে তাদের খুব ধকল যাচ্ছে। নিজেদের অভিনীত সিনেমা ‘মায়াবতী’ আগামীকাল ঢাকাসহ সারাদেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। সিনেমার প্রমোশন, বিভিন্ন মিডিয়া হাউজের সঙ্গে সিনেমা নিয়ে বিস্তারিত আলাপন, এক কথায় তাদের ঘুম হারাম! সিনেমার ট্রেইলার, তিশার সাহসী চরিত্র, ইশাস রোহানে সাবলীল উপস্থিতি এবং পরিচালক অরুণ চৌধুরীর অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যে সিনেমা পাড়া থেকে সাধারণের লোকারণ্যে ইতিবাচক আলোচনা চলছে। সব মিলিয়ে আগামীকাল ‘মায়াবতী’র মায়াজালের অপেক্ষা। নুসরত ইমরো তিশা। যার নামের এবং অভিনয়ের সঙ্গে পরিচয় নেই হয়ত এমন মানুষের সংখ্যা কম। এক কথায় ড্রইং রুমের টেলিভিশন থেকে মিলনাতয়নের রুপালি পর্দা উভয় ক্ষেত্রে তার এখন টান-টান জনপ্রিয়তা। তিশা বরাবরই চরিত্র নিয়ে খেলতে ভালবাসেন। ‘মায়াবতী’ অরুণ চৌধুরী পরিচালিত তিশা ও ইয়াশ রোহান জুটির প্রথম চলচ্চিত্র। সিনেমায় তিশা ও রোহানের পাগলাটে প্রেম এবং অসুন্দর বাস্তবতা ইতোমধ্যে সিনেমা প্রেমিদের কৌতূহলী করেছে। ‘মায়া’ নামের এক কিশোরী ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে চুরি হয়ে বিক্রি হয় দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে। সেখানে মায়া বেড়ে ওঠে, সঙ্গীতপাগল এক গুরুর কাছে। খোদাবক্স ( সঙ্গীত গুরু ) তাকে বড় করে তোলেন। এক সময় ষোড়শী মায়ার প্রেমে পড়ে ধনীর ব্যারিস্টার পুত্র। গল্প কিছুটা পরিচিত মনে হলেও এর টুইস্টের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন খোদ মায়া চরিত্রের তিশা। প্রথমবার নাম ভূমিকায় অভিনয় করলেন। কাজ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ অনুভব করেছেন? তিশা; প্রতিটি কাজই চ্যালেঞ্জিং। তবে দর্শকদের কখনও হতাশ করতে চাই না। সব সময় চেষ্টা করি ভাল কিছু উপহার দেয়ার। অরুণ দা নাটক থেকে সিনেমায় অনেক সিরিয়াস। ‘মায়াবতী’তে চেষ্টা করেছি কিছু নতুনত্ব দিতে। তাছাড়া একেক জন মানুষ একেক ভাবে গল্পটি চিন্তা করবে। কেউ চিন্তা করবে ইউনিক, কেউ বা গতানুগতিক। খুব বেশি ব্যতিক্রম বলব না। তবে গল্পটি আমাদের খুব কাছের। প্রতিটি মানুষের না বলার অধিকার আছে। ছবিটির গল্পই বাস্তবতার আলোকে। ছবিটি যখন দেখবেন তখন মনে হবে, কোথায় যেন দেখেছি। আবার মনে হবে এই ঘটনা বাংলাদেশের অনেক মানুষের ঘটনা। বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যাবে ছবির গল্প আর মায়ার চরিত্র। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে তিশার শূটিংয়ের অভিজ্ঞতা দারুণ। এই নিয়ে তৃতীয়বার দৌলতদিয়া শূটিং করেছি। শূটিং নিয়ে প্রতিটি ঘটনাই স্মরণীয়। যা দিয়ে একটি বই লেখা যাবে-তিশা। তিশা মনে করেন জীবনে কিছু করতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া কখনই বড় হওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীতে কেউ সোনার চামচ নিয়ে জন্মলাভ করে না। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু অর্জন করতে হয়। পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। কমার্শিয়াল ছবি না করার কারণ? আমি কোন ঘরোয়ানা বুঝি না। নিজেকে কোন ঘরোয়ানায় বন্দী করতে চাই না। আমি ভাল গল্প বুঝি। কমার্শিয়াল কিংবা আর্ট ফিল্ম কখনও আলাদাভাবে চিন্তা করি না। আমি সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে আগ্রহী। তবে গল্পটি যদি আমাকে টানে, আমাকে ভাবায়। যদি আমার মনে হয় গল্প ঠিকভাবে নিজের ভেতর ধারণ করতে পারব। তাহলেই কাজটি করতে আগ্রহ প্রকাশ করব। সেটি যে ঘরোয়ানার হোক না কেন। একেক জন দর্শক আমাকে একেক ভাবে চায়। দর্শক সব সময় চায় আমি তাদের কাছের গল্প বলি। আমি সেই জায়গাগুলোই ফলো করছি। আমি নদীর স্রোতের মতো চলতে পছন্দ করি। স্রোত যেদিকে নিয়ে যায় সেদিকেই যাই। তিশার কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা নেই। একজন শিল্পী হিসেবে তিশা সব সময় স্বাধীনভাবে চলতে পছন্দ করেন। তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ফাগুন হাওয়া ছবির সাফলতায় সন্তুষ্ট তিশা। প্রসঙ্গে বলেন, ভাল একটি ছবির সঙ্গে থাকতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। ভাষাকে কেন্দ্র করে একটি ছবি হয়েছে সেখানে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিশা কখনই নিজের ছবি নিয়ে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করেন না এবং জোর করে দর্শকদের ওপর ঠেলে দেন না। খুব ভাল ছবি হয়েছে সবাইকে দেখতেই হবে এগুলো আমি পছন্দ করি না। তবে আমরা একটা ভাল গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়েও ভাল করার চেষ্টা করেছি। দর্শক যদি হলে গিয়ে ছবিটি দেখে আমি আশা করি তাদের পছন্দ হবে। যদি ভুলক্রটি হয় সেটি সামনে ভাল করার মতো সুযোগ দেবেন। চরিত্রের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। চরিত্র নিয়ে ভাবতে হয়। চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখে এমন কিছু করতে হয় যেন দর্শকরা সাবলীল অভিনয়টা দেখতে পারেন। আর এই ছবিতে ভিন্ন একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। সব কিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে দর্শকদের ভাললাগবে। ছবিতে তিশার নায়ক ইয়াশ রোহান। নায়কের অভিমত জানতে চাইলে রোহান বলেন, সিনেমাটি আমরা খুব মজা করে করেছি, কাজ শেষে বুঝতে পেরেছি আমরা একটি সিরিয়াস গল্পের কাজ শেষ করেছি। এমন গল্পে তিশা আপুর অভিজ্ঞতা এবং সহযোগিতা ভিষণভাবে সাহায্য করেছে। রোহান সর্ম্পকে তিশা বলেন, বয়স আসলে কিছু না। শিল্পী যে কোন বয়সের হতে পারে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি সব সময় চেষ্টা করি সব বয়সী শিল্পীদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে। এই ছবিতে ইয়াশ অনেক ভাল করেছে। নাটকে সাহিত্যনির্ভর চরিত্রে অভিনয় করলেও এখনও সিনেমায় সাহিত্যনির্ভর গল্পে কাজ করা হয়নি তিশার। তবে সিনেমায়ও সাহিত্যনির্ভর গল্পে কাজ করার আগ্রহ আছে। তিশা ক্ষুধার্ত ভাল গল্পের জন্য। ভাল গল্প পেলে সব ধরনের কাজ করতে আগ্রহী। সেটি নাটক, সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ যেটাই হোক না কেন। তবে গল্পে চুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ। মনমতো গল্প পেলে প্রতিনিয়ত তাকে পর্দায় ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থিতি দর্শক দেখতে পাবেন। -বললেন তিশা।
×