ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিরল প্রজাতির সাপ ও বালিহাঁস

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১৭ আগস্ট ২০১৯

 বিরল প্রজাতির সাপ ও বালিহাঁস

বন্যার পানি নেমে গেছে। প্রকৃতি তুলে ধরছে বর্ষাকালীন খন্ড চিত্র। জীববৈচিত্র্যের বিচিত্র অধ্যায় উঠে আসছে। কত প্রাণী ও পাখি বর্ষা মৌসুমে ঘর থেকে বের হয়েছিল। ফিরে যাওয়ার পালায় কখনও ধরা পড়ছে শিকারির জালে। কখনও আবাস খুঁজতে গিয়ে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। কেউ ভয়ে নিরীহ প্রাণীকে আঘাত করছে। কেউ প্রাণীকে বাঁচিয়েছে। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির একটি সাপের সন্ধান পাওয়া পাওয়া যায় বগুড়ার শেখেরকোলা গ্রামের পটোলের ক্ষেতে। দেখতে অজগরের মতো তবে অজগর নয়। বলা হয় বেবি পাইথন (শিশু অজগর)। সাপ গবেষকগণ বলছেন এই প্রজাতির সাপ আগে দেখা যায়নি। এদিকে ধনুটের সীমাবাড়ি গ্রামে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময় দুটি বালিহাঁস ও পাঁচটি ছানা ধরা পড়ে শিকারির ফাঁদে। স্থানীয় একজন পরিবেশবিদ বালিহাঁসগুলোকে উদ্ধার করেন। বেবি পাইথন সাপটি উদ্ধার করেছে বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তোলা পরিবেশবাদী সংগঠন টিম ফর এনার্জি এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চের (তীর) সদস্যরা। তীরের সভাপতি আরাফাত রহমান জানান, শেখেরকোলা গ্রামের কৃষক জমিতে কাজ করার সময় অচেনা সাপটি দেখতে পেয়ে ভীত হয়ে আঘাত করেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলামকে জানান, তিনি (কামরুল) সামজিক মাধ্যম ফেসবুকে সাপের ছবি পোস্ট করে পরিচিত জানতে চান। বিষয়টি তীর সভাপতি আরাফাতের দৃষ্টিতে এলে গ্রামে গিয়ে সাপটি সংগ্রহ করে প্রাণী সম্পদ কর্মকতার কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেন। সঠিক প্রজাতি জানতে রাজশাহীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গির আলমের কাছে ছবি পাঠিয়ে দেন। এরপর সাপ ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞের কাছে ছবি পাঠান। দেশে সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন আবু সাঈদ। তিনি জানান লম্বায় ২৩ ইঞ্চির এই সাপটি নির্বিষ। লেজ মোটা ভোঁতা আকৃতির। শান্ত স্বভাবের। এরা ডিম দেয় না, বাচ্চা প্রসব করে। সাধারণত নিশাচর। তবে খাবার সন্ধানে কখনও দিনে বের হয়। বালুকাময় নদী অঞ্চলে এদের বাস। এর কয়েকটি নাম। যেমন বালুবোয়া। ইংরেজীতে রাফ স্কেলড স্যান্ডবোয়া অথবা কমন স্যান্ডরোয়া। বিজ্ঞান নাম অঞ্জিলোফিসকনিকাস। এই প্রজাতির সাপ দেখতে অনেকটা অজগর ও রাসেল ভাইপারের মতো। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, শ্রীলঙ্কায় এদের আদি নিবাস। জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান জানিয়েছেন এই সাপটি বিরল প্রজাতির ষষ্ঠ রেকর্ড। তীর সভাপতি আরাফাত রহমান বললেন, সাপটিকে নিজের কাছে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। সেরে উঠলেই প্রকৃতির কোলেই সাপকে ফিরিয়ে দেবেন। ধুনটের গ্রামে পাওয়া বালিহাঁস ও ছানাগুলো শিকারির জালে ধরা পরে। বিষয়টি জানাজানি হলে ধুনটের পরিবেশবিদ আব্দুর রাজ্জাক উদ্ধার করেন। লোকজন জানান বর্ষা মৌসুমে এমন বালিহাঁস ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসে। স্রোতেই ঘুরে বেড়ায়। শিকারিরা ওঁৎ পেতে থাকে। গোপনে ধরে। তারপর বিক্রি করে। ঝাঁক ধরে আসা বালিহাঁসের কয়েকটি বেঁচে গেছে। সঙ্গীদের খোঁজ কেউ রাখে না। জীববৈচিত্র্যের এমন অনেক অধ্যায় স্রোতের মতো ভেসে আসে। কানটি বেঁচে যায়। কোনটি হারিয়ে যায়। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×