ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাল্টা চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ৩ আগস্ট ২০১৯

 মাল্টা চাষে সফল নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার

নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত ধামইরহাটে মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার। তিনি এক একর জমিতে মাল্টা গাছ রোপণ করেন। এখন তার বাগান ফলে ফলে ভরে গেছে। তিনি অনেক মুনাফা লাভের স্বপ্ন দেখছেন। উপজেলার ধামইরহাট ইউনিয়নের অন্তর্গত আঙ্গরত তেলিপাড়া গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে মায়া কানন (বায়ো এগ্রি ফার্ম) নামে একটি নার্সারি গড়ে তোলেন নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার। কৃষিবিদ পরিবারে বেড়ে ওঠা রিনা আক্তারের ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে ফল বাগান গড়ে তোলা তার স্বপ্ন ছিল। গ্রাজুয়েশন করার পর চাকরি না হওয়ায় তিনি হতাশ না হয়ে নেমে পড়েন ফল বাগান করতে। তার নিজ হাতে গড়ে তোলেন মায়া কানন। এ ব্যাপারে রিনা আক্তার বলেন, ধামইরহাট উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দিন ও বর্তমান কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সেলিম রেজার সার্বিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় আমি ৫০ শতাংশ জমিতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১ বছর বয়সী উন্নত মানের মাল্টা চাষ শুরু করি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ১০ ফুট পর পর চারা গাছ রোপণ করা হয়। মোট ১৩৬টি চারা গাছ রোপণ করেন তিনি। পরের বছর গাছে ফুল এলেও তা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এ বছর গাছে পর্যাপ্ত ফুল আসে এবং অসংখ্য ফল ধরে। বর্তমানে প্রতি গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। আশা করা যাচ্ছে, প্রতি গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে। আগামী আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে গাছ থেকে ফল নামানো শুরু হবে। বাজারে বর্তমানে পাইকারি প্রতিকেজি মাল্টা ১শ’ থেকে ১শ’ ২০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ১শ’ টাকা কেজি হলে প্রতি গাছ থেকে প্রায় ১০ কেজি মাল্টা পাওয়া যাবে। যার দাম হবে এক হাজার টাকা। সেই হিসেবে ১৩৬টি গাছ থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তবে এবার মাল্টা বিক্রি করে লাভের আশা দেখছেন তিনি। রিনা আক্তার আরও বলেন, প্রতিটি চারা গাছ তিনি ১৫০ টাকা দর হিসেবে ২০ হাজার ৪শ’ টাকায় কিনেছেন। এ ছাড়া শ্রমিকের মজুরি ও অন্যান্য বাবদ মোট ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তিনি মাল্টা বাগান গড়ে তুলতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। তিনি আশা করছেন, এ বছর তিনি ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা মাল্টা বিক্রি করবেন। পরে বছর দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি। ধামইরহাট উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, ধামইরহাটের মাটি যে কোন ফল চাষের জন্য উপযোগী। এ অঞ্চলের মানুষ শুধু ধান চাষে ব্যস্ত থাকে। বর্তমানে ধান চাষে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এলাকার চাষীদের লাভজনক ফল বাগানে তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, রিনা আক্তারকে মাল্টা ও ড্রাগন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সরকারীভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তার বাগানে মাল্টার প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া উন্নত মানের মাল্টা চারা বারি-১ সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত তাকে পরামর্শ দেয়া হয়। এ অঞ্চলের মাটি যে কোন ফল চাষের জন্য উপযোগী। এ অঞ্চলে মাল্টা ও ড্রাফন ফলের মিষ্টতা ও গুণাগুণ অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভাল। তাছাড়া বাজারে মাল্টা এবং ড্রাগন ফলের দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এলাকার বেকার যুবকরা ওই বাগান দেখে ইতোমধ্যে অনেকে ফল বাগান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। আগামীতে এ অঞ্চল ফলের এলাকা হিসেবে পরিচিতি পাবে। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×