ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এলসি কিনে বিপাকে সিলেটের ব্যবসায়ীরা

ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১৮ জুন ২০১৯

 ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ

সংবাদদাতা, বিয়ানীবাজার, ১৭ জুন ॥ প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে বাংলাদেশে কয়লা আমদানি। কবে নাগাদ তা শুরু হবে সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের মামলার প্রেক্ষিতে মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন খনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় সরকার। এদিকে আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় একশত কোটি টাকার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। এলসিকৃত কয়লা আমদানি করতে না পারলে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বাবত পরিশোধিত তাদের প্রায় ২০ কোটি টাকা গচ্ছা যাবে। এছাড়া এখন কয়লা মজুদ করা না গেলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটাগুলোতে কয়লা সঙ্কট দেখা দেয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করছেন তারা। জানা গেছে, চার মাস বন্ধ থাকার পর গেল ১৭ মে ভারতীয় সুপ্রীমকোর্ট মেঘালয় রাজ্যের খনিগুলো থেকে শুধুমাত্র উত্তোলিত কয়লা ৩১ মে পর্যন্ত রফতানির অনুমতি দেয়। এই আদেশের প্রেক্ষিতে ২২ মে থেকে সুনামগঞ্জের বড়ছড়া ও বাগলী সীমান্ত দিয়ে কয়লা আমদানি শুরু হয়। ৩১ মে’র পর ফের বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। কয়লা আমদানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, মেঘালয় থেকে পুনরায় কয়লা রফতানির অনুমতি চেয়ে ভারতের ব্যবসায়ীরা আবারও উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। আগামী ২ জুলাই এই আপীলের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওইদিন শুনানি শেষে আদালতের অনুমতি পাওয়া না গেলে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এর আগে প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত ডিসেম্বরে চালু হয়েছিল সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আমদানি। তবে শুরুর ২৫ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই ফের বন্ধ হয়ে যায় আমদানি। প্রায় চার মাস বন্ধ থাকার পর এবার মাত্র ১৪ দিনের জন্য কয়লা আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। কয়লা আমদানিকারক সমিতি সিলেটের সভাপতি চন্দন সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কয়লা আমদানির জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রায় দেড়শত কোটি টাকার এলসি করা ছিল। গত ১৭ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার কয়লা আমদানি হয়েছে। বাকি একশত কোটি টাকার এলসি এখন আটকে আছে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এলসি করেছেন। কিন্তু কয়লা আমদানি করতে না পেরে ঋণের সুদের বোঝা তাদের টানতে হচ্ছে। এছাড়া পুনরায় আমদানি শুরু না হলে এই ১০০ কোটি টাকার এলসির মধ্যে শুল্ক ও এআইটি বাবত প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যবসায়ীরা ফেরত পাবেন না। এতে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।’ চন্দন সাহা আরও বলেন, ‘বছরের এই সময়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কয়লা আমদানি করে স্টক করে রাখেন। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ইটভাঁটিতে মজুদকৃত এই কয়লা বিক্রি করা হয়। কিন্তু মেঘালয় থেকে আমদানি করা না গেলে এবার কয়লা মজুদ করা যাবে না। ফলে ইট পোড়ানোর মৌসুমে কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।’ প্রসঙ্গত, মেঘালয়ের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে কয়লা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনাল। এরপর সেদেশের রফতানিকারকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কয়েকদফা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উত্তোলিত কয়লা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে আদালত। এর আগে ২০১৮ সালের ১ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় কয়লা আমদানি। পরে ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানির অনুমতি দেয়া হলেও ১৫ জানুয়ারি থেকে আদালতের অপর একটি আদেশে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
×