ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজ চলবে

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১ জুন ২০১৯

 ঈদেও পদ্মা  সেতুর  কাজ চলবে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজ চলমান থাকছে। পদ্মা সেতুর আরেকটি স্প্যান কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে সরিয়ে খুঁটির কাছাকাছি চরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অনুযায়ী সব প্রস্তুতি চলছে এখন। ইয়ার্ডে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এবং কিছু খুঁটি এখনও সম্পন্ন না হওয়ায় স্প্যান রাখার জন্য চরে প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছে। সেতুর ২৪টি স্প্যান দেশে এসেছে। এর মধ্যে ১৩টি খুঁটিতে বসানো হয়েছে। বাকি ১১টি মাওয়ার কুমারভোগের ইয়ার্ডে বসানো উপযোগী করা হয়েছে বা হচ্ছে। সেতুর মোট ৪১ স্প্যানের বাকি ১৭টি স্প্যান চীন তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে। তৈরি হওয়া স্প্যান সমুদ্র পথে মাওয়ায় আনা হচ্ছে বা প্রস্তুতি চলছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তের মাঝের চরে ২৯ ও ৩০ নম্বর খুঁটির কাছে এই ‘৫-ই’ নম্বর স্প্যানটি রাখা হবে। পাঁচ নম্বর মডিউলের এই স্প্যান ঈদের আগে ৪ জুন অথবা পরদিন ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজে করে নিয়ে যাওয়া হবে। এই স্প্যানের খুঁটি দুটি সম্পন্ন না হওয়ার কারণে স্প্যানটি এখানে রাখা হচ্ছে। স্প্যানটি বসানোর উপযোগী হওয়ায় এবং কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ার কারণে এই বিকল্প ব্যবস্থ্ াকরা হচ্ছে। তবে ২৭টি খুঁটি (পিয়ার) সম্পন্ন হওয়ার পরও অন্য খুঁটি খালি থাকা সত্ত্বেও চরে রাখা সম্পর্কে পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী বলেন, যে খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোর স্প্যানও চলে এসেছে। বসানো উপযোগী করা হচ্ছে। তাই আবার সরাতে হবে, একটি স্প্যান দু’বার সরানো সমস্যা, তাই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে চরে রাখা হচ্ছে। এই প্রকৌশলী জানান, স্প্যানটি চরে নেয়ার তারিখ এখনও লিখিতভাবে জানানো হয়নি। তবে মৌখিকভাবে এই ৪ জুুন বসানোর আলোচনা চলছে। বিকল্প হিসেবে আরেকটি তারিখ রাখা হয়েছে ঈদের পরদিন। এদিকে ভরা বর্ষা আসন্ন তাই অনেক কাজই জরুরীভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি জানান, ঈদেও পদ্মা সেতুর কাজকর্ম চলবে স্বাভাবিকভাবেই। মূল সেতু নির্মাণ কাজের সঙ্গে প্রায় ৫ হাজার দেশী-বিদেশী শ্রমিক কর্মরত আছে। এর মধ্যে ঈদের ছুটিতে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার শ্রমিক। অনেক শ্রমিক এখানেই বসবাস করছে, এখানেই ঈদ করবে। আর ঐচ্ছিক ছুটি দেয়া হচ্ছে ভাগে ভাগে। এতে প্রকল্পের কাজে কোন প্রভাব পড়ছে না। মূল সেতুর ভিতের কাজ এখন সম্পন্ন হয়ে উঠছে ২৩৯টি পাইল বসে গেছে। নদীতে ৪০ খুঁটির ২৬২ পাইলের মধ্যে আর মাত্র ৪৩টি পাইল বসানো বাকি মাত্র। এছাড়া দু’তীরের বাকি দুই খুঁটিতে ৩২টি পাইল আরও আগেই বসে গেছে। সেতুর ৪২ খুঁটির মধ্যে ২৭টি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি খুঁটির কাজও চলছে হরদম। সেতুর জাজিরা প্রান্তে বসে যাওয়া স্প্যানের ওপর এখন রোড ওয়ে স্লাব এবং রেল ওয়ে স্লাব বসানোর কাজও জোরেজোরেই চলছে। এ পর্যন্ত রোড ওয়ে স্লাব বসেছে ২৮টি। আর রেলওয়ে স্লাব বসেছে ৩২০টি। এছাড়া সংযোগ সেতুর (ভয়াডাক্ট) কাজেও গতি পেয়েছে। জাজিরা প্রান্তে ভায়াডক্টের খুঁটির ওপর সাতটি আই গাডার উঠেছে। এছাড়া জাজিরা প্রান্তের ৩৯ খুঁটির সবকটিই নির্মাণ প্রায় শেষ। মাওয়া প্রান্তে ভয়াডাক্টের ১৭ খুঁটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি আরও ২০ খুঁটির কাজও সমানতালে চলছে। দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে নির্মাণ হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। সংযোগ সেতু অর্থাৎ ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ। খুঁটির ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হচ্ছে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর উপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২। প্রতিটি পিলারের রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল। তবে কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারের মধ্যে একটি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। তাই নদীতে মোট পাইল বসছে ২৬২টি। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২ খুঁটির ওপর মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। এর মধ্যে ১৩টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। এদিকে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেতুর অগ্রগতির খোঁজ-খবর রাখছেন। সেতুর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনাও করছেন। একই সঙ্গে প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও শ্রমিকদেরও খোঁজ নিচ্ছেন। সকলের সঙ্গে মানবিক আচরণের পরামর্শ দিচ্ছেন।
×