ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রলীগের জটিলতার অচিরেই অবসান হবে

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২ জুন ২০১৯

 ছাত্রলীগের জটিলতার  অচিরেই  অবসান হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সংগঠনটিতে সৃষ্ট জটিলতার অচিরেই অবসান ঘটানোর আশা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে ‘প্রিয় নেতা’ সাধারণ সম্পাদকের ওপর শতভাগ আস্থা রাখলেও ‘প্রিয় নেত্রী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারে ঈদের আগেই বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন চান ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। দাবি আদায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে টানা সপ্তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচী পালন করে নিজেদের অনড় অবস্থানের জানান দিয়ে বলেছেন, দাবি আদায় না হলে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিনও চলবে অবস্থান কর্মসূচী। এদিকে বিতর্কিতদের হটাতে এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে গেলেও ছাত্রলীগের সাবেক কিংবা বর্তমান কোন নেতা খবর না নেয়ায় হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিক্ষুব্ধ প্রতিটি নেতাকর্মী। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিত ১৯ নেতার নাম প্রকাশ না করার মাধ্যমে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন সংগঠনটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া আন্দোলনে থাকা নেতাকর্মীদের খোঁজ না নেয়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা যারা এখন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তারাও বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে এখন কোন কৌশলের আশ্রয় না নিয়ে দ্রুত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বানও জানিয়েছেন সাবেক নেতারা। এমন অবস্থার মধ্যেই শনিবার সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর সংগঠনটিতে যে জটিলতা চলছে, তার অবসান অচিরেই ঘটানো হবে। মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গেলে ছাত্রলীগ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাদের আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগী সংগঠনটির দেখভাল করে আসছিলেন। তবে এবার তিনি অসুস্থতার কারণে চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকার মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়। ছাত্রলীগের সমস্যার সমাধান কবে নাগাদ হতে পারে? সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে নেত্রী আমাদের দলের চারজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের কমিটি গঠন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানে। তাদের সঙ্গে আমার কথাবর্তা হয়েছে, যোগাযোগ হচ্ছে। আন্দোলন-প্রতিবাদ করছে যারা, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। আমি আশা করি, অচিরেই সমাধান হবে। এদিকে ওবায়দুল কাদেরের কথায় আস্থা আছে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের প্রতিবাদী নেতাকর্মীরা। তবে একই সঙ্গে তারা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘ প্রিয় নেতা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে কথা বলেছেন তার ওপর আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন চান তারা। এবং এ কাজটি ঈদের আগেই করার দাবি ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের। আন্দোলনের মুখপাত্র ও সাবেক কর্মসূচী পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেছেন, ‘কাদের স্যার যে কথা বলেছেন তার ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমাদের প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী এখন দেশে নেই। তাই আমরা আশাকরি কাদের স্যার নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি সমাধান করবেন। তিনি ঈদের আগেই সমস্যার সমাধান করে দেবেন বলে আশা করি। যাতে আমরা বাড়ি ফিরে মা বাবার সঙ্গে মিলে মিশে ঈদ করতে পারি। আন্দোলনকারীদের অন্যতম এক নেতা সাবেক কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু বলছিলেন, আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের যে কথা বলেছেন তার ওপর আমাদের আস্থ্ াআছে। তিনি যদি দায়িত্ব নিয়ে আমাদের প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করে দেন তাহলেই আমরা ঘরে ফিরে যাব। তার প্রতি আমাদের অনুরোধ তিনি যেন নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করে দেন। কারণ তার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে ছাত্রলীগকে পুনর্গঠন না করা পর্যন্ত আমাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এ ছাত্রলীগ নেতা। ডাকসুর সদস্য তানভীর আহমেদ সৈকত তাদের অনড় অবস্থানের জানান দিয়ে বলেছেন, আমাদের সর্বোচ্চ আস্থার জায়গা প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া যে নেতারা আমাদের সঙ্গে গত কয়েকদিন কথা বলেছেন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তারা আসলে সমাধানের নামে ছাত্রলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রহসন করেছেন। এখন আমাদের স্থান দেশরত্ম শেখ হাসিনা। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রাজু ভাস্কর্যের অবস্থান চলবে। শনিবার রাজু ভাস্কর্যের অবস্থান থেকেই আন্দোলনকারীদের আরেকজন সাবেক কমিটির উপ-দফতর সম্পাদক শেখ ককিবুল ইসলাম সুমন ওবায়দুল কাদেরের ওপর নিজেদের আস্থার কথা জানিয়ে বলেন, প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তারাই বিতর্কিত কমিটিকে দিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার কাজটা করিয়েছেন। আমি মনে করি তারাই জাতির জনককে ছোট করেছেন। আমরা এখন প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসারে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন দেখতে চাই। না হয় ঈদ আমরা এখানেই করব। আন্দোলন চলবে। এক প্রশ্নে এ ছাত্রলীগ নেতা বলেন, একটি গ্রুপ প্রিয় নেত্রীকে আমাদের সম্পর্কে আন্দোলন সম্পর্কে বিকৃত তথ্য দিচ্ছে। প্রিয় নেত্রী নিশ্চয়ই সেটি দেখবেন বলে আশা আছে আমাদের। সর্বশেষ গত ২৭ মে সকালে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সদস্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচী সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নেয়ার পর ২৬ মে রাতেই বিক্ষুব্ধ অংশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করে। রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও তারা এই কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবি মানা না হলে ঈদ এবং ঈদ পেরিয়েও অবস্থান ধরে রাখার ঘোষণা রয়েছে তাদের। রাজু ভাস্কর্যে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা বলছেন, এতদিন ধরে প্রচ- গরম, বৃষ্টি, কষ্ট উপেক্ষা করে আমরা টানা অবস্থান ধরে রাখলেও এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোন নেতা বা বর্তমান ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আমাদের কোন খোঁজ-খবর নেননি। একটি বারের জন্য হলেও তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। অথচ আমরা ছাত্রলীগকে বিতর্কিতদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন করছি।
×