ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগুন নিয়ে খেলছে ইরান

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৩ জুলাই ২০১৯

আগুন নিয়ে খেলছে ইরান

ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা বাড়ানোর ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, তেহরান আগুন নিয়ে খেলছে। সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ জানান, তেহরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা বাড়িয়েছে। আর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘের পরমাণু তদারকি বিষয়ক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সংস্থাটি তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে। এ তথ্য প্রকাশের পর কোন কোন পশ্চিমা দেশ এ বিষয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। আইএইএ’র এক মুখপাত্র সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, পরমাণু সমঝোতায় ৩.৬৭ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ সর্বোচ্চ ৩০০ কেজি পর্যন্ত রাখার যে কথা বলা হয়েছে, ইরান তা অতিক্রম করেছে। এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা চুক্তি অনুসরণ করেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়িয়েছে। তিনি দাবি করেন, ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়িয়ে পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করেনি ইরান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটারে বলেন, পরমাণু সমঝোতার ৩৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, একপক্ষ এ সমঝোতা লঙ্ঘন করলে অন্যপক্ষ এতে দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন স্থগিত রাখতে পারে। জারিফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান ইউরোপীয় দেশগুলোকে এ সমঝোতা বাস্তবায়নের জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় দেয়। কিন্তু ৬০ সপ্তাহ পরও তারা সেটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় ইরান ৩৬ নম্বর ধারা মেনেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা বাড়িয়েছে। ইউরোপীয়রা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলে ইরানও তার মজুদের পরিমাণ ৩০০ কেজির নিচে নামিয়ে আনবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এক বছরেরও বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু সমঝোতা চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আর তেহরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের সীমা বাড়ানোর ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে প্রথম কঠোর পদক্ষেপ। ইরানের এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তেহরানের উত্তেজনা কমিয়ে আনার যে চেষ্টা চালাচ্ছে তা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়। এর দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে ইরানের এ ঘোষণা এলো। ইরানের প্রতি কোন বার্তা আছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের প্রতি কোন বার্তা নেই।’ তারা জানে যে তারা কী করছে। তারা জানে যে, তারা কী নিয়ে খেলছে। আমি মনে করি, ইরান আগুন নিয়ে খেলছে। সুতরাং ইরানের প্রতি কোন বার্তা নেই। এর আগে হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, ইরানের নেতৃবৃন্দ তাদের কর্মকা- থেকে সরে না এলে দেশটির ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস আরও জানায়, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ একটি আদর্শ সীমায় রাখা উচিত ইরানের। তবে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিম্বাল বলেন, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের আন্তর্জাতিক কোন সীমা নেই, যার কারণে ইরানকে নিবৃত্ত করা যায়। তিনি বলেন, ‘ওটা কোন বিষয় নয়। ওটা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। গতবছর পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করেছিল ইউরোপীয় দেশগুলো। তারা এখন চুক্তি মেনে চলার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ব্রিটেন চায় পরমাণু চুক্তিটি সক্রিয় থাকুক। কারণ ব্রিটেন চায় না যে, ইরান পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হোক। কিন্তু ইরান যদি চুক্তি ভঙ্গ করে তবে আমরাও বেরিয়ে যাব। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ইরানের এ ধরনের কর্মকা-ে পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এমনকি ইরানের জনগণের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়াও সম্ভব হবে না। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা উচিত এবং ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। -ইয়াহু নিউজ
×