ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু নিয়ে রাজনীতি না করে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিন

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৯ আগস্ট ২০১৯

ডেঙ্গু নিয়ে রাজনীতি না করে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে ঈদে ঘরমুখো মানুষের কারও শরীরে জ্বরসহ সন্দেহজনক উপসর্গ থাকলে তাদের রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ঈদে যারা ঘরে ফিরবেন, সবাই যেন সতর্ক, সচেতন থাকেন। যাদের মাথাব্যথা করবে, বমি বমি ভাব হবে, খাওয়ার ইচ্ছে থাকবে না, শরীরে জ্বর জ্বর ভাব থাকবে, তারা রক্ত পরীক্ষা করে এলাকায় বা ঘরের দিকে, গৃহযাত্রা করবেন- এটাই আপনাদের সকলের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলোই আমি আপনাদের সামনে বললাম। আমি আশা করি সবাই নিজেদের রক্ষা করব, নিজেদের রক্ষা করার জন্য যা যা করা দরকার করব। তিনি বলেন, দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ডেঙ্গুপ্রতিরোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে কাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেছেন, ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং এটা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী এবং বন্যার্তদের পাশে ২৪ ঘণ্টাই আছি। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক যুগের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এ সময় বেগম মুজিব শুধু পরিবারকেই সামলাননি, সেইসঙ্গে আওয়ামী পরিবারকেও সামলে নিয়েছেন। সেই দুঃসময়ে তিনি আওয়ামী লীগের তহবিল পর্যন্ত সরবরাহ করেছেন। বেগম মুজিবের অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতায়ই শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর অবদান কোনভাবেই অনস্বীকার্য নয়। তিনি নেপথ্যে থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং দেশের জন্য কাজ করেছেন। তিনি বাঙালী জাতির বীরমাতা। বর্তমান অবস্থায় বিএনপির ভূমিকার সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা সরকারের সমালোচনা করছেন, কিন্তু সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এবং বন্যার্তদের জন্য প্রেস ব্রিফিং ও লিফলেট বিতরণ ছাড়া কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন? আপনারা আগে দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করুন, তারপর সরকারের সমালোচনা করবেন। মানবতার স্বার্থে ডেঙ্গু নিয়ে রাজনীতি না করে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে সমন্বিতভাবে ডেঙ্গুবিরোধী লড়াইয়ে নামতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সভা শেষে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জš§দিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ডেঙ্গুপ্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ এবং বন্যার্ত অসহায়-সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি, মশারি এবং ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বান্ধারবান, সিরাজগঞ্জসহ ১০ জেলার প্রত্যেকটিতে এক হাজার শাড়ি, এক হাজার লুঙ্গি, সেমাই, এক হাজার মশারি ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়বই- মোহাম্মদ নাসিম ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গী দমন হয়েছে। দেশকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছি। ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়তেও আমরা সফল হব। আগামী এক বছর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই সিটি কর্পোরেশনকে সমন্বিতভাবে ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জাসদ কার্যালয়ের সামনে ১৪ দলের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনামূলক কর্মসূচী উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরে জোটের শীর্ষ নেতারা বৃষ্টি ও বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকায় ‘শেখ হাসিনার নির্দেশ, ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ’, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অব্যাহত রাখুন, ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলুন’, ‘ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাই এগিয়ে আসুন’-এমন স্লোগান সংবলিত লিফলেট বিতরণ এবং মশার স্প্রে করেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমাদের এখন কাজ হবে ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুমুক্ত করতে কাজ করা, ডেঙ্গু বিরোধী অভিযান বছরব্যাপী অব্যাহত রাখা, এডিস মশার বিস্তার রোধে কাজ করা। আমরা কেন কী কারণে মরণব্যাধি ডেঙ্গু নির্মূল করতে পারব না? যেকোন মূল্যে রাজধানীসহ সারাদেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দেশের মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসে তাহলে অবশ্যই আমরা ডেঙ্গুমুক্ত করতে পারব। এখন থেকে এডিস মশার উৎসগুলো ধ্বংস করব- এই হোক আজকের দিনে আমাদের অঙ্গীকার। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এবার ডেঙ্গু আমাদের চরম শিক্ষা দিয়েছে। সমগ্র জাতিকে নাড়া দিয়েছে। তাই এটাকে নিয়ে রাজনীতি না করে আসুন, সবাই মিলে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করি। ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু রোগের প্রকোপকে জাতীয় সমস্যা বিবেচনা করে আগামী এক বছর ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধী অভিযান’ অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এক সময় যারা ডেঙ্গুকে গুজব বলেছিল। এখন তারাই বলছে ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। সময়ের কাজ সময় মতো করতে পারলে জনগণকে এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। প্রবাদে আছে, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। ঈদের সময় ডেঙ্গুর বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। সভাপতির বক্তৃতায় জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, এখন মূল কাজ ডেঙ্গু আস্তানা ধ্বংস করা, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা। এক্ষেত্রে কারও কোন অজুহাত, ব্যর্থতা বা গাফিলতি দেখতে চাই না। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুুয়া, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাসদের সভাপতি শিরীন আক্তার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ অসিত বরণ রায়, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার, সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ খান প্রমুখ।
×