ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুদ্রনীতি সম্পর্কে এফবিসিসিআই

বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে দেয়ায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে

প্রকাশিত: ১২:১৫, ৪ আগস্ট ২০১৯

বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে দেয়ায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে দেয়ায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সদ্য ঘোষিত মুদ্রানীতি পর্যালোচনা করে এফবিসিসিআই বলছে, সরকারী খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করায় তা বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে উৎপাদনশীল খাত বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বেসরকারী খাতের জন্য এফবিসিসিআই ঋণের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সঙ্কুুলানের সুযোগ রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিম্নœমুখী রেখে উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে এক বছর মেয়াদী মুদ্রানীতি প্রণীত হওয়ায় মুদ্রানীতি এবং বাজেট ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় থাকবে বলে এফবিসিসিআই মনে করে। তবে উচ্চতর প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে ব্যবসা-বান্ধব মুদ্রানীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য এফবিসিসিআই আহ্বান জানাচ্ছে। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪.৮ শতাংশ। যেখানে পূর্ববর্তী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নির্ধারিত ছিল ১৬.৫ শতাংশ। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। সহজলভ্য ঋণ প্রবাহ ছাড়া কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন সম্ভব নয়। বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়ায় এ খাতে ঋণ প্রবাহ সঙ্কুুচিত হতে পারে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত করবে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বিনিয়োগের স্বার্থে এ খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করা সঙ্গত নয় বলে এফবিসিসিআই মনে করে। অন্যদিকে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারী খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে ২৪.৩ শতাংশ করা হয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০.৯ শতাংশ। সরকারী খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করায় তা বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে উৎপাদনশীল খাত বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বেসরকারী খাতের জন্য এফবিসিসিআই ঋণের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সঙ্কুুলানের সুযোগ রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। ঘোষিত মুদ্রানীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে মনিটরিং জোরদার করার জন্য এফবিসিসিআই আহ্বান জানাচ্ছে। জাতীয় উচ্চতর প্রবৃদ্ধিকে আরও গতিশীল করার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ব্যাংকে এক অঙ্কের (সিঙ্গেল ডিজিট) সুদহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে এফবিসিসিআই মনে করে। এখনও প্রায় সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদের হার এক অঙ্কের ওপরে রেখেছে। এফবিসিসিআই মনে করে, শিল্পায়নের স্বার্থে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের ঋণের সুদের হার অবিলম্বে এক অঙ্কে নামিয়ে আনবে। ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোন বা খেলাপী ঋণের বিষয়টি একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দীর্ঘদিন যাবত এ দুর্বিসহ বোঝা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে খেলাপী ঋণ কমানোর প্রচেষ্টা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও জোরদার করা প্রয়োজন। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণের ধারাবাহিকতায় দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড এবং পেপারলেস ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছ, যুগোপযোগী ও আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ও সুপারভিশনকে আরও নিবিড় ও জোরদার করার জন্য এফবিসিসিআই আহ্বান জানাচ্ছে।
×