ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটন কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১৫ আগস্ট ২০১৯

পর্যটন কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ঈদের বাড়তি আনন্দ হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্র। ছুটি পেলেই প্রকৃতির কাছে ছুটে আসার আনন্দই আলাদা। প্রতিবারের মতো এবারও সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। টিলা পাহাড় আঁকাবাঁকা পথ অবিরাম ঝর্ণা ধারা ও সে সঙ্গে চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে পথ হেঁটে সেলফি নিতে ব্যস্ত সময় কাটান পর্যটকরা। বর্ষার এই মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে প্রকৃতির আলাদা একটি রূপ রয়েছে। এই সময়ে হাওর অঞ্চলের অথৈ পানিতে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর স্বাদই আলাদা। সে সঙ্গে রয়েছে পাহাড়ী এলাকার অন্য রূপ। কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন পর্যটনস্পট। চার উপজেলার বিশাল সীমান্ত এলাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য ঝর্ণাধারা। জৈন্তা উপজেলা সদর থেকে জাফলং যাওয়ার পথে যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পরই দৃষ্টিতে পড়বে ছোট বড় অসংখ্য ঝর্ণধারা। দেখতে দেখতে আপনি চলে যাবেন জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকায়। ঠিক এই সময় জাফলংয়ে মায়াবী ঝর্ণা নামে নতুন একটি ঝর্ণার দেখা পাওয়া যাবে। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা মায়াবী ঝর্ণা জাফলং জিরো পয়েন্টের খুব কাছেই অবস্থিত। জিরো পয়েন্ট থেকে নৌকাতে করে পিয়াইন নদী পার হয়ে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলেই এই ঝর্ণা। কয়েক শ’ ফুট উঁচু কালো পাথরের গা ভেসে আসা স্বচ্ছ পানির এ ঝর্ণা এবার সিলেটের সবকটি পর্যটনকেন্দ্রকে পেছনে ফেলেছে। পান্তুমাইয়ের ঝর্ণা, বিছনাকান্দির সাদা পাথর ও সেসঙ্গে রয়েছে রাতারগুল। সিলেটে বেড়াতে আসা লোকদের কাছে চা-বাগান একটি অন্যতম আকর্ষণ। আর এই চা বাগানে বেড়ানোর সুযোগ নিতে কারও অসুবিধা হয় না। সিলেট শহর এলাকার মধ্যেই রয়েছে অন্তত ৫টি চা বাগান। সিলেট বিমানবন্দর সড়কে লাক্কাতুরা, মালনীচড়া, আলীবাহার, সুনামগঞ্জ সড়কের পাঠানটুলা এলাকায় তারাপুর ও শাহী ঈদগাহ এলাকায় রয়েছে দলদলী চা বাগান। যা সহজেই দেখা যায়। নানা বয়সী মানুষ। তাদের কেউ জলপ্রপাতের পানিতে সাঁতার কাটছেন। হৈচৈ করছেন। কেউ নিজের ছবি তুলেছেন। কেউ আবার প্রিয়জনদের ছবি ক্যামেরাবন্দী করছেন। কেউ ঘুরে ঘুরে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এবারের ঈদ উল আজহার ছুটিতে মাধবকু- জলপ্রপাতে লক্ষণীয় ছিল পর্যটকের ঢল। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে জলপ্রপাত এলাকা। রাজশাহী মামুন-অর-রশিদ রাজশাহী থেকে জানান, ঈদের দিন বিকেল থেকেই পদ্মাপাড়সহ বিনোদন কেন্দ্রসমূহে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ভিড় জমলেও একদিন পরে বর্ষণমুখর আবহাওয়ায় ঘোরাঘুরিতে ভাটা পড়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে মানুষের চলাচলে ভাটা পড়েছে। তবে বিনোদনপিপাসু মানুষকে ঘরে রাখতে পারেনি। ঈদের তৃতীয় দিনও বুধবার বৃষ্টি উপেক্ষ করে ভিড় দেখা গেছে নদীর ধারে। পার্ক, চিড়িয়াখানার চেয়ে এখানেই মানুষের ভিড় বেশি। রাজশাহীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মা নদীর ধারে অন্য দিনগুলোতে শুধু বিকেলেই মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে সকাল, দুপুর, বিকেল-সব সময়ই ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা দল বেঁধে ভিড় জমাচ্ছেন পদ্মার পাড়ে। কেউ কেউ আসছেন পরিবারসহ। এমন ভিড় থাকবে আরও দুয়েকদিন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেলে বৃষ্টির পর রংধনু দেখা যায় নদীতে। রংধনুর সাত রং বিনোদনের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। পদ্মার পাড়ে যাওয়া বিনোদন পিপাসুদের প্রায় সবাই ছবি তুলতে শুরু করেন রংধনুর সঙ্গে। পদ্মার পাড়ে গিয়ে অনেকেই নৌকায় চড়ে ঘুরতে যান নদীতে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে নগরীর বড়কুঠি এলাকায় পদ্মার পাড়ে ঘুরতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছেন অনেকেই। একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা জুলফিকার হোসেন বলেন, তার পরিবার থাকে রাজশাহীতে। কিন্তু তিনি থাকেন ঢাকায়। তাই ঈদের ছুটিতে তিনি স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে পদ্মার পাড়ে এসেছেন। বাগেরহাট বাবুল সরদার বাগেরহাট থেকে জানান, ঈদ উল আজহার ছুটিতে বাগেরহাটের বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। ঈদের দিন বিকেল থেকে এসব স্থানে দর্শনার্থীরা ভিড় করতে শুরু করেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে এসে তারা সবাই আনন্দ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এসব স্থানে আগামী এক সপ্তাহ দর্শনার্থীদের ভিড় থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন রাইডে চড়ে সবাই আনন্দ করছেন। বিনোদন কেন্দ্রে দর্শকদের আকৃষ্ট করতে আনা হয়েছে কুমিরসহ নানা পশুপাখি। বরিশাল খোকন আহমেদ হিরা বরিশাল থেকে জানান, স্বজন-সন্তানদের নিয়ে বিনোদনকেন্দ্র মুখী হয়েছেন নগরবাসী। ঈদের দিন বরিশালের কয়েকটি বিনোদনকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। নগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই উন্মুক্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ। যার মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, ত্রিশ গোডাউন, মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন পার্ক, প্লানেট ওয়ার্ল্ড, কালিজিরা ব্রিজ, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ব্রিজ, চৌমাথা লেকসহ কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা। নগরীর বাহিরে বাবুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাসাগর, উজিরপুরের বায়তুল আমান (গুঠিয়া) জামে মসজিদ কমপ্লেক্স, দোয়ারিকা-শিকারপুর ও পয়সারহাট সেতুসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্নতাত্তিক স্থাপনা ঘিরে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় ছিল চোখে পরার মতো। এছাড়া নগরীর আমানতগঞ্জের শহীদ সুকান্ত বাবু শিশুপার্ক, নগরীর বান্দররোড সংলগ্ন গ্রীন সিটি শিশু পার্ক ও প্লানেট ওয়ার্ল্ডে শিশু-কিশোরদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। মাদারীপুর নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা শকুনী লেগেরপাড়, পৌর পার্ক, রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা কমপ্লেক্সের সামনে ও খালিয়া শান্তিকেন্দ্রে বিনোদন পেতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। সোমবার বিকেল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে এসব বিনোদন কেন্দ্রে চারপাশ শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রথমবারের মতো শহরবাসী পেয়েছেন পৌর পার্ক। এখানে এসে বিনোদনের পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ারে উঠতে পেরে খুশি সব বয়সের মানুষ। এছাড়া দীর্ঘ ১ কিলোমিটারের লেকটি ঘিরে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, শহীদ কানন, শিশু পার্ক, স্বাধীনতা অঙ্গন, এমপি থিয়েটার মঞ্চ, শান্তি ঘাটলা, পানাহারসহ লেকটির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা। কুয়াকাটা নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, ঈদের তৃতীয় দিন থেকে পর্যটকের সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে সৈকত এলাকা হাজারো পর্যটকে মুখরিত হয়ে যায়। তবে আশাতীত নয় বলে দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, পারিবারিকভাবে ঈদ উদযাপন শেষে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে পর্যটক-দর্শনার্থী কুয়াকাটায় ভিড় করতে শুরু করেছে। কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ইলিশ পার্কের স্বত্বাধিকারী রুমান ইমতিয়াজ তুষার বুধবার দুপুরে জানান, পর্যটকের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। আবহাওয়া অনেকটা খারাপ ছিল। এ ভিড় শুক্রবার পর্যন্ত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। ছাতা ও বেঞ্চি ব্যবসায়ী কেএম বাচ্চু জানান, ঈদের প্রথম তিনদিন অবস্থা অনেকটা খারাপ ছিল বুধবার সকাল থেকেই পর্যটক উপস্থিতি বাড়ছে। মির্জাপুর নিজস্ব সংবাদদাতা মির্জাপুর থেকে জানান, ঈদ বিনোদনে জমে উঠেছে মির্জাপুরের বুধিরপাড়া বিল। বিলের থৈ থৈ পানিতে নৌকা নিয়ে প্রাণ জুড়াচ্ছেন দর্শনার্থীরা। অন্যদিকে বিলের মাঝ দিয়ে নবনির্মিত রাস্তাটি গ্রামীণ এই বিনোদন কেন্দ্রটিকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। এই বিলটি অত্র এলাকার মানুষের কাছে এখন মির্জাপুরের কক্সবাজার হিসেবে পরিচিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেলে মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূর বহুরিয়া ইউনিয়নের বুধিরপাড়া বিলে গিয়ে দেখা গেছে শত শত দর্শনার্থীর ভিড়। ঈদ উল আজহার আনন্দ উপভোগ করতে পরিবার পরিজন নিয়ে এই বর্ষার বিলে বেড়াতে এসেছেন এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে। পুরো বিলটির মাঝ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার সংযোগ সড়ক। নতুন সড়কটি গ্রামীণ এই বিনোদন কেন্দ্রটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। অনেক দর্শনার্থী ডিঙি নৌকা ভাড়া করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিলের মধ্যে ভ্রমণ করছেন। ঠা-া হিমেল হাওয়ায় প্রাণ জুড়াচ্ছেন তারা।
×