ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কার্যকর ওষুধ ব্যবহার না করায় ভয়াবহ রূপে ডেঙ্গু

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১ আগস্ট ২০১৯

কার্যকর ওষুধ ব্যবহার না করায় ভয়াবহ রূপে ডেঙ্গু

রাজন ভট্টাচার্য ॥ গত ১৯ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে ডেঙ্গু। চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন বাড়ছে রোগী। হাসপাতালগুলোতে কার্যত ঠাঁই নেই। দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন জেলায় যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবাই ঢাকা থেকে গেছেন। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে রাজধানীতে আসছেন না অনেকেই। কথা হলো, রাজধানীজুড়ে এডিসের ভয়াবহতা যে বেড়েছে তা এখন আর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর কিছু নেই। আক্রান্তের পরিসংখ্যানই বলছে সঙ্কট একেবারেই সর্বোচ্চ মাত্রায় ঠেকেছে। প্রশ্ন হলো যাদের হাতে মশক নিধনের দায়িত্ব তারা কি যথাযথভাবে তা পালন করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে প্রাধান্য না দিয়ে মানসম্মত ওষুধ ব্যবহার না করায় এ বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েছে। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি মিলিয়ে ৫১ কোটি টাকা মশা নিয়ন্ত্রণে খরচ হয়েছে। মশার ব্যাপকতা বেড়েছে অনেক বেশি। ঘরে ঘরে এডিস মশার শিকার মানুষ। তাহলে টাকা কোথায় গেল? এদিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক আগেই বলা হয়েছিল, মশা মারতে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে এর কার্যকারিতা নেই। গবেষণাকে গুরুত্ব না দিয়ে বিকল্প ওষুধের ব্যবস্থা না করে প্রশ্নবিদ্ধ ওষুধ নগরবাসীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় ছিটানো হয়েছে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে। তাহলে কি জেনে শুনেই মশক নিধনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ পানিতে ঢালা হয়েছে? আদালতের অসন্তুষ্টি ॥ এবারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছায় দেশের উচ্চ আদালতও এ বিষয়ে একাধিকবার হস্তক্ষেপ করেছে। এডিসসহ মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ আনতে দুই সিটি কর্পোরেশন ও সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে না পারায় মঙ্গলবার উষ্মা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। বিষয়টি নিয়ে শুনানিকালে সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ করে একজন বিচারক বলেছেন, মঙ্গলবার দেখলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (ডিএস) উপসচিবের স্ত্রী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করে? নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার স্ত্রী মারা যায়, তারা জেগে ঘুমালে আমরা তো তাদের তুলতে পারব না। সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর ‘ধাক্কাধাক্কিতে’ কাজ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এখন বাংলাদেশে মশা মারবে কে, সে প্রশ্নও করেছেন এই বিচারপতি। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে শিথিলতার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ আনতে কত দিন লাগবে, তা গত ২৫ জুলাই জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। তখন সময় নিয়ে এদিনও সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন ও রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত মঙ্গলবারের আদেশে মশা মারার যথাযথ ওষুধ আনতে কত সময় লাগবে, তা বৃহস্পতিবারের দুপুরের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশন ও রাষ্ট্রপক্ষকে সুনির্দিষ্টভাবে তা হলফনামা আকারে জানাতে বলা হয়েছে। এর আগেও দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেছিল উচ্চ আদালত। তবে মঙ্গলবার সাঈদ খোকন বলেছেন, প্রয়োজনে অধিক কার্যকর ওষুধ আমদানি করে তা বিমানে ছিটানো হবে। তিনি বলেন, ওষুধ কেনা নিয়ে যে জটিলতাগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপে তা মিটেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ওষুধ আনা হবে। এর আগ পর্যন্ত চলমান ওষুধ ছিটানো হবে। ২০১৮ সালের গবেষণা পাত্তা দেয়া হয়নি ॥ আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) মশক নিধনের ওষুধ পরীক্ষা করে বলেছে, এটি অকার্যকর। একই ওষুধ পরীক্ষা করে সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখাও (সিডিসি) বলেছে অকার্যকর। উত্তর সিটি কর্পোরেশন লিমিটের ওষুধ মাঠ পরীক্ষায় অকার্যকর বলে বাতিল করেছে। অথচ উত্তরের বাতিল করা ওষুধ দক্ষিণে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৮ সালের ২২ মে এই গবেষণার ফলাফল স্বাস্থ্য অধিদফতর ও দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সামনে উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীরা। এরপর সিডিসি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে রাজধানীর সাতটি এলাকার কিউলেক্স মশা নিয়ে গবেষণা করে। ওই গবেষণাতেও ওষুধের অকার্যকারিতা ধরা পড়ে। এ ছাড়া এ বছরের মার্চ মাসে ঢাকা শহরে মশা জরিপ শেষে তার ফলাফল প্রকাশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। তখন তারা সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে বলেছিল, আগে থেকে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে মশা আরও বাড়বে। কিন্তু দায়িত্বশীলরা এই সতর্কবার্তা মোটেও আমলে নেননি। তারা নিজেদের মতো করেই কাজ চালিয়ে গেছেন। মানসম্মত ওষুধ না দেয়া, ধারাবাহিক অবহেলা ও গাফিলতির কারণে বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ আশীষ কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সব পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে চলমান মশার ওষুধ কার্যকারিতা হারিয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কেন বিকল্প চিন্তা করেনি। তাই সিটি মেয়ররা এর দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। তাছাড়া বাতিল হওয়া কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ কেনার বিষয়টিও গ্রহণযোগ্য নয়। দুই প্রতিষ্ঠানের কারসাজি ॥ জানা গেছে, বর্তমানে দুটি প্রতিষ্ঠান দুই সিটিতে ওষুধ সরবরাহ করে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা ‘নোকন’ নামের একটি কৃষি ও কীটনাশক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওষুধ কিনছে। আর ‘লিমিট এ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে ওষুধ দিচ্ছে। লিমিটের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি লিমিটের ম্যানেজার ছিলেন। মালিকেরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর তিনিসহ কয়েকজন এখন লিমিটের মালিক। সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও মোহাম্মদ হানিফের সময় তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে মশার ওষুধ বিক্রি করেছেন। দুই সিটি ভাগ হওয়ার পরও করছেন। একসময় দেশের একটি বড় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসিআইসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাছে মশা মারার ওষুধ বিক্রি করত। এক পর্যায়ে নানা চাপে তারা আর মশার ওষুধ বিক্রি করেন না। সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ও কীট কর্মকর্তার দফতরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এখন মশা মারতে ‘লিমিট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড পিএইচপি-২০৫’ ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ওষুধ লিমিটের তৈরি। আর ওষুধটি দেয় নারায়ণগঞ্জের সরকারী প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দরপত্র ছাড়াই কাজ পাচ্ছে। কীটনাশক আইন, ১৯৮৫ ও কীটনাশক অধ্যাদেশ ১৯৭১ বলছে, নিবন্ধনহীন কোন প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি, তৈরি, বিক্রি, বিক্রির প্রস্তাব করতে পারবে না। কীটনাশক ব্যবসার নিবন্ধনকৃত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ডকইয়ার্ডের নাম পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ডকইয়ার্ডের নিবন্ধন নেই। তা হলে তারা কীভাবে ওষুধ দেয়? এই প্রশ্নের জবাবে দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও সিটি কর্পোরেশন দুটোই সরকারী প্রতিষ্ঠান। একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করার সুযোগ আছে। তারা নিবন্ধিত কি না, এটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমি রিকুইজিশন দিচ্ছি, ওষুধ পাচ্ছি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ডকইয়ার্ড সরাসরি ওই ওষুধ দেয় না। তাদের নিবন্ধিত একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেলাল এ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিট থেকে ওষুধ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ঢাকেশ্বরীর মশক নিবারণী দফতরের গুদামে দেয়। কাগজপত্রে আছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতি লিটার ৩৭৮ টাকা দামে ৭ লাখ লিটার মশা মারার ওষুধ দেয়ার কাজ পায় ডকইয়ার্ড। লিমিট নিয়ে হইচই ॥ লিমিটের ওষুধ দক্ষিণ সিটি কিনছে প্রতি লিটার ৩৭৮ টাকা দামে। সেই লিমিট গত বছর অক্টোবরে উত্তর সিটির কাছে প্রতি লিটার ২১৭ টাকা দামে ওষুধ বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছিল। উত্তর সিটির কাছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ লিটার মশা মারার ওষুধ বিক্রিতে লিমিট, নোকনসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পায় লিমিট। এ বছর জানুয়ারি মাসে লিমিট ৬৫ হাজার লিটার ওষুধ দেয়। লিমিটের ওষুধ মাঠ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। উত্তর সিটির কর্মকর্তারা লিমিটের কার্যাদেশ বাতিল করেন এবং এক বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেন। লিমিটের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ক্রয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা মাঠ পরীক্ষার সময় কারসাজি করে আমার ওষুধকে খারাপ প্রমাণ করেছিলেন। আমার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে একচ্ছত্র সুবিধা দেয়ার জন্য তাঁরা আমার প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেন।’ এরপর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাছে ওষুধ বিক্রির সুযোগ পায় নোকন। নোকন প্রতি লিটারের দাম ধরেছিল ২৫৯ টাকা। প্রথমে তারা ১ লাখ লিটার ওষুধ বিক্রি করে। এরপর তারা আরও ৩ লাখ লিটারের কাজ পায়। কারণ আর কেউ দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি। ওষুধ সরবরাহের এই কাজগুলো হয়েছে মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর এবং আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার আগে। উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নতুন ওষুধ কেনার আগ পর্যন্ত পরিমাণ বাড়িয়ে এখনকার ওষুধটি তাঁরা ব্যবহার করবেন। সিন্ডিকেট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মশার ওষুধ পুরোপুরি একটি সিন্ডিকেটের অধীনে। এখন সিন্ডিকেটকে বাদ দিয়ে উত্তর সিটি সরাসরি ওষুধ আমদানি করবে।’ তবে তিনি সিন্ডিকেটে কারা আছে, তাদের নাম বলেননি। বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছি। একটি কোম্পানিকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এখন আমরা সরাসরি ওষুধ আমদানি করতে পারব। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশে দুটি কোম্পানি ওষুধ আনবে, বাকিরা কেন পারবে না? একটি বা দুটি কোম্পানির সিন্ডিকেটের কারণে আজ পুরো জাতির কাছে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি। আমদানিকারক থাকলেও তারা ওষুধ আমদানি করতে পারছে না। দুটি কোম্পানি পুরো সিস্টেমকে ম্যানেজ করে রেখেছে। এভাবে চলতে পারে না। তিনি আরও বলেন, একটা বিজ্ঞপ্তিকে বিধি বানিয়ে এতদিন ওষুধ আমদানিতে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না গিয়ে ইনডেমনিটির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত যদি গ্রহণ করতে হয় তবে আমরা সে চেষ্টাও করব। এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেছেন, বর্তমানে মশার যে ওষুধ রয়েছে, সেটি শতভাগ অকার্যকর এমন নয়, এটারও কার্যকারিতা রয়েছে। কিছু অংশ অকার্যকর। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কোন মশক নিধন ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি নয়।’ তাহলে অকার্যকর ও কালোতালিকাভুক্ত ওষুধ কেনা হলো কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ডিএসসিসি কোন অকার্যকর ও এ সংস্থার কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওষুধ কেনেনি। আর ডিএসসিসির বর্তমান ব্যবহৃত ওষুধ কার্যকর।’ এক লাখ এনএসওয়ান ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এক লাখ এনএসওয়ান (ডেঙ্গু শনাক্তের অন্যতম পরীক্ষা) কিট কিনবে সরকার। অপরদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন স্কুলে শিশু-কিশোরদের ডেঙ্গু বিষয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই সিটিতে মশা মারতে বরাদ্দ রাখা হয় ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশার ওষুধ কেনা বাবদ বরাদ্দ ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কারের জন্য বরাদ্দ ৩০ লাখ টাকা। আর ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন পরিবহন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় ২ কোটি টাকা। তা ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ খরচ হয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সব মিলে গত অর্থবছরে দক্ষিণ সিটিতে মশা মারতে ব্যয় করা হয় ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উত্তর সিটিতে মশা মারতে ব্যয় হয় ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মশক ওষুধ কেনা বাবদ ব্যয় ১৮ কোটি টাকা। কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কার বাবদ ব্যয় ১ কোটি টাকা। তা ছাড়া এই সিটিতে ফগার, হুইল ও স্প্রে-মেশিন পরিবহন বাবদ ব্যয় হয় ২ কোটি টাকা। আর মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ব্যয় হয় ২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ঢাকা উত্তর সিটিতে মশা মারতে ব্যয় করা হয় ২৩ কোটি টাকা। দুই সিটিতে সব মিলিয়ে ৫১ কোটি টাকা খরচ হলেও এর সুফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৩৬ ওয়ার্ডের জন্য কোন বরাদ্দ নেই ॥ দুই সিটি কর্পোরেশনে ১৮টি করে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। বাজেটে এসব ওয়ার্ডে মশা নিধনের জন্য কোন বরাদ্দ রাখা হয়নি। নেই যন্ত্রপাতি ও জনবল।
×