ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসাবঞ্চিত এলাকাবাসী

সমস্যায় জর্জরিত রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ৫ জুলাই ২০১৯

সমস্যায় জর্জরিত রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ জনবল সঙ্কট ও চিকিৎসক না থাকায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার বালুয়া বাজার সংলগ্ন রামচন্দ্রপুর পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নানা সমস্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট এলাকার দরিদ্র অসহায় মানুষ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ ও যত্নের অভাবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিশাল অবকাঠামো ও আবাসিক ভবনগুলোর বেহাল অবস্থা। জানা গেছে, রামন্দ্রপুর ইউনিয়নের পার্বতীপুর মৌজায় ৬ একর জমির উপর পল্লীর অসহায় মানুষদের চিকিৎসাদানের লক্ষ্যে সাবেক পাকিস্তান আমলে একটি প্রকল্পের আওতায় ১০ বেডের এই হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। সে সময় ওই হাসপাতালে দুজন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে ২৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগদান করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্য বিভাগের নজর কমতে থাকে। ফলে ক্রমান্বয়ে হাসপাতালটি থেকে রোগীরা চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে। ঢিমেতালে চলতে থাকে এর কার্যক্রম। ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত হাসপাতালে যথারীতি বেড চালু থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে এরপর অভ্যন্তরীণ বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। বেডগুলো এখন শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার একাংশসহ সদর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ ওই হাসপাতালটিতে জরুরী চিকিৎসার বিষয়ে নির্ভরশীল ছিল। এখন তারা চিকিৎসা বঞ্চিত। ১০ বেডের এই হাসপাতালটিতে এখন কোন রোগী ভর্তি হয় না। এখানে এখন শুধু বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হলেও অপ্রয়োজনীয় অনেক স্টাফ এখনও রয়েছে বহাল তবিয়তে। সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়, এই পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে দুজন মেডিক্যাল অফিসারসহ পদ রয়েছে ১৯টি। কিন্তু ২ জন মেডিক্যাল অফিসারের পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। বর্তমানে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার এবং একজন ফার্মাসিস্ট এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির বহির্বিভাগে আগত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান ও প্রয়োজনীয় প্রেসক্রিপশনসহ ওষুধ দিচ্ছেন। তদুপরি এ দুজন কর্মকর্তাও নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপস্থিত থাকেন না। পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, তাদের অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ডবয় ও অফিস সহায়ক চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। জানা গেছে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাকি ১৭টি পদের মধ্যে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে দেয়া হয়েছে ১২ জনকে। শুধু ৫ জন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত রয়েছেন। তারা হলেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার আমিনুল ইসলাম, একজন ফার্মাসিস্ট মাহবুবর রহমান, অফিস সহায়ক আফরিন নাহার, ওয়ার্ডবয় সাজেদা খাতুন এবং সুইপার ময়না। বাকি ১২ জনের মধ্যে চারজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও দুই সহকারী নার্স ডেপুটেশনে কর্মরত রয়েছেন গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে। তারা হচ্ছেন সহিদা খাতুন, নাজমা পারভীন, সুরাইয়া বেগম ও শাহিনা সুলতানা এবং সহকারী নার্স আনোয়ারা বেগম ও আব্দুস সামাদ। এছাড়া অপর ছয়জন ল্যাব টেকনিশিয়ান ফাতেমাতুজ জহুরা, অফিস সহায়ক কোহিনুর বেগম ও একরামুল হক, ওয়ার্ডবয় এরশাদ হোসেন, কুক হুসনে আরা ও সুইপার শ্রীমতি মালাকেও গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে ডেপুটেশনে দেয়া হয়েছে। বিশাল আয়তন জুড়ে প্রতিষ্ঠিত রামচন্দ্রপুরের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে আশেপাশের পল্লী এলাকার দরিদ্র মানুষদের মধ্যে এখনও প্রতিদিন গড়ে ৬৪ থেকে ১৫০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কট থাকায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগত রোগীরা সুষ্ঠু চিকিৎসা পাচ্ছেন না এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র তাদের দেয়া হচ্ছে না। তদুপরি এই হাসপাতালটিতে এখন জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। হাসপাতালের মাঠে চরছে গরু, ছাগল ও ভেড়া। পার্শ্ববর্তী লোকজন মাঠে ধান, খড় এবং ঘুটে শুকাচ্ছে। ফলে বর্তমানে এই চিকিৎসা কেন্দ্রটির একেবারেই বেহাল অবস্থা। অপরদিকে হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারসহ অন্যান্য অবকাঠামো অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকায় সেগুলোর এখন জরাজীর্ণ দশা। আবাসিক ভবনের দরজা-জানালাসহ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রায় জনশূন্য অবস্থার কারণে রাতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে সমাজবিরোধী লোকজনের আড্ডাখানায় পরিণত হয়।
×